চালে ক্ষতিকর ক্যাডমিয়াম

 বাংলাদেশে ও বিশ্বের কয়েকটি দেশের উৎপদিত চালে মানবদেহের জন্য ক্ষতিকর ধাতব পদার্থ ক্যাডমিয়ামের অস্তিত্ব পাওয়া গেছে৷ একটি আন্তর্জাতিক গবেষণায় ১২টি দেশের চাল নিয়ে গবেষণা করে দেখা গেছে৷

“কম্বোডিয়া, ঘানা, ভারত, নেপাল, ইটালি, জাপান, স্পেন, থাইল্যান্ড. যুক্তরাষ্ট্র এবং ফ্রান্সের চালেও ক্যাডমিয়াম পাওয়া গেছে৷”

যুক্তরাষ্ট্রের গবেষণা সংগঠন অ্যামেরিকান কেমিক্যাল সোসাইটির এই গবেষণায় যুক্ত ছিলেন বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের মৃত্তিকা বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. এম রফিকুল ইসলাম৷ তিনি ডয়চে ভেলেকে জানান, গবেষণা দলে ১২টি দেশের বিজ্ঞানীরা অংশ নেন৷ বাংলাদেশের চাল নিয়ে গবেষণার দায়িত্ব ছিল তাঁর৷ এই গবেষণা প্রতিবেদন গত মাসে প্রকাশ করা হয়েছে৷

তিনি জানান, গবেষণায় বাংলাদেশের চালে অধিক পরিমাণ ক্যাডমিয়াম পাওয়া গেছে৷ এর পরিমাণ ০.০১ পিপিএম থেকে ০.৩ পিপিএম পর্যন্ত৷ বাংলাদেশের পরই শ্রীলঙ্কার চালে ক্যাডমিয়াম বেশি৷ এছাড়া কম্বোডিয়া, ঘানা, ভারত, নেপাল, ইটালি, জাপান, স্পেন, থাইল্যান্ড. যুক্তরাষ্ট্র এবং ফ্রান্সের চালেও ক্যাডমিয়াম পাওয়া গেছে৷

ড. রফিকুল ইসলাম আরও জানান, জমিতে নিম্নমানের টিএসপি সার প্রয়োগই ক্যাডমিয়ামের প্রধান কারণ৷ এছাড়া বাংলাদেশের টেক্সটাইল, ট্যানারিসহ নানা শিল্প কারখানার বর্জ্য নদী বা জলাশয়ে গিয়ে পানি দূষিত করছে৷

এমন ধবধবে চালের ভাত আপনি খেতেই পারেন, তবে ক্যাডমিয়াম নয় নিশ্চয়ই।
এমন ধবধবে চালের ভাত আপনি খেতেই পারেন, তবে ক্যাডমিয়াম নয় নিশ্চয়ই।

আর সেই পানি ব্যবহার করে চাষাবাদ করায় চালে ক্যাডমিয়াম পাওয়া যাচ্ছে৷ তিনি বলেন, শুধু চাল নয় – শাকসবজিতেও নদীর পানির ক্যাডমিয়াম পাওয়া যাচ্ছে৷ ভেজাল টিএসপি সার এবং শিল্প, বিশেষ করে ট্যানারির বর্জ্যে উচ্চমাত্রার ক্যাডমিয়াম রয়েছে৷ আর বাংলাদেশের ৫০ শতাংশ টিএসপি সার ভেজাল৷

তিনি জানান, ক্যাডমিয়াম হল ক্ষতিকারক হেভি মেটাল৷ এটি শরীরে দীর্ঘদিন জমা হতে থাকলে বিষক্রিয়ার সৃষ্টি হয়৷ এর প্রতিক্রিয়ায় মানব দেহে ক্যানসার এবং কিডনি আক্রান্ত হতে পারে৷

সলিমুল্লাহ মেডিক্যাল কলেজের অধ্যাপক ডা. মনিলাল আইট লিটু ডয়চে ভেলেকে জানান, ক্যাডমিয়াম শরীরের ফুসফুস, কিডনি এবং হাড় ক্ষতিগ্রস্ত করে৷ এর প্রভাবে শ্বাসকষ্ট, কিডনি অকার্যকর এবং হাড় ক্ষয় হয়ে যায়৷ এছাড়া ক্যানসার এবং পুরষত্বহীনতার কারণ হতে পারে ক্যাডমিয়াম৷

ড. এম রফিকুল ইসলাম জানান, এই ক্যাডমিয়াম শুধু চালে নয়, ভূগর্ভস্থ পানিতেও ছড়িয়ে পড়ছে৷ এতে পরিস্থিতি আরো খারাপ হতে পারে৷ আর ক্যাডমিয়ামের কারণে বুড়িগঙ্গাসহ বাংলাদেশের বেশ কিছু নদী এবং জলাশয় মাছ, জলজ প্রাণী এবং জলজ উদ্ভিদ শূন্য হয়ে পড়ছে৷

তিনি মনে করেন, চালকে ক্যাডমিয়াম মুক্ত রাখতে হলে জমিতে ভেজাল টিএসপি সার ব্যবহার বন্ধ করতে হবে৷ শিল্প কারখানায় ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্ট স্থাপন করতে হবে, যাতে দুষিত বর্জ্য নদী এবং জলাশয়ে পরতে না পারে৷

সূত্রঃ www.dw.de/bengali

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Discover more from EnvironmentMove.earth

Subscribe now to keep reading and get access to the full archive.

Continue reading

Verified by ExactMetrics