কালামাথা নিশিবক

সৌরভ মাহমুদ

নাগরিক কোলাহল ও কংক্রিটের ঢাকা নগরে সবুজের উপস্থিতি নিতান্তই কম। রমনা পার্ক, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকা, সামরিক এলাকা, বোটানিক্যাল গার্ডেন ও বেইলি রোড এলাকায় কিছুটা সবুজ এখনো আছে। সরকারি ও অনেক রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবনের কারণে হয়তো বেইলি রোডে সবুজ এখনো বিবর্ণ হয়নি। সবুজের মধ্যে আরেক সৌন্দর্য নিয়ে কিছু পাখপাখালিও আছে এখানে।
হেয়ার রোডের মাঝ বরাবর অফিসার্স ক্লাবের দিকে যে সড়কটি, সেটিই বেইলি রোড। সড়কটি সবুজের ছায়াঘেরা। চারদিকে বড়-ছোট মিলিয়ে নানান প্রজাতির বৃক্ষের বাস এখানে। এর মধ্যে আছে বিশাল রেইনট্রি, পাদাউক, বট, ইউক্যালিপটাস প্রভৃতি। নাগরিক কোলাহল অনেকটাই কম এখানে। অনেক প্রজাতির পাখি সব সময় নীরব এলাকা ও নিরাপদ পরিবেশ ভালোবাসে।

বাসায় বসে আছে কালামাথা নিশিবকের ছানারা। গত ১৫ আগস্ট সকালে বেইলি রোড থেকে তোলা ষ ছবি: লেখক
বাসায় বসে আছে কালামাথা নিশিবকের ছানারা। গত ১৫ আগস্ট সকালে বেইলি রোড থেকে তোলা ষ ছবি: লেখক

এ রকম একটি নিরাপদ জায়গায় অনেক দিন ধরে বসবাস করে আসছে কালামাথা নিশিবক নামের এক প্রজাতির দেশীয় পাখি। সবাই ওদের দেখতে পায় না। কারণ, ওপরে সহজে কেউ চোখ তোলে না। তবে পাখি পর্যবেক্ষকদের কথা আলাদা। প্রায় ছয় বছর ধরে এসব নিশিবককে আমি বেইলি রোডের রেইনট্রি গাছে দিনের বেলায় বসে থাকতে দেখেছি। একসঙ্গে শত শত পাখি। নিশিবক দিনের বেলায় গাছে
বসে সময় কাটায় আর সন্ধ্যার আভা এলেই বেরিয়ে পড়ে খাবার খেতে। সারা রাত ধরে চলে এই কাজ, ভোরের আলো ফুটলেই ওরা আবার নির্দিষ্ট গন্তব্যে ফিরে আসে। তবে এ বছরই বেইলি রোডের ২৫ নম্বর বাড়িটির পাঁচটি ইউক্যালিপটাস গাছে দেখা গেল প্রায় ৬০টির মতো বাসা। গত ১৫ আগস্ট সকালে গিয়ে দেখা গেল, প্রতিটি বাসায় ছানা রয়েছে এবং ইতিমধ্যে অনেক ছানাই উড়তে শিখেছে। এ ডাল থেকে
ও ডাল হেঁটে বেড়াচ্ছে। বাসাপ্রতি ছানার সংখ্যা তিন থেকে চার।
নিশিবক লাল চোখ ও কালচে পিঠের নিশাচর মাছ শিকারি পাখি। হাওর, বিল, জলা, নদী ও প্যারাবনে এ পাখি বিচরণ করে। রাতে অগভীর পানিতে দাঁড়িয়ে কিংবা ধীরে হেঁটে পানির ওপর থেকে মাছ শিকার করে খায়। এপ্রিল-মে মাসে এরা দল বেঁধে বাস করে গাছের ডালে। ডালপালা, মূল ও ঘাস দিয়ে মাচার মতো বাসা বানিয়ে ডিম পাড়ে। ডিম নীলচে সবুজ, সংখ্যায় তিন-চারটি। ২১ দিনে ডিম ফোটে। নিজের ও অন্যের ছানাকে এ পাখি আলাদা ভাবে না এবং প্রায় প্রতিবেশীর ছানাকেও খাবার দেয়।

লেখাটি দৈনিক প্রথম আলোতে ১১/০৯/২০১৩ প্রকাশিত

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Discover more from EnvironmentMove.earth

Subscribe now to keep reading and get access to the full archive.

Continue reading

Verified by ExactMetrics