
নয়নের রক্ষক নাকি ভক্ষক!!!!!!
মনিজা মনজুর
“নীলাঞ্জনা..ওই নীল নীল চোখে চেয়ে দেখ না”!! “চোখ যে মনের কথা বলে”! চোখ নিয়ে গান-কবিতার অন্ত নেই! ভাবছেন প্রানীজগৎ-পরিবেশ বাদ দিয়ে চোখ সম্পর্কিত গান-কবিতা নিয়ে কেন এত কথা হচ্ছে? বলছি…
নীলাঞ্জনা তার মনের কথা মুখে না বললেও তার নয়নচোরা চাহনিতে প্রিয়জনকে মুগ্ধ করেন, কেউবা শখের বশে রঙ্গিন চোখের মায়ায় আকর্ষনীয় হয়ে উঠেন, কেউ আবার কান ধরে নাকের ডগায় বসে থাকা বিরক্তিকর চশমার হাত থেকে মুক্তি পেতে ব্যবহার করেন কৃত্রিম অক্ষিগোলক। যাকে আমরা চিনি কনট্যাক্ট লেন্স হিসেবে।
কিন্তু আপনি কি জানেন?এই কনট্যাক্ট লেন্স ব্যাবহার করে মায়াহরিণীর মত অক্ষিযুগলের অধিকারী হওয়াটাই কাল হয়ে দাঁড়িয়েছে তাইওয়ানের ছাত্রী লিয়ান কাও এর বেলায়!! টানা ছয় মাস কনট্যাক্ট লেন্স চোখে রেখেছিলেন!! ধীরে ধীরে তার সমগ্র অক্ষিগোলক দুটি গ্রাস করে নিয়েছে ‘অ্যাকানথামিবা’(Acanthamoeba)নামক এককোষী অণুজীব।
দীর্ঘদিন লেন্স পরে থাকার কারণে অ্যাকানথামিবা বেড়ে ওঠার যথেষ্ট সুযোগ পায়। ব্যাকটেরিয়া কনট্যাক্ট লেন্স এবং চোখের মধ্যবর্তী দূরত্বে অক্সিজেনের স্বল্পতার কারণে এপিথেলিয়াল টিস্যুর আবরণকে ধ্বংস করে, ক্ষত সৃষ্টি করে, যেখানে সে সহজে কর্ণিয়ায় আক্রমন করে পারে এবং বংশবিস্তার করে থাকে। ব্যাকটেরিয়াকে খাওয়ার জন্য অ্যাকানথামিবা কর্ণিয়াকে খুঁড়তে শুরু করে!! চিকিৎসা বিজ্ঞানের ভাষায়, রোগটিকে বলা হয় ‘অ্যাকানথামিবা কেরাটিটিস’। রোগটির উপসর্গের মধ্যে আছে-চোখ ব্যাথা, চোখ লাল হয়ে যাওয়া, চোখে অস্পষ্ট দেখা।
২৩ বছর বয়সী কাও ছয় মাসে একবারের জন্যও কনট্যাক্ট লেন্স খোলেন নি। এমনকি তিনি সাঁতারের সময়ও কনট্যাক্ট লেন্স পড়ে সাঁতার কাটতেন! অথচ,সুইমিং পুল প্রচুর পরিমাণ অ্যাকানথামিবার আশ্রয়স্থল। অসতর্কতাই চিরতরে কেড়ে নিয়েছে এই মেয়েটির দৃষ্টিশক্তি!
তাইপে এর ওয়াং ফাং হাসপাতালের চক্ষু বিশেষজ্ঞ ডাঃ উ জিয়ান লিয়াং এর মতে, ‘কনট্যাক্ট লেন্স ব্যবহারকারীরা উচ্চ ঝুঁকিপূর্ন গোষ্ঠীর অন্তর্ভূক্ত যারা খুব সহজেই চোখের যে কোনো রোগে আক্রান্ত হতে পারেন’। প্রাথমিক পর্যায়ে ডাক্তারের দেওয়া ব্যবস্থাপত্রে রোগ সেরে উঠতে পারে, আর গুরুতর অবস্থায়, কর্ণিয়া ট্রান্সপ্লান্টেশন এর মাধ্যমে চোখকে বাঁচানো যেতে পারে। তবে এক্ষেত্রে মিশ্র সাফল্যের কোথা শোনা যায়, কারণ একবার আপনার আঁখিযুগল ব্যাকটেরিয়া দ্বারা আক্রান্ত হলে তা থেকে ছাড়া পাওয়া মুশকিল।
তাই কনট্যাক্ট লেন্স ব্যবহারকারীদের বলছি, সতর্ক হউন। লেন্স ব্যবহারের আগে ভাল করে হাত ধুয়ে নিবেন, লেন্স চোখে কখনই সাঁতার কাটবেন না এবং গরম পানিতে গোসল করবেন না। প্রয়োজন ছাড়া লেন্স ব্যবহার না করাই ভালো। বিধাতা তার সুন্দর সৃষ্টি অবলোকনের জন্য আপনাকে যে অমুল্য নয়নজোড়া উপহার দিয়েছেন, তা কি এভাবে হারিয়ে যেতে দেয়া যায়?