উত্তুরে ল্যাঞ্জাহাঁস
উত্তুরে ল্যাঞ্জাহাঁস বা ল্যাঞ্জাহাঁস (Anas acuta) (ইংরেজি Northern Pintail) অ্যানাটিডি পরিবারের অ্যানাস গণের অন্তর্ভুক্ত এক ধরনের হাঁস । ল্যাটিন শব্দ Anas মানে হাঁস এবং acuta মানে তীক্ষ্ণ । এরা বাংলাদেশের পরিযায়ী পাখি। শীতকালে এরা বাংলাদেশে আসে । এরা খুবই সুলভ এবং জলাভূমিতে সচারচর দেখতা পাওয়া যায়। বাংলাদেশের ঢাকা সিলেট বরিশাল চট্টগ্রাম খুলনা রাজশাহী ও রংপুরে এদের দেখা যায়। আই সি ইউ এন এদের least concern বা আশংকাহীন বলে ঘোষণা করেছে । বাংলাদেশেও এরা least concern বা আশংকাহীন প্রজাতি হিসাবে গণ্য করা হয়।
উত্তুরে ল্যাঞ্জাহাঁস সাধারনত বড় আকারের হয়। এদের পাখার দৈর্ঘ্য ৯.৩ থেকে ১১.১ ইঞ্চি হয়ে থাকে এবং উড়ার সময় পাখার বিস্তৃতি হয় ৩১ থেকে ৩৭ ইঞ্চি। পুরুষ হাঁসটি আকারে ২৩ থেকে ৩০ ইঞ্চি হতে পারে । এর ওজন ৪৫০ থেকে ১৩৬০ গ্রাম মতো হয়ে থাকে। এদের মাথার রঙ চকলেট খয়েরী । বুকের রঙ সাদা যা গলার পাশ পর্যন্ত বিস্তৃত হয় । পাখিটির উপরের অংশ ও পাশের অংশ ধূসর বর্ণের হয় । এদের দেহের পিছন থেকে কাঁধ পর্যন্ত কালো দাগ আছে যা ধূসর পালক দ্বারা ঢাকা থাকে। এর ঠোঁট নীলাভ ও পায়ের রঙ ধূসর নীল । পূর্ণবয়স্ক স্ত্রী আকারে পুরুষ হাঁস থেকে ছোট হয়। এরা আকারে ২০ থেকে ২৫ ইঞ্চি হয়ে থাকে। এরা ওজনে ৪৫৪ থেকে ১১৩৫ গ্রাম পর্যন্ত হতে পারে । এরা হাল্কা খয়েরী রঙের হয় এবং মাথার রঙ ধূসর খয়েরী। এদের লেজ পুরুষ পাখিটি থেকে ছোট হয়। তবে আকার লম্বা গলা অলম্বা খয়েরী ঠোঁট দিয়ে এদের সহজেই চিহ্নিত করা যায়। অপ্রাপ্তবয়স্কদের দেখতে স্ত্রীর মতো লাগে তবে এদের পাখার রঙ হয় ধূসর খয়েরী ও লেজ ছোট হয়ে থাকে।
উত্তুরে ল্যাঞ্জাহাঁসরা নিশাচর স্বভাবের হয় । দিনেরবেলা এরা বিশ্রাম করে। এরা প্রধানত পানির নিচে থাকা উদ্ভিদকে খাদ্য হিসাবে গ্রহন করে। এছাড়া বীজ, জলজ উদ্ভিদের কাণ্ড ,মূল ,শস্য ,অমেরুদণ্ডী প্রাণী যেমন পোকামাকড় শামুক ইত্যাদিও খাবার হিসাবে গ্রহন করে।
উত্তুরে ল্যাঞ্জাহাঁস এক বছর বয়সের মধ্যেই প্রজননে সক্ষম হয়। এদের প্রজননের সময়কাল এপ্রিল থেকে জুন পর্যন্ত । প্রজননে আগ্রহী পুরুষ হাঁসটি সাঁতার কেটে স্ত্রী হাঁসের কাছে যায় । এসময় পুরুষটির মাথা নিচু ও লেজটি উঁচু করে অনবরত শিস বাজাতে থাকে । এরা জমিতে বাসা বানায় যা সাধারনত লুকানো থাকে। স্ত্রী পাখিটি একদিন পর পর ৭ থেকে ৯ টি ডিম পাড়ে। ডিমগুলো সাদা রঙের হয়। ডিমগুলোতে তা দেয়ার ২২ থেকে ২৪ দিনের মধ্যে বাচ্চা বের হয়।