
গ্রীষ্মের ছুটিতে সীতাকুণ্ড ইকোপার্ক
মোঃ সাইফুল ইসলাম সোহেল
ইতোমধ্যে বিভিন্ন স্কুল কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়ে গ্রীষ্মকালীন ছুটি শুরু হয়ে গেছে। গ্রীষ্মের ছুটিতে খুব সহজেই ঘুরে আসতে পারেন সবুজে-শ্যামলে সুশোভিত সীতাকুণ্ড ইকোপার্ক। চট্টগ্রাম পড়ালেখার জন্য আসার সুবাদে বেশ কয়েকবার সুযোগ হয়েছিল সীতাকুন্ড ইকোপার্কে যাওয়ার। সেখান থেকে কাছেই অনেক উঁচুতে অবস্থিত চন্দ্রনাথ মন্দির। নয়নাভিরাম সবুজ আর এক হাজার ফুট উপর থেকে সবুজের সীমাহীন বিস্তৃতি, ফিরতেই মন চায় না। সীতাকুন্ড ইকোপার্ক যেমন ভ্রমণ পিপাসুদের জন্য সাজিয়ে রেখেছে আনন্দের সমাহার তেমনি আবার প্রকৃতি গবেষকদের জন্য ধরে রেখেছে অনেক তথ্যের সম্ভার। এইতো কিছুদিন আগেও ঘুরে এসেছি আমি ও আমার বন্ধু শাহজালাল, মাহে আলম, শাহরিয়ার হাসান শোহেল, হেলাল, কায়সার রহমান, সরোজ কুমার। চট্টগ্রামে থাকাকালীন যতগুলো স্থান ভ্রমণ করেছি তার সবগুলোর স্মৃতি মনে না থাকলেও মনে থাকবে সীতাকুণ্ড ইকোপার্ক ও ১২০০ ফুট উপরে চন্দ্রনাথ পাহাড়ে অবস্থিত চন্দ্রনাথ মন্দিরের স্মৃতি। এতো সুন্দর মনোরম দৃশ্য দেখার জন্য কিভাবে আসবেন তার সংক্ষিপ্ত বিবরণসহ এনভায়রনমেন্টমুভের পাঠকদের জন্য আমার এই লেখা।
চট্টগ্রাম জেলার সীতাকুণ্ড উপজেলার ঐতিহ্যবাহী চন্দ্রনাথ রির্জাভ ফরেস্ট ব্লকের প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে সুশোভিত চিরসবুজ বনাঞ্চলে ১৯৯৬ একর জমির উপর বোটানিক্যাল গার্ডেন ও ইকোপার্ক অবস্থিত। এটি চট্টগ্রাম শহর থেকে ৩৫ থেকে ৩৭ কি.মি. উত্তরে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক এবং রেলপথের পূর্ব পাশে চন্দ্রনাথ পাহাড়ের পাদদেশে অবস্থিত। পাহাড়ের চূড়ায় আছে পৌরাণিক স্মৃতি বিজরিত চন্দ্রনাথ মন্দির।
ইকোপার্কে ঢোকার সময়: ইকোপার্কে প্রবেশের সাথে সাথে আপনি একটি বড় ডিসপ্লে ম্যাপ দেখতে পাবেন, যার মাধ্যমে আপনি ইকোপার্ক সম্পর্কে সম্পূর্ণ ধারনা পাবেন। এ স্থান থেকে চন্দ্রনাথ মন্দিরের দূরত্ব প্রায় ৫ কি.মি.। আপনি পায়ে হেঁটে অথবা জীপ, মাইক্রোতে চড়ে সেখানে যেতে পারবেন।
উঁচুনিচু নির্জন পাহাড়, হরিণ, বানর, খরগোশ এবং হনুমান সহ বিভিন্ন বন্যপ্রাণীর সমাহার, পাখ পাখালীর কলরব, প্রাকৃতিক ঝর্ণা, চিরসবুজ বৃক্ষরাজি সমৃদ্ধ ইকোপার্ক সবার মন কেড়ে নেবেই।
বোটানিক্যাল গার্ডেন ও ইকোপার্কের প্রধান ফটকের ভিতরে ডান পাশে রয়েছে বোটানিক্যাল গার্ডেন ও ইকোপার্কের প্রধান নার্সারী এবং তার অফিস। এই নার্সারীতেই আছে দেশ-বিদেশের নানা প্রচলিত ও বিলুপ্ত প্রজাতীর ফুল, ফল ও ঔষধি গাছ যেমন – অর্জুন, তেলসুর, চাপালিস, করই, জারুল, তুন, জাম, জলপাই সহ আরো অনেক। পার্কে একটি অর্কিডের বাগানও আছে।
সহস্রধারা ও সুপ্তধারা জলপ্রপাত: এই চন্দ্রনাথ রিজার্ভ ফরেষ্ট এলাকায় অনেক ছোট-বড় ঝর্ণা আছে। এই সকল ঝর্ণার মধ্যে বোটানিক্যাল গার্ডেন ও ইকোপার্ক এলাকার মধ্যে দুটো ঝর্ণা রয়েছে। ঝর্ণা দুটি সহস্রধারা ও সুপ্তধারা নামে পরিচিত। সহস্রধারা থেকে অবিরত পানি ঝরছে। কিন্তু সুপ্তধারা থেকে শীতকালে খুব কম পরিমান পানি ঝরে, তবে বর্ষাকালে এগুলো তাদের পরিপূর্ণ ধারায় আবর্তিত হয়।
এত কিছু দর্শনের পর শরীরে পর্যাপ্ত শক্তি এবং মনের সাহস থাকলে অবশ্যই দেখতে যাবেন প্রায় ১২০০ ফুট উপরে চন্দ্রনাথ পাহাড়ে অবস্থিত চন্দ্রনাথ মন্দির।
যেভাবে যাবেন: ঢাকা থেকে এসি, ননএসি বাস ছাড়ে সায়দাবাদ বাস ষ্টেশন থেকে। আরামদায়ক এবং নির্ভর যোগ্য সার্ভিস গুলোতে উঠে যাবেন। বাস গুলো সীতাকুণ্ডে থামে। চট্টগ্রাম থেকে বাসগুলো মাদারবাড়ী, কদমতলী বাসষ্টেশন থেকে ছাড়ে। তা ছাড়াও অলঙ্কার থেকে কিছু ছোট গাড়ী ছাড়ে ( স্থানীয়ভাবে মেক্সী নামে পরিচিত) সেগুলো করেও আসা যাবে।
এছাড়া ঢাকা থেকে ছেঁড়ে আসা দ্রুতগামী ট্রেন ‘ঢাকা মেইল’ সীতাকুণ্ডে থামে, এটি ঢাকা থেকে ছাড়ে রাত ১১টায় এবং সীতাকুণ্ডে পৌঁছে পরদিন সকাল ৬.৩০ থেকে ৭টায়। অন্যান্য আন্তঃনগর ট্রেন গুলো সরাসরি চট্টগ্রামে চলে যায়। শুধুমাত্র শিবর্তুদশী মেলার সময় সীতাকুণ্ডে থামে।
লেখক: চট্টগ্রাম ভেটেরিনারি ও এনিম্যাল সাইন্সেস বিশ্ববিদ্যালয়।
Email: sohelsaiful13405@yahoo.com
অনেক সুন্দর লাগে এই জায়গাগুলো……। সুন্দর আর্টিকেল।