নগরীর বাসযোগ্যতা ফিরিয়ে আনতে পরিবেশবান্ধব উন্নয়ন কর্মকাণ্ড শুরুর দাবি
ঢাকা মহানগরী বিশ্বের সবচেয়ে অবসবাসযোগ্য নগরীর তালিকায় দ্বিতীয়। এর জন্য দায়ী মূলত বৃটিশ শাসনামলে গড়ে উঠা ও পাকিস্থানী সামরিক আমলে বিকশিত অঘোষিত তিনটি নীতি। এগুলো হল- কেন্দ্রীভূত অর্থনৈতিক কর্মকান্ড, বৃহত্তর জনগোষ্ঠীকে পরিকল্পনার আওতা বহির্ভূত রেখে মুষ্টিমেয় মানুষের বিশেষ সুবিধাকে অগ্রাধিকার দিয়ে পরিকল্পনা গ্রহণ এবং পরিবেশ ও প্রাকৃতিক ইকোসিস্টেমকে অর্থনৈতিক পরিকল্পনা ও ব্যবস্থাপনায় যথাযথভাবে অন্তর্ভূক্ত না করা। নগরীর বসবাসযোগ্যতা ফিরিয়ে আনতে আমাদের সকল উন্নয়ন কর্মকান্ডে পরিবেশ ও প্রাকৃতিক ইকোসিস্টেমসহ গণমানুষের সুবিধার কথা সর্বাগ্রে বিবেচনা করতে হবে। আজ ০৫ জুন ২০১৫ বিশ্ব পরিবেশ দিবস উপলক্ষ্যে ঢাবির শামসুল হক মিলনায়তনে সকাল ১১টা পরিবেশ বাঁচাও আন্দোলন (পবা) ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় পরিবেশ সংসদের যৌথ উদ্যোগে আয়োজিত গোলটেবিল বৈঠকে বক্তারা উক্ত অভিমত ব্যক্ত করেন।
পবার যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক ডা: লেলিন চৌধুরীর সভাপ সভাপতিত্বে গোলটেবিল বৈঠকে বক্তব্য রাখেনচেয়ারম্যান পবার আবু নাসের খান, আহসান উল্লাহ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. এম এম সফিউল্লাহ, পবার সহ-সম্পাদক স্থপতি শাহীন আজিজ, সমন্বয়কালী আতিক মোরশেদ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশ সংসদের সাধারণ সম্পাদক হাসান। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশ সংসদের প্রতিষ্ঠাতা ও সাবেক সভাপতি মো: শাহীন রেজা রাসেল।
বক্তারা বলেন, আমাদের জিডিপি ভিত্তিক অর্থনৈতিক উন্নয়ন দ্রুত বৃদ্ধি পাচ্ছে, কিন্তু পরিবেশ বিপর্যয়ের কারণে মানুষের জীবনমান ও জনস্বাস্থ্য হুমকির মুখে পড়ছে। এমনকি দীর্ঘস্থায়ী অর্থনৈতিক উন্নয়নও পরিবেশ বিপর্যয়ের কারণে হুমকির সম্মুখীন হচ্ছে। ঢাকা মহানগরীর মতো সারা বাংলাদেশ মানুষ ও প্রাণীকূলের বসবাস ও ব্যবহারের অনুপযোগী হয়ে যাচ্ছে। এমতাবস্থায় মানুষের জীবনমান উন্নয়নভিত্তিক অর্থনৈতিক উন্নয়ন ও পরিবেশ বিপর্যয় রোধ একসূত্রে কিভাবে গাঁথা যায় তার কর্মপন্থা নির্ধারণের চূড়ান্ত সময় এসেছে।
এক্ষেত্রে নিন্মলিখিত বিষয়গুলো বিশেষ বিবেচনার দাবী রাখে-
সারা বাংলাদেশের জন্য গ্রাম, নগর ও অঞ্চল পরিকল্পনাসহ এগ্রো ইকোলজিক্যাল জোন সমন্বয়ে “ভূমি ব্যবহার মহাপরিকল্পনা” করা।
সকল মানুষের জন্য তবে বিশেষভাবে নি¤œ আয়ের মানুষের পরিকল্পনার বলয়ে নিয়ে এসে পরিকল্পনা করা। সারাদেশে পরিকল্পিত আবাসন ব্যবস্থা গড়ে তোলা।
পানি ব্যবস্থাপনায় গুরুত্ব দিয়ে অর্থনৈতিক উন্নয়ন পরিকল্পনা করা।
সমগ্র বাংলাদেশে ভূমি ব্যবস্থাপনা ভূমি ব্যবহার পরিকল্পনা ও তার বাস্তবায়ন কৌশল নির্ধারণ করা।
ঢাকা শহরের ভ’-গর্ভস্থ ও ভ’-উপরিস্থ সকল অবকাঠামো ও সম্পদের জন্য ত্রিমাত্রিক মহাপরিকল্পনা করা। অন্য সকল অবকাঠামো ও উন্নয়ন পরিকল্পনা এই মহাপরিকল্পনার ভিত্তিতেই করা।
পরিবেশ বান্ধব শক্তি বৃদ্ধির কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করা
শুধু বিদ্যুৎ উৎপাদনে নয় বিদ্যুৎ শক্তির সর্বোত্তম ব্যবহারের দিকেও গুরুত্ব দিতে হবে।
বিদেশ ফেরৎ জনগোষ্ঠীকে কিভাবে উপযুক্তভাবে উৎপাদন খাতে কাজে লাগানো যায় তার পরিকল্পনা করা
মানবসন্তানকে মানবসম্পদে রূপান্তরের জন্য “মানব সম্পদ উন্নয়ন মহাপরিকল্পনা” করা।
বিজ্ঞান গবেষণা কাউন্সিল যাতে জাতীয়ভাবে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি গবেষণায় দিক নির্দেশনা দিতে পারে সেজন্য বিশ্ববিদ্যালয়, গবেষণা প্রতিষ্ঠান এবং শিল্প প্রতিষ্ঠানকে সমন্বয় করে একটি “বিজ্ঞান গবেষণা কমিশন” গঠন করা। গবেষণায় ‘রিভার্স টেকনোলজি’ ইনভেনশনকে প্রাধান্য দেয়া।
পরিবেশ দূষণ করেনা সে ধরণের শিল্পসমূহকে নানাভাবে প্রণোদনা দেয়া।
রেল ষ্টেশন ও নৌঘাট কেন্দ্রিক কৃষিপণ্যের জন্য হিমাগার ও গোদামের ব্যবস্থা করা।
সরকারি বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ে বা প্রতিষ্ঠানে মানসম্মত পাবলিক টয়লেট তৈরি ও ব্যবস্থাপনার জন্য বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ভিত্তিক বরাদ্দ যেমন যোগাযোগ মন্ত্রণালয়, শিক্ষা মন্ত্রণালয় ইত্যাদি
সকল শিল্প প্রতিষ্ঠান, যেগুলো পরিবেশ দূষণ করে তাদেরকে পরিবেশবান্ধব করতে হবে, কিন্তু যতদিন পরিবেশবান্ধব হয়নি ততদিন ‘পরিবেশ কর’ আরোপ করতে হবে। মুনাফারও একটা অংশ পরিবেশ খাতের ক্ষতিপূরণ হিসাবে আদায় করা যেতে পারে।
নতুন সব শিল্পকারখানা যেগুলো আগামী দিনে গড়ে উঠবে সেগুলোকে পরিবেশবান্ধব নিশ্চিত করতে হবে। ইটিপি নতুন সব কলকারখানায় বাধ্যতামূলক করতে হবে। নইলে শিল্প কারখানার নিবন্ধন/অনুমোদন না দেয়া।
পরিবেশ আদালতকে সক্রিয় করতে হবে। পরিবেশ আদালতে মামলা করা প্রক্রিয়া সহজ করতে হবে। পরিবেশের ক্ষতি বিষয়ে যেকোন সংক্ষুব্ধ ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান যেন পরিবেশ আদালতে মামলা করতে পারেন সেটা নিশ্চিত করা দরকার।
পরিবেশ আইন, জলাধার আইনসহ পরিবেশের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট/সম্পর্কিত আইন লঙ্ঘনের দায়ে ক্ষতিপূরণের হার বৃদ্ধি ও আদায় নিশ্চিত করতে হবে।
কৃষিতে রাসায়নিক সার ও কীটনাশকের ব্যবহার নিরুৎসাহিত করতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে।
ট্রাফিক প্ল্যানিং বিভাগ জরুরী ভিত্তিতে করতে হবে।
পর্যাপ্ত গণপরিবহনের ব্যবস্থা ও প্রাইভেটকারকে নিরুৎসাহিত করা। শুধু গণপরিবহনেই স্বল্প মূল্যের গ্যাস ব্যবহার করা যেতে পারে। সব ব্যক্তিগত গাড়ির উপর কনজেশন চার্জ এবং আমদানির সময় আলাদাভাবে পরিবেশ কর আরোপ করতে হবে। বাই সাইকেলসহ গণপরিবহন আমদানি শুল্ক কমাতে হবে।
খাদ্য উৎপাদনের জমিতে তামাক চাষ নিরুৎসাহিত করতে প্রয়োজনীয় নীতিমালা পাস করা দরকার। কৃষি জমিতে তামাক চাষের উপর পরিবেশ কর আরোপ করা যেতে পারে।