কমলগঞ্জে হাওর-বিল অস্তিত্ব হারাচ্ছে
কমলগঞ্জ উপজেলার ‘খাদ্য ভাণ্ডার’ হিসাবে খ্যাত হাওর-বিলের অস্তিত্ব হারাচ্ছে। হাওর-বিলগুলো ভরাট করে অপরিকল্পিতভাবে বাড়িঘর, রাস্তা নির্মাণ এবং গাছ-বাগান গড়ে ওঠার ফলে কৃষিজমি বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। এতে ধ্বংসের সম্মুখীন হচ্ছে জীব-বৈচিত্র্যসহ জলজ প্রাকৃতিক পরিবেশ।
সরেজমিনে গত বুধবার গেলে জানা যায়, উপজেলার নিম্নাঞ্চল পতন ঊষারের কেওলার হাওর এবং হাওরের মাঝ দিয়ে বয়ে যাওয়া লাঘাটা নদী পানির আধার হিসাবে পরিচিত। শুষ্ক মৌসুমে হাওরের অধিকাংশ কৃষিজমিতে সেচ সুবিধার মাধ্যমে বোরো আবাদ করা হয়। বর্ষা মৌসুমে হাওরের পানিকে কেন্দ্র করে প্রজননসহ মাছের অবাধ বিচরণ ভূমি তৈরি হয়। কিন্তু অপরিকল্পিতভাবে হাওরের কৃষিজমির উপর বাড়িঘর, গাছবাগান ও রাস্তা নির্মাণ শুরু হয়েছে। পতন ঊষার ইউপি চেয়ারম্যান সেলিম আহমদ চৌধুরী, কৃষক নেতা শহীদ সাগ্নিক, কৃষক রেজাউল করিম, সমাজ সেবক আব্দুল হান্নান চিনু, তোয়াবুর রহমান এবং নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কৃষি বিভাগের একজন মাঠ কর্মকর্তা বলেন, হাওর-বিলে অফুরন্ত সম্ভাবনা এখনো অব্যবহূত রয়েছে বলে ওখানে কাজ করার সুযোগ অনেক বেশি। শুধু ধান চাষ নির্ভরতা কমিয়ে এনে কৃষি বহুমুখীকরণ, সমম্বিত কৃষি, ফসলের নিবিড়তা বাড়ালে মানুষের আয় বাড়বে ও পুষ্টির যোগান দিবে। ফার্মিং সিস্টেম, কৃষি বিন্যাস, শস্য ব্যবস্থাপনা প্রবর্তন করলে সারা বছর স্বাচ্ছন্দ্যময় চাষাবাদ সম্ভব। তারা আরো বলেন, অপরিকল্পিত ও অবৈজ্ঞানিক উপায়ে হাওরের কৃষিজমি ভরাট করে বাড়িঘর, রাস্তা-বাঁঁধ নির্মাণ ও গাছ-গাছালী রোপণ করে অদূর ভবিষ্যতে কেওলার হাওরসহ জলজ জীব-বৈচিত্র্যের মারাত্মক ক্ষতি বয়ে আনবে। স্থানীয় কৃষকরা বলেন, কেওলার হাওর এ অঞ্চলের পানির আধার হিসাবে পরিচিত। অতীতে অল্প বৃষ্টি হলেই সেখানে পানি জমা হতো। কিন্তু অতীতের তুলনায় বর্তমানে বর্ষা মৌসুমে বন্যার পলিবালি জমে এমনিতেই হাওর ভরাট হয়ে গেছে। এছাড়াও বন্দোবস্তকৃত কৃষিজমি ভরাট করে বাড়িঘর, রাস্তা নির্মাণ ও গাছ-গাছালী রোপণের যে হিড়িক শুরু হয়েছে তাতে এক সময়ে এই হাওরের অস্তিত্ব থাকবে না। এছাড়াও মকা বিলসহ উপজেলার বিভিন্ন হাওর বিল এভাবে ভরাট হতে চলেছে।
কমলগঞ্জ উপজেলার ভারপ্রাপ্ত মত্স্য কর্মকর্তা মো. আসাদ উল্লাহ বলেন, বর্ষা মৌসুমে কেওলার হাওর মাছের জন্য গুরুত্ব বহন করে। হাওর-বিলে মাছের ডিম পাড়ার জন্য মাইগ্রেট রোড থাকতে হয়। অপরিকল্পিত কার্যক্রমের ফলে হাওর সংকুচিত হয়ে আসবে এবং মাছের গতিপ্রবাহে বাধা সৃষ্টি হবে। এতে মাছের উত্পাদন আরো হরাস পাবে এবং জীব-বৈচিত্র্য সংরক্ষণে ভবিষ্যতে বড় ধরনের ক্ষতি হবে। হাওর ভরাট বিষয়ে কমলগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা প্রকাশ কান্তি চৌধুরী বলেন, হাওর ও জলাশয়ে—সরকারি জমি না তাদের নিজস্ব জমিতে বাড়িঘর, গাছ-বাগান ও রাস্তা নির্মাণ হচ্ছে সে বিষয়ে তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
http://ittefaq.com.bd