দাগি রাজহাঁস

দাগি রাজহাঁস (বৈজ্ঞানিক নাম: Anser indicus) (ইংরেজি Bar Headed Goose)  অ্যানাটিডি গোত্র বা পরিবারের অন্তর্গত আন্সের গণের অন্তর্গত বড় আকারের একটি পরিযায়ী রাজহাঁস। দাগি রাজহাঁসের বৈজ্ঞানিক নামের অর্থ ভারতীয় রাজহাঁস (লাতিন: anser = রাজহাঁস, indicus = ভারতের)।পাখিটি বাংলাদেশ, ভারত ছাড়াও দক্ষিণ,মধ্য ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার বিভিন্ন দেশে দেখা যায়। শীতকালে এরা মধ্য এশিয়া থেকে দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় পরিযায়ী হয়ে আসে। শীতের শেষে আবার সেখানে চলে যায় এবং সেখানকার পার্বত্য হ্রদসমূহে বিচরণ ও প্রজনন করে। বিগত কয়েক দশক ধরে এদের সংখ্যা ক্রমেই কমছে, কিন্তু এখনও আশঙ্কাজনক পর্যায়ে যেয়ে পৌঁছেনি। সেকারণে আই. ইউ. সি. এন.এই প্রজাতিটিকে ন্যূনতম বিপদগ্রস্ত বলে ঘোষণা করেছে। বাংলাদেশের বন্যপ্রাণী আইনে এ প্রজাতিটি সংরক্ষিত। দাগি রাজহাঁস একপ্রজাতিক, অর্থাৎ এর কোনউপপ্রজাতি নেই। অনেক উঁচু দিয়ে এরা উড়তে পারে। প্রকৃতপক্ষে দাগি রাজহাঁস পৃথিবীর সর্বোচ্চ উড্ডয়নকারী পাখিদের মধ্যে একটি।

768px-Bar-headed_Goose_-_St_James's_Park,_London_-_Nov_2006দাগি রাজহাঁস বড় আকারের জলচর পাখি। এর দৈর্ঘ্য কমবেশি ৭৩ সেমি, ডানা ৪৫ সেমি, ঠোঁট ৫.৫ সেমি, লেজ ১৪.৮ সেমি, পা ৭.১ সেমি এবং ওজন ১.৬-৩.২ কেজি। প্রাপ্তবয়স্ক পাখি দেখতে ধূসর। সাদা মাথা থেকে সাদা একটি লাইন ধূসর গলার নিচ পর্যন্ত চলে গেছে। মাথায় দুটি স্পষ্ট কালো ডোরা থাকে। ওড়ার সময় এদের সাদা মাথা, ফিকে দেহও ডানার কালো আগা স্পষ্ট চোখে পড়ে। এদের চোখ বাদামি। ঠোঁট হলুদ এবং ঠোঁটের আগা ও নাক কালো। পা ও পায়ের পাতা গাঢ় হলুদ। স্ত্রী ও পুরুষ হাঁসের চেহারা একই রকম। অপ্রপ্তবয়স্ক পাখির মাথায় ডোরা নেই। কপাল, গাল ও গলা মলিন। মাথার চাঁদি ধূসর-বাদামি। পিঠ ও পেটের রঙ একই রকম।

গ্রীষ্মকালে দাগি রাজহাঁস পর্বতমধ্যবর্তী উঁচু হ্রদে বিচরণ করে ও ঘাস-লতাপাতা খেয়ে বেড়ায়। শীতকালে মঙ্গোলিয়া, রাশিয়া, তিব্বত ও কাজাখস্তান থেকে হিমালয় পাড়ি দিয়ে দক্ষিণে অপেক্ষাকৃত উষ্ণ অঞ্চলে পরিযায়ী হয়ে আসে। সাম্প্রতিক গবেষণায় বেরিয়ে এসেছে যে এরা এভিয়ান ইনফ্লুয়েঞ্জার অন্যতম বাহক। কাক, দাঁড়কাক, শিয়াল,গাঙচিল, সিন্ধুঈগল প্রভৃতি এদের প্রধান শত্রু।

দাগি রাজহাঁস পৃথিবীর সর্বোচ্চ উচ্চতা দিয়ে উড়তে সক্ষম পাখিদের মধ্যে একটি। পৃথিবীর পঞ্চম উচ্চতম পর্বতশৃঙ্গ মাকালু (৮,৪৮১ মি.) পার হয়ে এরা দক্ষিণে আসে বলে শোনা গেছে। মাউন্ট এভারেস্ট (৮,৮৪৮ মি.) পাড়ি দেওয়ার খবরও জানা যায় তবে তার সত্যতা সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়া যায় নি। প্রকৃতিবিদ আর শারীরতাত্ত্বিকদের কাছে এ এক বিরাট প্রশ্ন, কেন দাগি রাজহাঁস হিমালয় পর্বতমালার কম উচ্চতার গিরিপথ দিয়ে না এসে এত বেশি উচ্চতা দিয়ে পরিযান করে যেখানে অন্যসব পরিযায়ী পাখিরা অহরহ সেসব গিরিপথ ব্যবহার করে।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Discover more from EnvironmentMove.earth

Subscribe now to keep reading and get access to the full archive.

Continue reading

Verified by ExactMetrics