তিলা ঘুঘু

সৌরভ মাহমুদ

এখানে ঘুঘুর ডাকে অপরাহ্নে শান্তি আসে মানুষের মনে;
এখানে সবুজ শাখা আঁকাবাঁকা হলুদ পাখিরে রাখে ঢেকে;
—জীবনানন্দ দাশ
গ্রামবাংলার কোনো পথ দিয়ে হেঁটে গেলে যেসব পাখির সুরেলা কণ্ঠ কানে ভেসে আসে, সেসব পাখির মধ্যে তিলা ঘুঘু অতিপরিচিত এক পাখি। গ্রামের মাঠেঘাটে, শস্যভিটায়, সুনিবিড় কোনো পথে একাকী বা জোড়ায় হেঁটে হেঁটে মাথা দুলিয়ে শস্যদানা খুঁজে বেড়ায় তিলা ঘুঘু (Spotted Dove)। জনমানুষের আভাস পেলে একটু থমকে দাঁড়ায়, তারপর দেখেশুনে আবারও হাঁঁটতে শুরু করে। মানুষের দূরত্ব যদি নিরাপদ সীমার বাইরে চলে যায়, তখন ডানা ঝাপ্টিয়ে উড়াল দেয়। তিলা ঘুঘু শান্ত প্রকৃতির পাখি। গ্রামে মানুষের বসতির কাছেই এরা জীবনচক্র চালিয়ে যায়। 2013-07-10-19-47-21-51ddba497ddd5-untitled-38
বাংলাদেশে দেখা মেলে ছয় প্রজাতির ঘুঘুর। এরা হলো তিলা ঘুঘু, ইউরেশীয় কণ্ঠীঘুঘু, উদয়ী রাজঘুঘু, হাসির ঘুঘু, লাল রাজঘুঘু, দাগি কোকিল ঘুঘু, পাতি শ্যামা ঘুঘু বা সবুজ ঘুঘু। এসব প্রজাতির মধ্যে তিলা ঘুঘু সহজদৃষ্ট।
তিলা ঘুঘু লোকালয়ের সুপরিচিত পাখি। মাথার চাঁদি ও কান-ঢাকনি ধূসর। ঘাড়ের পেছনের উপরিভাগ পাটল বর্ণের। ঘাড়ের পেছনের নিচের ভাগ ও ঘাড়ের পাশে সাদা-কালো তিলার পট্টি। বাদামি পিঠ ও ডানায় পীতাভ তিলা রয়েছে। চোখ ফিকে লালচে বাদামি, চোখের পাতা ও চোখের গোলকের মুক্ত পট্টি অনুজ্জ্বল গাঢ় লাল। ঠোঁট কালচে। পা ও পায়ের পাতা লালে মেশানো এবং নখর বাদামি। ছেলে ও মেয়ে পাখির চেহারা অভিন্ন।
তিলা ঘুঘু আর্দ্র পাতাঝরা বন, বাগান, কুঞ্জবন, আবাদি জমিতে বিচরণ করে। গ্রাম ও শহর—সবখানে এই পাখি দেখা যায়। সচরাচর জোড়ায় বা ছোট দলে থাকে। তৃণভূমি, খামার, চাষের জন্য কর্ষিত জমি, রাস্তাঘাট ও বনের ধারে খাবার খায়। ছেলে পাখি ডাকতে পছন্দ করে। প্রজনন মৌসুম এপ্রিল-জুলাই মাসে ছেলে পাখি মেয়ে পাখির পাশে মাথা নাচিয়ে অবিরাম ডাকে। কোমল সুরের ডাক, ক্রক… ক্রকু…ক্র..। কাঁটাওয়ালা ঝোপ, বাঁশঝাড়, খেজুর ও অন্যান্য ছোট গাছে কাঠি বিছিয়ে বাসা বানিয়ে এরা ডিম পাড়ে। ডিমগুলো সাদা বর্ণের। ১৩ দিনে ডিম ফোটে।
ছেলেবেলায় কাউবয় হ্যাট পরে অনেক শহুরে সাহেবকে এয়ারগান নিয়ে গ্রামে পাখি শিকারে আসতে দেখেছি। তারা যেসব পাখি মারত, তার মধ্যে তিলা ঘুঘুর সংখ্যা থাকত সবচেয়ে বেশি। এখন গ্রামের মানুষ অনেক সচেতন, এয়ারগানও নিষিদ্ধ। তাই তিলা ঘুঘুর সংখ্যা দেশে নেহাত কম নয়। তবে বনের এই ঘুঘু রাজধানীর কাঁটাবনে পাখির দোকানসহ পাখি ব্যবসায়ীদের খাঁচায় দেখা যায়। এ ব্যাপারে আইনের সঠিক প্রয়োগ দরকার।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Discover more from EnvironmentMove.earth

Subscribe now to keep reading and get access to the full archive.

Continue reading

Verified by ExactMetrics