বহুরূপী গিরগিটি

girgiti 3
ছবি কৃতজ্ঞতাঃ রাকিবুল ইসলাম, প্রকৃতিপ্রেমী সৌখিন আলোকচিত্রী

বহুরূপী গিরগিটির কথা আমরা সবাই জানি। গায়ের রং পরিবর্তন করতে পারে বলে তাদের এই নাম দেওয়া হয়। ইংরেজিতে এদের বলা হয় Garden Lizard। এরা সরীসৃপ জাতীয় প্রাণী। পৃথিবীতে প্রায় একশ ষাট প্রজাতির বহুরূপী গিরগিটির দেখা মেলে। এদের বেশিরভাগ আফ্রিকা, মাদাগাসকার, স্পেন ও পর্তুগাল নিবাসী। দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে শ্রীলঙ্কাতেও বেশি দেখা যায়। যুক্তরাষ্ট্রের কিছু অংশে যেমন ক্যালিফোর্নিয়া, ফ্লোরিডা ও হাওয়াইয়ের বনভূমিতেও এরা বসবাস করে। আবার যাদের ভয়ডর একটু কম তারা শখ করে এদের ঘরে পোষা প্রাণী হিসেবেও রাখে।

ছবি কৃতজ্ঞতাঃ রাকিবুল ইসলাম, প্রকৃতিপ্রেমী সৌখিন আলোকচিত্রী
ছবি কৃতজ্ঞতাঃ রাকিবুল ইসলাম, প্রকৃতিপ্রেমী সৌখিন আলোকচিত্রী
girgiti 5
ছবি কৃতজ্ঞতাঃ রাকিবুল ইসলাম, প্রকৃতিপ্রেমী সৌখিন আলোকচিত্রী

কিছু অদ্ভূত শারীরিক বৈশিষ্ট্যের জন্যই বহুরূপী গিরগিটি আমাদের কাছে এত জনপ্রিয়। অন্য সব সরীসৃপের মতো এরাও বুকে ভর দিয়ে হাঁটে। এদের চারটি পায়ে পাঁচটি করে আঙুল থাকে; কিন্তু অন্যান্য সরীসৃপের মতো এদের আঙুল জোড়া লাগানো নয়। বরং এরা আঙুলের সাহায্যে মানুষের মতো যেকোনো জিনিস শক্ত করে ধরে রাখতে পারে। এদের লেজও যেকোনো জিনিস আঁকড়ে ধরে রাখতে পারে। গাছের উপর ওঠার সময় লেজের সাহায্যে এরা গাছের ডাল ধরে রাখে। তাহলে বুঝুন, লেজ ওদের জন্য কতটা দরকারি। এজন্য কোনো কারণে লেজ কেটে গেলেও টিকটিকির মতো আবার এদের লেজ গজাতে শুরু করে। বহুরূপী গিরগিটির চোখ অন্য সরীসৃপের চোখের চেয়ে আলাদা। প্রত্যেক চোখে একটি শক্ত ঢাকনা থাকে, যার মধ্যে শুধু একটি ছোট্ট গোল খোলা জায়গা থাকে, যাতে চোখের মণিটি অবস্থান করে। এরা চোখের সাহায্যে শরীরের দুই পাশে অবস্থিত দুটি আলাদা জিনিস একইসঙ্গে দেখতে পারে। এদের শরীরের চারপাশে এরা ৩৬০ ডিগ্রি পরিমাপে সবকিছু দেখতে পায়।

ছবি কৃতজ্ঞতাঃ রাকিবুল ইসলাম, প্রকৃতিপ্রেমী সৌখিন আলোকচিত্রী
ছবি কৃতজ্ঞতাঃ রাকিবুল ইসলাম, প্রকৃতিপ্রেমী সৌখিন আলোকচিত্রী

গিরগিটি তাদের খাবারের তালিকায় পোকামাকড়কে প্রাধান্য দেয়। তবে কিছু বড় গিরগিটি ছোট ইঁদুর, পাখি এবং টিকটিকিকেও রেহাই দেয় না। এরা খুব তাড়াতাড়ি চলাচল করতে পারে না, তাই খাবার সংগ্রহের জন্য এরা জিহ্বার উপর বেশি নির্ভরশীল। এরা জিহ্বাকে মুখ থেকে অনেক দূরে লম্বা করতে পারে। জিহ্বার সামনের অংশ বেশ আঠালো। ফলে কোনো খাদ্যদ্রব্য জিহ্বার সংস্পর্শে চট করে আটকা পড়ে যায়। তারপর ঘপাৎ করে মুখে পুরেই এরা পেটে চালান করে দেয়।
বহুরূপী গিরগিটি নিজেদের গায়ের রং পরিবর্তন করতে পারে। কিন্তু তারা তাদের শরীরের রং যে বাইরের প্রকৃতির সঙ্গে খাপ খাওয়াতে বদলায়, তা নয়। এমনকি তারা ইচ্ছা মতো যেকোনো রংও ধারণ করতে পারে না। প্রত্যেকেই কিছু নির্দিষ্ট রং ধারণ করার সীমাবদ্ধতা আছে। প্রধানত গিরগিটির মনের অবস্থার ভিত্তিতে তাদের গায়ের রং বদলায়। যেমন_ ভয় অথবা রাগ। নিজেদের মধ্যে ভাবের আদান-প্রদান করতে এটি খুব জরুরি।

ছবি কৃতজ্ঞতাঃ রাকিবুল ইসলাম, প্রকৃতিপ্রেমী সৌখিন আলোকচিত্রী
ছবি কৃতজ্ঞতাঃ রাকিবুল ইসলাম, প্রকৃতিপ্রেমী সৌখিন আলোকচিত্রী

বেশিরভাগ বহুরূপী গিরগিটি ডিম পাড়ে। প্রজাতি অনুসারে ডিমের সংখ্যা নির্ভর করে। ছোট প্রজাতির গিরগিটি ২ থেকে ৪টি এবং বড় প্রজাতিরা ৮০ থেকে ১০০টি ডিম পাড়তে পারে। যখন ডিম পাড়ার সময় হয় মহিলা গিরগিটিরা গাছ থেকে নিচে নেমে আসে ও মাটিতে ১০-৩০ সেন্টিমিটারের গর্ত করে। তারা গর্তে ডিম পাড়ে এবং ডিমগুলোকে মাটি চাপা দিয়ে চলে যায়। ডিম থেকে বাচ্চা বের হতে সময় লাগে ৪ থেকে ১২ মাস। পারশন্স ক্যামেলিয়ন নামক বহুরূপী গিরগিটি প্রজাতির ডিম ফুটতে সময় লাগে ২৪ মাস। এত দীর্ঘ সময়ে নষ্ট হয়ে যাওয়ার অথবা ডিম খেকো প্রাণিদের চোখে পড়ে যাবার সম্ভাবনা প্রবল। তাই এই প্রজাতির গিরগিটি আজ প্রায় বিলুপ্ত। মজার ব্যাপার হল, কিছু প্রজাতির বহুরূপী গিরগিটি ডিম পাড়ে না, বাচ্চা দেয়। প্রজাতি অনুসারে এরা ৮ থেকে ৩০টি বাচ্চা দিতে পারে। বাচ্চারা পৃথিবীতে আসার সঙ্গে সঙ্গেই গাছে ওঠতে শুরু করে ও এরা জন্ম থেকেই শিকারে পারদর্শী হয়ে থাকে। খাবার অথবা সুরক্ষার জন্য তারা মায়ের উপর নির্ভর করে না।

——তাসমিয়া তাহসিন—–

এনভাইরনমেন্টমুভ ডটকম

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Discover more from EnvironmentMove.earth

Subscribe now to keep reading and get access to the full archive.

Continue reading

Verified by ExactMetrics