ধলা বালিহাঁস

ধলা বালিহাঁস (বৈজ্ঞানিক নাম: Nettapus coromandelianus) (ইংরেজি: Cotton Pygmy Goose), বালিহাঁস বা বেলেহাঁস  অ্যানাটিডি গোত্র বা পরিবারের অন্তর্গত নেট্টাপাস গণের এক প্রজাতির অতি পরিচিত ছোট আকারের হাঁস। বাংলাদেশের বাগেরহাটে এর নাম ভেড়ার ঢোঁশ। পাখিটিবাংলাদেশ, পাকিস্তান, ভারত ছাড়াও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার বিভিন্ন দেশ এবং উত্তর অস্ট্রেলিয়ায় দেখা যায়। ধলা বালিহাঁসের বৈজ্ঞানিক নামের অর্থ কোরাম্যান্ডলের শোরগোল করা হাঁস (গ্রিক netta = হাঁস, ops = ডাকাডাকি; ল্যাটিন coromandelianus = কোলামান্দেলাম, পূর্ব ভারতের প্রাচীন দ্রাবিড় রাজ্য)। বিগত কয়েক দশক ধরে এদের সংখ্যা স্থিতিশীল রয়েছে, বাড়েনি আবার আশংকাজনক হারে কমেও যায়নি। সেকারণে আই. ইউ. সি. এন. এই প্রজাতিটিকে Least Concern বা ন্যূনতম বিপদগ্রস্ত বলে ঘোষণা করেছে। বাংলাদেশের বন্যপ্রাণী আইনে এ প্রজাতিটি সংরক্ষিত।

Cotton_Pgymy_Goose_I2-_Kolkata_IMG_4808সবচেয়ে ছোট বুনোহাঁসের এই প্রজাতিটি আকারে বেশ ছোট। এর দৈর্ঘ্য কমবেশি ৩৩.৫ সেন্টিমিটার, ডানা ১৫.৫ সেন্টিমিটার, ঠোঁট ২.৮ সেন্টিমিটার, লেজ ৭.৩ সেন্টিমিটার ও পা ২.৪ সেন্টিমিটার। ওজন ২৫০ গ্রাম। স্ত্রী ও পুরুষ হাঁসের চেহারায় পার্থক্য রয়েছে। পুরুষ হাঁসের মাথার চাঁদি ও পিঠ কালচে বাদামি। কালচে পিঠে সূর্যের আলো পড়ে ঝলমলে সবুজ আভা ছড়িয়ে দেয়। মুখ, ঘাড়, গলা ও দেহতল সাদা। গলায় স্পষ্ট কালো বলয় দেখা যায়। ডানায় সাদা ডোরা থাকে। চোখ লালচে বাদামি। ছোট ঠোঁট কালো। স্ত্রী হাঁসের দেহতল অনুজ্জ্বল ফিকে সাদা। ডানার প্রান্ত সাদা। চোখ বাদামি; চোখ বরাবর কাজলের মত কালো চক্ষু-রেখা থাকে। ঠোঁট কালচে-জলপাই বা বাদামি। ঠোঁটের নিম্নভাগ ও সঙ্গমস্থল হলুদাভ। স্ত্রী ও পুরুষ হাঁস উভয়ের পা ও পায়ের পাতা কালচে-বাদামি বা কালো রঙের। অপ্রাপ্তবয়স্ক হাঁস দেখতে স্ত্রী হাঁসের মত। তবে চক্ষু-রেখা প্রশস্ততর ও দেহতলের রঙে পার্থক্য রয়েছে।

ধলা বালিহাঁস জলজ উদ্ভিদবহুল হ্রদ, বড় পুকুর, অগভীর লেগুন, হাওর ও জলাবদ্ধ ধানক্ষেতে বিচরণ করে। শীতের মরা নদী ও বড় বড় জলাশয় ছাড়া অন্যত্র খুব কমই দেখা যায়। সাধারণত ৫-১৫টি হাঁসের ছোট দলে দেখা যায়। তবে কখনও কখনও একই জায়গায় সারা বছর এক জোড়া হাঁসের দেখা মেলে। তার কারণ এরা সে জায়গার স্থান-কেন্দ্রিক প্রাণী। যে এলাকায় এরা থাকে সেখানকার জলাভূমি থেকে খাবার সংগ্রহ করে এবং পরিচিত একটি বা দু’টি গাছের খোঁড়লে বছরের পর বছর বাসা করে। এদের ওড়ার ভঙ্গি ও ডানার ওঠানামা বেশ সুন্দর। ওড়ার সময় ডাকে। পানিতে ভাসমান জলজ উদ্ভিদ থেকে এরা খাবার সংগ্রহ করে। খাদ্যতালিকায় রয়েছে জলজ উদ্ভিদের কচি কাণ্ড, বীজ, চিংড়ি, কাঁকড়া, পোকামাকড় ও তাদের লার্ভা। এদের ডাক ভারি, অনেকটা

হাওর-বাঁওড়, বিল-ঝিল, জলাশয়ের কাছাকাছি পুরোনো নারকেল, তাল, খেজুরগাছের খোঁড়লে বালিহাঁস বাসা বাঁধে।। জলাশয়ের পাশে পুরোনো গাছ না থাকলে বালিহাঁসের প্রজনন ব্যাহত হয়।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Discover more from EnvironmentMove.earth

Subscribe now to keep reading and get access to the full archive.

Continue reading

Verified by ExactMetrics