ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে রেইন ফরেস্ট

আজিজুর রহমান

lawachara1বৃষ্টিবহুল অরণ্য বা রেইন ফরেস্টগুলো অক্সিজেন উৎপাদন এবং বায়ুমণ্ডল থেকে কার্বন ডাইঅক্সসাইডসহ গ্রিনহাউস গ্যাস শুষে বাতাসকে দূষণমুক্ত রাখার প্রাকৃতিক কারখানা। একে পৃথিবীর ফুসফুসও বলা হয়। এছাড়া অরণ্যের গাছপালা মেঘ সৃষ্টিতে সহায়তা করে। ফলে এই এলাকায় প্রচুর বৃষ্টিপাত হয়। গ্রীষ্মমণ্ডলীয় বৃষ্টিবহুল অরণ্য বিশ্বের তাপমাত্রা কমাতে জোরালো ভূমিকা রাখে বলে বৈশ্বিক উষ্ণতা নিয়ন্ত্রণে থাকে। জীববৈচিত্র্যের জন্যও রেইন ফরেস্ট খুবই গুরুত্বপূর্ণ। জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণের অন্যতম রক্ষাকর্তা হচ্ছে এই বৃষ্টিবহুল অরণ্য। দক্ষিণ আমেরিকার আমাজন, ইন্দোনেশিয়ার দ্বীপপুঞ্জ, কঙ্গো অববাহিকা, ভারত, মিয়ানমার, মধ্য আমেরিকা ও ফিলিপাইনের বনাঞ্চলগুলো গ্রীষ্মমণ্ডলীয় বৃষ্টিবহুল অরণ্য বা ট্রপিক্যাল রেইন ফরেস্ট। প্রায় রেইন ফরেস্টই বিষুবরেখার নিকটবর্তী অঞ্চলে অবস্থিত। এখানকার তাপমাত্রা ২০ থেকে ৩০ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেড। রেইন ফরেস্ট এলাকাতে সবচেয়ে বেশি বৃষ্টিপাত হয়। যার পরিমাণ বার্ষিক ২৫০ থেকে ৪৫০ সেন্টিমিটার পর্যন্ত। এ অরণ্যে খুব ঘনভাবে বৃক্ষের জন্ম ও বৃদ্ধি হয়। বৃষ্টিপাতের কারণে বৃক্ষের ওপরের শাখাগুলো এত ঘনভাবে জন্মায় যে, তাতে বায়ু চলাচল প্রায় বন্ধ হয়ে যায়। বৃক্ষের ঘন উপরিভাগের ফলে সূর্যালোক অরণ্য ভূমিকে স্পর্শ করতে পারে না। এ জন্য অরণ্যের নিম্নভূমিতে গাছ-গাছড়া বিশেষ জন্মায় না। বৃষ্টিবহুল অরণ্য দীর্ঘতর একটি আচ্ছাদান তৈরি করে যাকে বলা হয় চাদোয়া। ওপরের চাদোয়াটি ভূমি থেকে ২০ অথবা ৪০ মিটার কিংবা তার চেয়েও বেশি উঁচু হতে পারে। এটিকে বলা হয় ওপরের চাদোয়া। ছোট ছোট বৃক্ষ দিয়ে তৈরি নিচের চাদোয়া। এসব অরণ্যের মাটির স্তর খুব পাতলা। দক্ষিণ আমেরিকা, আফ্রিকা এবং এশিয়ায় বৃষ্টিবহুল অরণ্যের বিশাল এলাকা রয়েছে। প্রতিটি এলাকা একই ধরনের। কিন্তু প্রতিটিরই আলাদা আলাদা গাছপালা ও প্রাণী রয়েছে। বিশ্বের অন্যান্য অরণ্যের তুলনায় গ্রীষ্মমণ্ডলীয় বৃষ্টিবহুল অরণ্যসমূহে জীববৈচিত্র্যের সংখ্যা অনেক বেশি। মাত্র কয়েক দশক আগেও বিশ্বভূমির ৬ শতাংশ এলাকাজুড়ে গ্রীষ্মমণ্ডলীয় বৃষ্টিবহুল অরণ্যে বিস্তৃত ছিল। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনক হলেও সত্য, মানুষের নির্বিচার ধ্বংসের কারণে বর্তমানে তা অর্ধেক অর্থাৎ ৩ শতাংশ নেমে এসেছে। ধ্বংসের এ ধারা অব্যাহত থাকলে আশঙ্কা করা হচ্ছে আগামী কয়েক দশকের মধ্যে বৃষ্টিবহুল অরণ্য বা রেইন ফরেস্ট বলতে কোনো কিছু অবশিষ্ট থাকবে না।

সূত্রঃ দৈনিক মানব কণ্ঠ  ০১/০৯/২০১৩

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Discover more from EnvironmentMove.earth

Subscribe now to keep reading and get access to the full archive.

Continue reading

Verified by ExactMetrics