
‘কাঠ-গোলাপের কথা’
গোলাপের মত নয়, আবার কাঠের সাথেও সেধরণের সম্পর্ক নেই। কিন্তু কোনো এক অজ্ঞাত কারণে ফুলটির নাম ‘কাঠ-গোলাপ’। বিশাল বিশাল আকারের পাতাদের মাঝখানে জবুথবু হয়ে একগুচ্ছ ফুল ঘাপটি মেরে বসে থাকে। আর সুঘ্রাণ ছড়িয়ে মাদকতা তৈরী করে রাখে তার চারপাশ জুড়ে। পাঁচ-পাপড়ির মাঝখান থেকে হলুদের একটুখানি আভা উঁকি-ঝুঁকি দেয়ার কারণেই কিনা সাদার রূপ যেন আরো বহুগুন বেড়ে যায়। কাঠ-গোলাপ ফুলের আরো কিছু কথা জেনে ফেলি এবার।
কাঠ-গোলাপ ফুলগাছটি Apocynaceae পরিবারের Plumeria বর্গের একটি সদস্য। এই বর্গের মধ্যে প্রায় ৭ থেকে ৮ প্রজাতির গাছগুলোই গুল্ম-জাতীয় কিংবা ছোট গাছের আকারের হয়। এই ধরণের প্রজাতিগুলোর দেখা মিলবে আমেরিকা, মেক্সিকো, ওয়েস্ট ইন্ডিজ , দক্ষিন আমেরিকা ছাড়াও ব্রাজিলের নানান এলাকায়। কিন্তু গ্রীষ্মমন্ডলীয় এলাকাতেই এদের বেশি দেখা যায়। এই পৃথিবীতে Plumeria বর্গের প্রায় ৩০০ নামধারী আলাদা আলাদা ফুলের গাছ রয়েছে। গ্রীষ্মমণ্ডলীয় আবহাওয়ার সাথে মিল থাকায় আমাদের দেশেও কাঠ গোলাপের দেখা মেলে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কার্জন হল এলাকায় রয়েছে কাঠ গোলাপের দুটি গাছ। এ সময়টায় গাছের সবুজ পাতার ফাঁকে ফাঁকে গুচ্ছাকারে এদের উপস্থিতি আপনাকে মোহিত করতেই পারে।
কাঠ গোলাপের আকৃতি ও বিকাশ ঠিকঠাক রাখার জন্য এর সঠিক পরিচর্চার প্রয়োজন। সূর্যের আলো এবং পানি যথাযথ পরিমানেই দরকার। সেই সাথে,মাটি যেন সম্পূর্ন না শুকিয়ে যায় সেদিকেও খেয়াল রাখা প্রয়োজন। অন্যদিকে সূর্যের আলো পরিমানমত না পেলে পানির পরিমান যেন আবার বেশি না হয়ে যায়, সেদিকেও খেয়াল রাখতে হবে। অর্থাৎ, ওদের জীবনের মূল-তত্ত্ব হলো- বেশি আলো বেশি পানি, কম আলো কম পানি। সূর্যের আলো কম থাকলেও নতুন উৎপাদনকারীরা না বুঝে অনেকসময় বেশি পানি দিয়ে দেয়। এর ফলে একটা পচনশীল মূলের সৃষ্টি হয়। অন্যদিকে, একট গাছ যদি পানি না পেয়ে শুধু কেবল প্রখর সূর্যালোক পায়, তাহলেও গাছটি মারা যাবে।
কাঠ-গোলাপের ঘ্রাণ কিন্তু রাতের বেলায় চমৎকারভাবে ছড়ায়।
শিবম পুরকায়স্থ
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
মাটি, পানি ও পরিবেশ বিভাগ