কালো-পিঠ চেরালেজি
শরীফ খান
ছোট একটা পাহাড়ি ঝিরির ভেতরের বড় একখণ্ড পাথরের ওপর দাঁড়িয়ে আছি। চারপাশটা নিঝুম । প্রাকৃতিক পরিবেশ আশ্চর্য-সুন্দর পেলবতায় মোড়ানো। হঠাৎ আমাকে চমকে দিয়ে—মনে হলো একটা সাদা কালো রঙের ঝরা বাঁশপাতা বাতাসে সাঁতার কাটতে কাটতে সামনে একখণ্ড পাথরের কিনারে বসল। আমাকে মুগ্ধতায় আবিষ্ট করে দিয়ে পাখিটা কী মোহনীয় ভঙ্গিতে যে লেজটা দোলাতে দোলাতে হাঁটতে শুরু করল পিলপিল পায়ে! আমাকে ভয় পেয়েছে বলে মনে হলো না। ডাক দিলাম অনতিদূরে থাকা মনিরুল খান ও শিহাবউদ্দিনকে। তাঁরা এলেন, দেখলেন চমৎকার পাখিটিকে, কিন্তু ক্লিক করার আগে ঘূর্ণিবাতাসে ঝরাপাতা উড়ে যাওয়ার মতো পাখিটা উড়ে চলে গেল চোখের আড়ালে। ঘটনাটি বেশ আগের। সেবার আমি, মনিরুল ও শিহাব গিয়েছিলাম খাগড়াছড়ির কৃষি গবেষণা খামারে। না, ওই দিন ছবি তুলতে না পারলেও পরদিন ছবি তুলেছিলেন মনিরুল। সেই ছবিটাই ছাপা হলো এই লেখার সঙ্গে।সুন্দর এই পাখির নাম ‘কালো-পিঠ চেরালেজি’। ইংরেজি নাম Black-Backed Forktail। বৈজ্ঞানিক নাম Enicurus immaculatus । মাপ ২৫ সেন্টিমিটার। মাথার তালু-ঘাড়-চিবুক-পিঠ কালো, কালো পিঠটার মাঝখান বরাবর ডানার ওপরে আড়াআড়িভাবে একটা চওড়া সাদা টান। টানটা নেমে গেছে লেজের গোড়া পর্যন্ত। গলাটাও কালো, বুক-পেট তুলোট সাদা। কপালের সাদা রংটা চোখের উপরিভাগ পর্যন্ত বিস্তৃত। লেজের আগা সাদা। লম্বাটে কালো লেজটার ওপরে আড়াআড়িভাবে তিনটি সাদা রেখা টানা। সাদা-কালোর আশ্চর্য সুন্দর বিন্যাস। লেজ যখন মেলে ধরে, তখন দুখানা পালকসহ ওই চেরা ভাবটি দেখতে সুন্দর লাগে খুব। লেজের ওপরে সাদা তিনটি টান তখন আলাদাভাবে দেখা যায়। ঠোঁট কালো, পা গোলাপি।
অতি চঞ্চল এই পাখি দেখা যায় টিলা-পাহাড়ি বনের জলাশয় ঝিরি-ছড়া-ঝরনার আশপাশে। এদের ওড়ায়ও খঞ্জনদের মতো চমৎকার ছন্দ আছে। দুলে দুলে বেশ নিচু দিয়ে ওড়ে। উড়লেই দু-পাঁচবার ডাকবে, নেমেও তাই করবে। কণ্ঠটা মোলায়েম, ‘টিটিস, খিটিস’ ধরনের। খাদ্য মূলত ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র জলজ পোকাপতঙ্গ। পাহাড়ের গায়ের পাথরের খাঁজে বা খোঁদলে অথবা তলায় এরা বাসা বানায় শেওলা ও নরম শুকনো ঘাস দিয়ে। ডিম পাড়ে দু-তিনটি। এরা আমাদের আবাসিক পাখি।
সূত্রঃ প্রথম আলো ১৭/০৯/২০১৩