নেপালের পাখি ভাই — কাকেদের সাথে যার সন্ধি
রাযীন আশরাফ
মাইক হাতে যুবকটি মঞ্চে উঠে কাকের মত কা কা স্বরে ডাকলেন। কিছুক্ষণ পর, শত শত কাক উড়ে এসে গাছে ও ছাদের উপর এসে বসলো। ‘কাক সম্মেলন’ এর দর্শকরা হতভম্ব।
নেপালের “ছরিদাদা” বা “পাখি ভাই” গৌতম সপ্তকা এরপর আরও কিছু শব্দ করলেন। কাকগুলো নীরব হয়ে গোধূলির আকাশে উড়ে চলে গেল।
“আমি তাদের এসে, বসে, চুপ হয়ে চলে যেতে বললাম,” সপ্তকা জানালেন। সপ্তকা ৩০ বছর বয়সী স্কুল পালানো যুবক যিনি ২০০৫ থেকে ‘কাক সম্মেলন’ এর মতো অনুষ্ঠান করে ছাত্রছাত্রীদের আনন্দ দেন এবং প্রকৃতি ও পাখি সংরক্ষণে সচেতনতা গড়ে তোলেন।
তিনি ২৫১ রকম পাখির আওয়াজ অনুকরণ করতে পারেন এবং তিনি আশা করেন যে তাঁর প্রতিভা গিনেস বিশ্ব রেকর্ডে স্থান পাবে। তাঁর কথোপকথনের সংবাদ সবার মাঝে ছড়িয়ে দিতে তিনি নেপালি গানের সাথে বকের আওয়াজ মিশিয়ে একটি অ্যালবাম বের করতে চান।
এ ব্যাপারে তিনি বলেন “যেসব পাখি বিলীন হয়ে যেতে পারে আমি তাদের ডাক রেকর্ড করে রাখতে চাই”।
সংরক্ষণবিদরা বলছেন, নেপালের ৮৭১টি পাখি প্রজাতির মধ্যে ১৪৯টি বিলোপ হয়ে যেতে পারে। যদিও কাক এই হুমকির মধ্যে পরে না,তবে তারা দ্রুত হারিয়ে যাচ্ছে।
নেপালের ৭৫টি জেলার মধ্যে ৬৬টি জেলায় সপ্তকা ৩২০০ এরও বেশি অনুষ্ঠান করেছেন। তাঁর এই প্রচেষ্টার জন্য বন্যপশু সংরক্ষণকারী প্রতিষ্ঠান WWF এর নেপাল শাখা তাঁকে পুরস্কৃতও করেছেন।
রাজধানী কাঠমুন্ডুতে তাঁর সর্বশেষ অনুষ্ঠানের সময় হিন্দুদের কাক উৎসবের সাথে মিলে গেছে। হিন্দুধর্মে কাক হল যমরাজ বলিরাজার দূত এবং তারা স্বর্গ থেকে বার্তা বয়ে আনে।সপ্তকা যেমনটা বলছিলেন, “তারা পরিবারের সুসংবাদ বা দুঃসংবাদের বার্তা বয়ে আনে”।
ধর্মীয় তাৎপর্যের বাইরেও কাক পরিবেশ পরিষ্কার রাখতে সাহায্য করে।
নেপাল পাখি সংরক্ষণ প্রতিষ্ঠানের নেতা সুশীলা চট্টোপাধ্যায় নেপালি যেমনটি বললেন “এই গুরুত্বপূর্ণও পাখি দ্রুত মারা যাচ্ছে কারণ তারা যেই পোকামাকড় ও বীবর খায় সেগুলোর অপর কীটনাশক প্রয়োগ করা হচ্ছে,” ।
সপ্তকা এক টিভি অনুষ্ঠানে পাখিদের অনুকরণ করে দর্শকদের মনে ছাপ ফেলেছেন।অনুষ্ঠানটি দেখার পরে সমাজবিজ্ঞানের ছাত্র আশিস উপ্রেতি বললেন “আমি জানি কেন আমাদের প্রকৃতি ও পাখি সংরক্ষণ করতে হবে, আমি আগে কখনও এত কাক দেখিনি।”