আর্সেনিকমুক্ত পানি পাওয়ার সহজতর উপায় আবিষ্কার

বাংলাদেশের পানিতে আর্সেনিকের আধিক্য মানুষের জন্য একটি হুমকি। নানা ভাবে আর্সেনিকমুক্ত পানি সরবরাহের চেষ্টা করছে সরকার । এবার বাংলাদেশি-জার্মান বিজ্ঞানী ড. এনামুল হক আবিষ্কার করেছেন আর্সেনিকমুক্ত পানি পাওয়ার সহজতর পদ্ধতি ।

0,,15979636_403,00জার্মানির মিউনিখ বিশ্ববিদ্যালয়ে উচ্চতর গবেষক এবং অধ্যাপক ড. এনামুল হক বন শহরে অনুষ্ঠিত জলবায়ু ও জ্বালানি বিষয়ক আন্তর্জাতিক সম্মেলনে তুলে ধরেন আর্সেনিকমুক্ত পানি পাওয়ার সহজতর উপায়ের পদ্ধতি৷ তিনি বলেন, ‘‘যদিও বাংলাদেশে শিল্পায়নের হার কম৷ তবুও বাংলাদেশে বিভিন্ন কারণে ভূগর্ভস্থ পানি এবং পানীয় পানি দূষিত হয়ে যাচ্ছে৷ পানি দূষণের অন্যতম প্রধান কারণ আর্সেনিকের আধিক্য৷ তাই কীভাবে আর্সেনিক দূষণ রোধ করা যায় সেব্যাপারে আমি একটি সাফল্যে পেয়েছি৷ যদিও জার্মানিতে এটি আমার গবেষণার বিষয় ছিল না৷ তবুও দেশের প্রতি ভালোবাসা থেকে আমি এ বিষয়টি নিয়ে পাশাপাশি কাজ করে আবিষ্কার করতে সক্ষম হয়েছি যে, কীভাবে কম খরচে কম পরিমাণ রাসায়নিক দ্রব্য ব্যবহার করে অল্প সময়ে আর্সেনিক দূষণ রোধ করা যেতে পারে৷”

এই উন্নততর প্রক্রিয়াটি ব্যাখ্যা করে ড. এনামুল হক বলেন, ‘‘এই প্রক্রিয়ায় ক্ষতিকর নয় এমন একটি অজৈব উপাদান ব্যবহার করা হয়৷ এই উপাদানটি আমরা যখনই আর্সেনিকযুক্ত পানিতে দেব, সঙ্গে সঙ্গে সেটা বিক্রিয়া করে বাইন্ডিং করে৷ এরপর ঐ পানি ফিল্টার করলে দেখা যায়, পাঁচ মিনিটের মধ্যে ৬৪ শতাংশ আর্সেনিক কমে যায়৷”

এই পদ্ধতির লাভজনক দিক তুলে ধরতে গিয়ে তিনি জানান, ‘‘এখন পর্যন্ত বাংলাদেশে ব্যবহৃত প্রক্রিয়াগুলোতে বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় ত্রুটি রয়ে গেছে৷ আর্সেনিক দূষণ থেকে পানি শোধন করার জন্য যেসব উপাদান ব্যবহার করা হয়, সেগুলো আবার নতুনভাবে বর্জ্য হিসেবে আসে৷ এই বর্জ্যের পরিমাণ অনেক বেশি৷ ফলে এই বর্জ্য বাইরে ফেলে দিলে সেটা পরে আবার পানির সাথে মিশে গিয়ে পানি দূষণ করতে পারে৷ সেজন্য আমাদের জন্য লাভজনক উপায় হলো খুব স্বল্প পরিমাণে উপাদান ব্যবহার করা এবং এতে স্বল্প পরিমাণ বর্জ্য তৈরি হবে৷ খরচ কম হবে৷ আবার কেন্দ্রীভূত পানি শোধন ব্যবস্থার মাধ্যমে পরে সেই বর্জ্য থেকে খাঁটি আর্সেনিক পৃথক করে ভিন্ন কাজে লাগানো যাবে৷”

তবে আর্সেনিকমুক্ত পানি পাওয়ার এই পরিবেশ বান্ধব ও সহজতর উপায় এখন পর্যন্ত পরীক্ষাগার পর্যায়ে রয়েছে৷ পরীক্ষামূলকভাবে এই পদ্ধতি নির্দিষ্ট এলাকায় বাস্তবায়ন করা হবে৷ এরপর বাংলাদেশ সরকারের সাথে আলোচনা সাপেক্ষে নির্দিষ্ট ধাপ অতিক্রম করে সাধারণ মানুষের দোরগোড়ায় পৌঁছতে কিছু সময় লাগবে বলে উল্লেখ করেন ড. এনামুল হক৷ তাঁর মতে, এই প্রক্রিয়ায় পানি আর্সেনিকমুক্ত করতে লিটার প্রতি মাত্র পঞ্চাশ পয়সা থেকে এক টাকা খরচ হতে পারে৷ এমনকি বাংলাদেশের কিছু অঞ্চলে আর্সেনিকের তীব্রতার কারণে যেসব নলকূপের পানি ব্যবহার করা নিষিদ্ধ করা হয়েছে, এই পদ্ধতির প্রয়োগে সেগুলোও পুনরায় চালু করা সম্ভব হতে পারে বলে মনে করেন জার্মানির এই জ্যেষ্ঠ বিজ্ঞানী৷

সাক্ষাৎকার: হোসাইন আব্দুল হাই

সম্পাদনা: দেবারতি গুহ

সূত্রঃ  www.dw.de

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Discover more from EnvironmentMove.earth

Subscribe now to keep reading and get access to the full archive.

Continue reading

Verified by ExactMetrics