
নাম উৎসঃ ঘূর্ণিঝড় "ফাইলিন" এবং অন্যান্যরা
সাইফুর রহমান সুমন
প্রতিনিয়ত রুপ বদলাচ্ছে প্রকৃতি, দেখাচ্ছে তার বিধ্বংসী রুপ। বাতাসের স্তরে স্তরে জমছে দূষণ। তারই জের ধরে পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্তে বিরুপ আকার ধারণ করছে জলবায়ু, দেখা দিচ্ছে প্রাকৃতিক দুর্যোগ। বিভিন্ন মহাদেশের পাশাপাশি ভারত মহাসাগরেও ঘনঘন আঘাত হানছে ঘূর্ণিঝড়। গত ১২ তারিখ ভারতের ওড়িশা ও অন্ধ্রপ্রদেশে আঘাত হানে ঘূর্ণিঝড় ‘ফাইলিন’ (Phailin)। ওড়িশা ও অন্ধ্রপ্রদেশের সমুদ্রতীরবর্তী এলাকা নিমিষেই অন্ধকারে আচ্ছন্ন হয়ে পড়ে। ঘটে ব্যাপক প্রাণহানি সহ স্থায়ী অস্থায়ী স্থাপনার ক্ষতি। ঘূর্ণিঝড়ের চরিত্র পর্যবেক্ষেণে বাংলাদেশসহ আটটি দেশ নিয়ে গড়া হয়েছে কমিটি। এই আটটি দেশসমূহ হচ্ছে- বাংলাদেশ, ভারত, মালদ্বীপ, মায়ানমার, ওমান, পাকিস্তান, শ্রীলংকা ও থাইল্যান্ড।
ঘূর্ণিঝড় ‘ফাইলিন’ এর নামকরণ পূর্বেই নির্ধারণ করা ছিল। ফাইলিন একটি ইন্ডিয়ান ট্রপিক্যাল সাইক্লোন। মহাসেনের পর আঘাত হানবে ঘূর্ণিঝড় ‘ফাইলিন’ তারপর পর্যায়ক্রমে আঘাত হানা ঘূর্ণিঝড়গুলোর নাম হলো_ হেলেন, লহর, মাদী, নানাউক, হুদহুদ, নিলুফার, প্রিয়া, কোমেন, চপলা, মেঘ, ভালি, কায়নত্দ, নাদা, ভরদাহ, সামা, মোরা, অক্ষি প্রভৃতি।উত্তর ভারতীয় মহাসাগর থেকে সৃষ্ট ঘূর্ণিঝড়গুলোর নামকরণ করে থাকে ‘এস্কেপ’ নামে একটি সংস্থা। বাংলাদেশ, ভারত, মালদ্বীপ, মিয়ানমার, পাকিস্তান, শ্রীলংকাসহ এ অঞ্চলের বেশ কিছু দেশ থেকে নাম প্রস্তাব করা হয়। বাংলাদেশের ভবিষ্যতের জন্য যে নামগুলো ঠিক করা আছে সেগুলো হলো_ হেলেন, চাপালা, অক্ষি, ফানি। ‘ফাইলিন’ শব্দটা এসেছে থাই শব্দ ‘সেফাইয়ার (Sapphire)’ থেকে, সেফাইয়ার এক ধরনের থাইল্যান্ডীইয় রত্ন পাথর। এর থেকে নামকরণ করা হয় ফাইলিনের। কিভাবে আসল এই সব ঘূর্ণিঝড়ের নাম। ঘূর্ণিঝড়ের নামকরণ নিয়ে কৌতূহল সবারই। আগামী ২০১৬ সাল পর্যন্ত ঘূর্ণিঝড়ের নাম ঠিক করা আছে। প্রবল বেগে ঝোড়ো হাওয়া। সঙ্গে তুমুল বৃষ্টি। মাঝে মাঝে বাতাসের গর্জন। ঝড়ের দাপটে ফুলে উঠছে সমুদ্র। আছড়ে পড়ছে ঢেউ। তছনছ হয়ে যাচ্ছে গাছপালা, ঘরবাড়ি। এটাই ঘুর্ণিঝড়ের চেনা চেহারা। কিন্তু দেখতে এক হলেও প্রতিটি ঘূর্ণিঝড় এক নয়। প্রতিটির চরিত্র আলাদা। ঝড়ের কেন্দ্র, বাতাসের গতিবেগ, প্রতিবার বদলে যায় সবকিছু। সেকারণেই প্রতিটি ঘূর্ণিঝড়ের আলাদা আলাদা নাম। প্রতিটি ঝড়ই যেহেতু আলাদা, তাই তাদের নামকরণও হয় ধ্বংসাত্মক ক্ষমতা অনুসারে। মজার ব্যাপার হচ্ছে, নামগুলোর বেশির ভাগই নারীদের নামে। যেমন রিটা,ক্যাটরিনা, নার্গিস, সিডর, রেশমী, বিজলী। আমেরিকায় যে প্রলয়ঙ্করী ঝড় আঘাত হেনেছে, সেই স্যান্ডির নামও নারীর। আগে শুধু নারীদের নামে ঘূর্ণিঝড়গুলোর নামকরণ করা হলেও ১৯৭৯ সাল থেকে পুরুষের নাম অন্তর্ভুক্ত হয় এবং বর্তমান তালিকায় সমানভাবে পর্যায়ক্রমে মহিলা ও পুরুষের নাম রয়েছে। ঝড় যেহেতু মৃত্যু ও ধ্বংসের সঙ্গে জড়িত, তাই কোনো নাম দ্বিতীয়বার ব্যবহার করা হয় না। অতীতে ঝড়ের নামকরণ করা হতো অক্ষাংশ- দ্রাঘিমাংশের ওপর ভিত্তি করে। কিন্তু এটি প্রকাশের ক্ষেত্রে জটিলতা দেখা দেয়। যেমন ৩ ডিগ্রি উত্তর অক্ষাংশ ও ৭২ ডিগ্রি পূর্ব দ্রাঘিমাংশের ঝড়টি এখন বাংলাদেশের দিকে ধেয়ে আসছে এটি বলার চেয়ে ‘ঘূর্ণিঝড় মহাসেন ধেয়ে আসছে’ বলা অনেক সহজ। ঘূর্ণিঝড়ের আনুষ্ঠানিক নাম রাখা শুরু হয় ১৯৪৫ সাল থেকে। আবহাওয়াবিদ ও সাধারণ মানুষের মধ্যে ঘূর্ণিঝড় বিষয়ক তথ্যের সহজ যোগাযোগের জন্যই এই নামকরণ। এরপরের ঝড়গুলির নামকরণের জন্য ইতিমধ্যেই আরও বত্রিশটি নাম জমা দিয়েছে আটটি দেশ।
বিভিন্ন প্রাকৃতিক দুর্যোগ সংঘটিত হওয়ার সংখ্যা দিন দিন বেড়ে চলেছে। সারা বিশ্বব্যাপী জলবায়ু পরিবর্তনের নমুনা আশঙ্কাজনকভাবে দেখা দিচ্ছে। পূর্বের তুলনায় প্রাকৃতিক দুর্যোগসমুহের বিধ্বংসীর মাত্রা অনেক বেড়ে গিয়েছে। এখনই জরুরী ভিত্তিতে কার্যকরী পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। সামীট লেভেল থেকে শুরু করে রুট লেভেল পর্যন্ত এর বাস্তবায়ন করতে হবে। যদি এর কালক্ষেপণ করা হয় তবে উপকূলবর্তী মানুষ মৃত্যুর হার দিন দিন আরো বেড়ে যাবে, গরিব তার ফসলি জমি ও বাস্তভিটা হারিয়ে উদ্বাস্তু হয়ে যাবে।