নির্জন নিরালায়!!
মাহবুব রেজওয়ান সানি
কর্মব্যাস্ত যান্ত্রিক সমাজে যন্ত্রের মতো চলতে চলতে মাঝেই মাঝেই আমরা হাপিয়ে উঠি। তখন হয়তো মনে হয় লোকালয় থেকে বহুদূরে মোবাইল, ইন্টারনেটের নেটওয়ার্কের বাইরে গিয়ে নিশ্চিন্তে যদি কয়েকটা দিন কাটিয়ে আসতে পারতাম!! কোন সাহিত্যিক ভাবনা নয়। আমরা যারা শহুরে জীবনে অভ্যস্ত, তাদের সকলেরই বছরের কোন না কোন সময় এমনটা মনে হওয়াই স্বাভাবিক! ‘নেটওয়ার্কের বাইরে’ চলে যাওয়া নিয়ে যখন কথা উঠলো, তার মানে নিশ্চয়ই বনে জঙ্গলে গিয়ে সাধু-সন্ন্যাসীদের মতো থাকাটাও তো আমাদের ‘শহুরে’ মানুষের সাজে না। তবে হ্যাঁ, পৃথিবীতে এমন একটি বাড়ি আছে, যেখানে আপনি সবার থেকে দূরে গিয়ে কিছুটা দিন নিশ্চিন্তে কাটিয়ে আসতে পারেন। এই বাড়িটিকে বলা হয় ‘পৃথিবীর সবথেকে নির্জন বাড়ি’।
‘এলিওয়ি’, আয়ারল্যান্ডের একটি ছোট্ট দ্বীপ। ছোট্ট এই দ্বীপে সবুজের মাঝে একটিমাত্র বাড়ি। সেই বাড়িতে নেই কোন টেলিফোনের তার, নেই ইন্টারনেট সংযোগ। আর কোন বাড়িও কিন্তু নেই এই দ্বীপে। এমনকি কোন মানুষও কিন্তু স্থায়ীভাবে বাস করে না দ্বীপটিতে। সমুদ্রের গর্জন, উত্তাল বাতাস, মাথার উপর সুবিশাল আকাশ আর দ্বীপটির স্থানীয় বাসিন্দা ‘পাফিন পাখি’ ই শুধু রয়েছে আপনাকে সঙ্গ দেবার জন্য।
এমন জায়গায় বাড়ি বানানোর কি দরকার ছিল! আসলে বাড়িটিকে একটি স্থানীয় রিসোর্ট বলা চলে। ১৯৫০ সালে ‘এলিওয়ি হান্টিং অ্যাসোসিয়েশন’ ওই দ্বীপে অস্থায়ীভাবে থাকার জন্য একটি বড় বাড়ি তৈরি করে তাদের সদস্যদের জন্য। মূলত দীর্ঘ ঠোঁটের পাফিন পাখি শিকারিরা শিকারের মৌসুমে এ বাড়িটি থাকার জন্য ব্যবহার করেন। জলবায়ুগত কারণে দ্বীপটি পাফিন পাখিদের প্রজননের জন্য খুবই উপযুক্ত।
এইরকম একটি দ্বীপে পাখির মাংস ছাড়া অন্য কোন খাবার আপনার কপালে জুটবে না। এমনকি বিশুদ্ধ খাবার পানির কোন উৎসও কিন্তু দ্বীপটিতে নেই। একসময় এ জায়গায় পাফিন পাখি শিকার, পশু পালন ও মাছ ধরার কাজে বসবাস করত পাঁচটি সমৃদ্ধ পরিবার। কিন্তু সেটিও প্রায় ৩০০ বছর আগের কথা! পাখি শিকারের অনুমতি নিয়ে চাইলে ঘুরে আসতে পারেন ‘নির্জন বাড়ি’ থেকে। পাখিরা না হয় থাকলো তাদের নিজেদের মনের সুখে। আর আপনি থাকলেন ‘নেটওয়ার্ক’ এর একদম বাইরে!