আলঝেইমারের ঝুঁকি বাড়াচ্ছে ডিডিটি
বিজ্ঞানিরা প্রায় ৪০ বছর আগেই পাখি ও পরিবেশের উপর সিন্থেটিক কীটনাশক ডিডিটি এর মারাত্নক ক্ষতিকর প্রভাব আবিষ্কার করেন। যুক্তরাষ্ট্রে ১৯৭২ সালে নিষিদ্ধ হওয়া এই কীটনাশক বিভিন্ন উন্নয়নশীল দেশে এখনো ব্যবহৃত হচ্ছে। সম্প্রতি রাটজার্স বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকরা একটি প্রতিবেদনে বলেন, ডিডিটি এর প্রভাবে বিশেষ করে ষাটোর্ধ বৃদ্ধদের আলজেইমার রোগের ঝুঁকি ও ব্যাপকতা বেড়ে যায়। নিউরোলজি নামক সাময়িকীতে প্রকাশিত প্রতিবেদনে রাটজার্স বিজ্ঞানীরা উল্লেখ করেন যে তারা সুস্থ ব্যক্তির তুলনায় বৃদ্ধ আলজেইমার রোগীদের রক্তে অধিকতর ডিডিটি বিশ্লেষিত পদার্থ ডিডিই এর সন্ধান পান।
যুক্তরাষ্ট্রে শস্য ও গবাদিপশুকে কীটপতঙ্গ ও পোকাবাহিত রোগ যেমন ম্যালেরিয়া থেকে রক্ষা করতে ডিডিটি ব্যবহৃত হতো যা, কীটনাশক হিসেবে প্রথম ব্যবহৃত হয় ২য় বিশ্বযুদ্ধের সময়। আলজেইমার রোগের উপর নির্দিষ্ট কোন রাসায়নিক পদার্থের প্রভাব নিয়ে সর্বপ্রথম গবেষণাকারী রাটজার্স বিজ্ঞানীরা বিশ্বাস করেন যে আলজেইমারের মতো স্নায়ুঘটিত রোগের উপর ডিডিটি এবং ডিডিই এর প্রভাব খুবই মারাত্নক।
যুক্তরাষ্ট্রের রবার্ট উড জনসন মেডিকেল স্কুলের সহযোগী অধ্যাপক জ্যাসন আর. রিচার্ডসন বলেন, “এই ফলাফলসমূহ নির্দেশ করে যে, পরিবেশের উপাদানসমূহ এবং তাদের জিনগত সংবেদনশীলতার উপর আমাদের আরো বেশি নজর দিতে হবে”। তিনি আরো বলেন, “আমাদের তথ্যগুলো আলজেইমারের ঝুঁকিসমূহ চিহ্নিত করতে আরো বেশি সহায়ক হবে এবং যার ফলে আমরা দ্রুত সমস্যা চিহ্নিত করে উন্নততর ব্যবস্থা গ্রহণে সক্ষম হবো”।
যদিও গত তিন দশকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ডিডিটি ও ডিডিই এর ব্যবহার উল্লেখযোগ্য পরিমানে হ্রাস পেয়েছে তবুও জাতীয় সাস্থ্য ও পুষ্টি জরিপের রোগ নিয়ন্ত্রণ ও প্রতিরোধ কেন্দ্র হতে সংগৃহিত রক্তের ৮০-৮৫% নমুনায় এই বিষাক্ত কীটনাশকের উপস্থিতি পাওয়া গেছে। এর ব্যাখ্যায় বিজ্ঞানীরা বলেন, এ সকল রাসায়নিক পদার্থ পরিবেশে বিয়োজিত হতে কয়েক দশক সময় নেয়। অধিকন্তু দুষিত জলাশয়ের মাছ এবং যেসকল দেশে এখনও ডিডিটি ব্যবহৃত হচ্ছে সে সকল দেশ থেকে আমদানীকৃত ফল, শাকসবজী ও শস্যের মাধ্যমেও মানুষের শরীরে প্রবেশ করতে পারে। রাটজার্স গবেষণায় অংশগ্রহনকারী ৮৬ জন রোগীর মধ্যে ৭৪ জনই ছিল বৃদ্ধ যাদের গড় বয়স ৭৪ এর বেশি। ৭৯ জনের একটি আলজেইমারমুক্ত গ্রুপ হতে সংগৃহিত রক্তের তুলনায় রোগীদের রক্তে ডিডিটি এর মাত্রা ছিল চারগুণ বেশি। এভাবেই সারা বিশ্ব এখনও ডিডিটি এর অভিশাপ হতে পুরোপুরি মুক্ত হতে পারেনি এবং তা আমাদের আরো হুমকীর সম্মুখীন করছে।
তানভীর হোসেন