চন্দ্রবোড়া
ভাইপারিডি গোত্রের সাপ হচ্ছে চন্দ্রবোড়া। আঞ্চলিক নাম উলুচোড়া। তবে চন্দ্রবোড়াই বহুল ব্যবহৃত। ইংরেজি নাম Russel’s Viper. Vipera russelli বৈজ্ঞানিক নাম। লম্বায় সর্বোচ্চ ১৫০০ মিমি। তবে সচরাচর ১২০০ মিমি লম্বা হয়। বাংলাদেশের বরেন্দ্র অঞ্চল সিলেটের বনভূমি, চট্টগ্রামের পাহাড়ি অঞ্চলে চন্দ্রবোড়া বেশি দেখা যায়। তবে সুন্দরবনের লোকালয়েও এ সাপের উৎপাত আছে। বাংলাদেশের চতুর্থ মারণসাপ হচ্ছে চন্দ্রবোড়া। এ সাপ চেনা সহজ। হঠাৎ দেখলে মনে হবে বাচ্চা অজগর। মোটা নলাকার শরীর। দু’মাথাই সরু হয়ে গেছে। একদিকে লেজ, অন্যদিকে মাথা। ঘাড় সরু, মাথা চ্যাপ্টা, বড়, তিনকোণা। চোখ বড়, মণি খাড়া, লেজ ছোট। দেহের সাত ভাগের একভাগ। দেহের মূল রং বাদামি। তিন সারি গাঢ় বাদামি বরফি আঁকা গায়ে। মাঝের সারির বরফিগুলো সাদা-কালো বর্ডার দেয়া। মাঝের সারি কখনো গোলাকার। পাশের সারির দাগ কখনো ভাঙা ভাঙা। নাক-মুখ বরাবর মাথার উপরের দিকে া আকারের দাগ সাদা গোলাপি রঙের দৃশ্যমান। পেট সাদা, তবে পেটের নিচের দিকে কালো অর্ধচন্দ্রাকার দাগ দেখতে পাওয়া যায়। উপমহাদেশের ছোবল মারা সাপের মধ্যে চন্দ্রবোড়া সাপের দাঁত অস্বাভাবিক বড় প্রায় ১৬ মিমি। এ প্রজাতির সাপের বৈশিষ্ট্য হচ্ছে এরা দাঁত মুখের ভেতর ভাঁজ করে রাখতে পারে। কামড়ানোর সময় প্রয়োজনে দাঁত পেশির মাধ্যমে খাড়া করে নেয়। লম্বার তুলনায় দেহ বেশ নাদুস-নুদুস। এদের প্রধান খাদ্য ইঁদুর। এছাড়া কাঠবিড়ালি, ছুচো, বিড়ালের বাচ্চা, ছোট পাখি, নানা সরীসৃপ খেয়ে থাকে। বাচ্চা সাপের মধ্যে একে অপরকে খেয়ে ফেলার প্রবণতা আছে। এরা ডিম পাড়ে না। সরাসরি বাচ্চা প্রসব করে। কামড়ানো দাঁতের পাশেই এদের মুখে আরো ৪-৫টি অতিরিক্ত দাঁত থাকে। কামড়ানোর দাঁত কোনো কারণে ভেঙে গেলে তখন ওই অতিরিক্ত দাঁত কর্মতৎপর হয়। চন্দ্রবোড়া সাপ মূলত রাতে চলাফেরা করে। গর্ত বা বাসস্থানের কাছ থেকে বেশি দূরে যায় না। কামড়ানোর সময় এর দেহকে মাটি থেকে ফুুটখানেক উপরে তোলে। সাপের প্রকৃতি কখনোই আক্রমণাত্মক নয়।
আজিজুর রহমান
সূত্রঃ দৈনিক মানবকণ্ঠ ১১/০৫/২০১৩