গৌরনদীতে ঝড়ে ফসলের ব্যাপক ক্ষতি আধাপাকা ধান পরিণত হচ্ছে চিটায়

মাঠ জুড়ে সোনার ফসলের হাতছানি। কৃষকের বুকে জুড়ে ছিল সমৃদ্ধি ও সম্ভাবনার স্বপ্ন। আধাপাকা ধান নিয়ে কৃষকের মনে জেগেছিল আনন্দ। কিন্তু সে আনন্দে ছেদ পড়েছে হঠাৎ করে  ঘূর্ণিঝর মহাসেনের প্রভাবে। দমকা ও ঝরো হাওয়ার সাথে ভারি বর্ষণে কৃষকের ক্ষেতের ধান এখন ল-ভ-। এ সময় পালরদী নদীর পানি ৩ ফুট বৃদ্ধি পেয়ে ইরি-বোরো ক্ষেতে ঢুকে পড়ে। এদিকে মহাসেনের প্রভাবে বুধবার রাত থেকে টানা দুদিন ভারি বর্ষণে ধান ক্ষেত এখন পানিতে টইটম্বুর। অবাঞ্চিত পানিতে ডুবে থাকা আধাপাকা ধান এখন পচনের আশঙ্কা করছেন কৃষকরা। এতে কৃষক তার ফসল হারাবে। 1368975908.

একমাত্র ইরি-বোরো চাষে নির্ভরশীল বরিশালের গৌরনদী উপজেলা ৭টি ইউনিয়ন। গৌরনদীর বার্থী, ডুমুরিয়া, বয়সা, মাগুরা, উত্তর ও দক্ষিণ মাদ্রা, ধানডোবা, কটকস্থল, তাঁরাকুপি, গোরক্ষডোবা, উত্তর ও দক্ষিণ  বউরগাতিসহ কয়েকটি গ্রামে গত শুক্রবার সরেজমিন গিয়ে মাঠের  ইরি-বোরো ধান তলিয়ে যাওয়ার চিত্র চোখে পড়ে। আগত ধানকাটা শ্রমিকরা তলিয়ে যাওয়া ইরি-বোরো পাকা ধান কেটে ডিঙ্গি নৌকায় তুলছে। উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে,  চলতি ইরি-বোরো মৌসুমে ৭টি ইউনিয়নে মোট ৫ হাজার ২শ’ ২২ হেক্টর জমিতে ইরি-বোরোসহ আউশ ধান, শাকসবজি, পাট ইত্যাদি আবাদ করা হয়। ঘূর্ণিঝড় মহাসেনের প্রভাবে উপজেলার ৭টি ইউনিয়নে বুধবার মধ্যরাত থেকে গত বৃহস্পতিবার পর্যন্ত ঝড়ো হাওয়ার পাশাপাশি প্রবল বর্ষণে ২০৬৫ হেক্টর জমির ইরি-বোরোসহ আউশ ধান, শাক-সবজি, পাট ফসলের ক্ষেত পানিতে তলিয়ে গেছে। তলিয়ে যাওয়া এসব ক্ষেতের কাঁচা-পাকা ইরি-বোরো ধান কৃষকরা ঘরে তুলতে পারবে কিনা এ নিয়ে শঙ্কা রয়েছে। গৌরনদী উপজেলার গোরক্ষডোবা গ্রামের কৃষক মো. আব্দুল হক বেপারী, বাউরগাতি গ্রামের কেরামত হাওলাদার, গনি সিকদার, উত্তর মাদ্রা গ্রামের সালাম সরদার, তাঁরাকুপি গ্রামের আবুল হোসেন জানান, ইরি-বোরো মৌসুমে সাতক্ষীরা, যশোর, ফরিদপুরসহ বিভিন্ন জেলা থেকে ধানকাটা শ্রমিকরা (স্থানীয় ভাষায় কাইচ্চাল) ধান কাটতে এ অঞ্চলে এসেছে। কিন্তু এবার প্রতিমণ নতুন ধান ৫০০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। মহাসেনের কারণে বন্যায় ইরি-বোরো পাকা ধান পানির নিচে। এ কারণে কাইচ্চালরা কাটতে চাচ্ছে না। তলিয়ে যাওয়া ধান নিয়ে বিপাকে পড়েছেন কৃষকরা। বার্থী গ্রামের বোরো চাষি নিরাঞ্জন হলদার বলেন, ‘জমির মালিকদের কাছ থেকে ১ একর ৪০ শতাংশ জমি লিজ নিয়ে ধারদেনা কইরা ইরি ধান লাগাই। এসব ক্ষেতের ধান আর ২-১ দিনের মধ্যে কাটার কথা ছিল। কিন্তু গত দুই দিন ধইরা ঝড়ে ও বৃষ্টিতে মোর স্বপ্ন তলাইয়া গেছে। মুই কি কইরা সংসার চালামু হেইয়া মুই নিজেই কইতে পারি না’। এ কথা শুধু নিরাঞ্জনের একার নয়। তার সুরে সুর মিলিয়ে বার্থী গ্রামের জাহাঙ্গীর সরদার, শামচু পাওলান, আশীষ রায় বললেন, তাঁরাকুপি গ্রামের কুদ্দুছুর রহমান, মিজানুর রহমানসহ অনেকে। ব্লক ম্যানেজার হাকিম বেপারী জানান, গৌরনদী উপজেলার বার্থী, বয়সা, ধানডোবা, মাগুরা, বউরগাতি, ডুমুরিয়া, সাউদেরখাল পাড়, কটকস্থল, গোরক্ষডোবা, তাঁরাকুপি গ্রামের ২০টি ব্ল¬¬কে প্রায় ৭শ’ একর জমিতে ইরি চাষ করা হয়। অধিকাংশ জমির ধান কাটা গত সোমবার থেকে শুরু হয়ে গেছে। মহাসেনের প্রভাবে ঝড় ও প্রবল বর্ষণের পানিতে এসব ফসলের জমিতে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়। শতকরা ৭৫টি জমির ধান পানির নিচে ডুবে রয়েছে। আর কয়েকদিন এসব ধান পানির নিচে থাকলে পচন ধরবে। বার্থী ইউপির চেয়ারম্যান মো. শাহ্জাহান প্যাদা  বলেন, এ অঞ্চলের মানুষ একমাত্র  ইরি-বোরো চাষ করে জীবিকা নির্বাহ করেন। এসব এলাকার কৃষক ফসল হারানোর আশঙ্কায় দিশেহারা হয়ে পড়েছে।

সূত্রঃ দৈনিক ইনকিলাব (২০/০৫/২০১৩)

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Discover more from EnvironmentMove.earth

Subscribe now to keep reading and get access to the full archive.

Continue reading

Verified by ExactMetrics