পরিকল্পনাহীন ঢাবি’র বাগান পরিচর্যা!

  • কাওসার অপূর্ব

কার্জন হল থেকে চারুকলা অনুষদ; কিংবা কলাভবন থেকে টিএসসি; ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকার সর্বত্র এমন সবুজের সমারোহ একটু আলাদা করেই যেন চোখে পড়ে। তবে, বিষ্ময়কর হলেও সত্য অনেকটা পরিকল্পনাহীনভাবেই এগিয়ে যাচ্ছে বিশ্ববিদ্যালয়ের বাগান সংরক্ষণ ও বৃক্ষরোপণ কর্মসূচি। এমনটাই জানালেন উদ্ভিদ বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড: মোহাম্মদ আবুল হাসান।

সংরক্ষিত রেকর্ড থেকে জানা যায়, বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় বৃ্ক্ষায়ন ও সৌন্দর্যবর্ধনের কর্মসূচি বাস্তবায়নে পঞ্চাশের দশকের শুরুতে উপাচার্য ড. জেনকিন্স এর উদ্যোগে আরবরি কালচার সেন্টারের যাত্রা শুরু হয়, যার দায়িত্ব দেয়া হয় উদ্ভিদ বিজ্ঞান এর বিভাগীয় প্রধানকে। এরই ধারাবাহিকতায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আরবরি কালচার সেকশন এবং বৃক্ষায়ন ও সৌন্দর্যবর্ধন কমিটির যৌথ উদ্যাগে প্রতিবছর জুলাই মাসে ক্যাম্পাসে বৃক্ষরোপণ কর্মসূচির আয়োজন করা হয়। প্রতিবছর ঘটা করে এ কর্মসূচি হাতে নেয়া হলেও এটি নানা কারণে বাধাঁগ্রস্ত হয়। কারণগুলোর মধ্যে প্রয়োজনীয় জায়গার অপ্রতুলতা, বাজেট ঘাটতি, বিদ্যমান কমিটির সদস্যদের মতভেদ, পর্যাপ্ত লোকবল সংকট অন্যতম। ড: আবুল হাসান বলেন, ‘সত্যি কথা বলতে, এখন আমাদের কোন পরিকল্পনা নেই। এর কারণ মূলত জায়গার অভাব। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে এখন নতুন করে গাছ লাগানোর কোন জায়গা নেই। তাই নির্দিষ্ট কোন পরিকল্পনা ছাড়াই আমরা কাজ করছি।’

আরবরি কালচার সেকশনের টেকনিক্যাল কর্মকর্তা ফেকুলাল ঘোষ কমলকে বাজেটের ব্যপারে জানতে চাওয়া হলে তিনি বলেন, ‘আমাদেরকে দুই লক্ষ টাকা দেয়া হলেও এটা প্রয়োজনের তুলনায় খুবই কম। এবার আমরা পাঁচ লক্ষ টাকার জন্য আবেদন করেছি। দেখা যাক কি হয়!’

তিনি আরও বলেন, ‘আমাদের পরিকল্পনার কোন নির্দিষ্ট রূপরেখা দেয়া নেই। আমরা নিজেরাই কি কি গাছ লাগাবো সেটার একটা লিস্ট করে কাজ করি। মূলত আমাদের আবহাওয়া ও মৌসুমকে মাথায় রেখে গাছ লাগাতে হয়।’

বার্ষিক বৃক্ষরোপণ কর্মসূচির শুরুতে যে লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ হয় তা বাস্তবায়িত করা সম্ভব হয় না। সংশ্লিষ্ট রেকর্ড অনুযায়ী ২০১১ সালে প্রায় এক হাজার ও ২০১২ সালে প্রায় পাচঁশত বনজ, ফলজ, ঔষধি ও সৌন্দর্যবর্ধনকারী গাছের চারা লাগানোর ঘোষণা থাকলেও তা বাস্তবায়িত হয়নি। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০১২-১৩ অর্থবছরের মূল বাজেট বরাদ্দে আরবরি কালচারের জন্য বরাদ্দ রাখা হয়েছে ৩৩ লাখ ৯ হাজার টাকা। যেখানে বাগান রক্ষনাবেক্ষণে রয়েছে ৫০ হাজার টাকা। অন্যদিকে বিশ্ববিদ্যালয় ব্যয় খাতে বৃক্ষায়ন ও সৌন্দর্যবর্ধনে ২ লক্ষ টাকা বরাদ্দ রয়েছে। এ ব্যাপারে জানতে চাওয়া হলে আরবরি কালচার সেকশনের তত্ত্বাবধায়ক উদ্ভিদ বিঞ্জান বিভাগের আরেকজন শিক্ষক ড. মিহির লাল সাহা বলেন, ‘সঠিকভাবে পুরো কার্যক্রম ব্যবস্থাপনায় বরাদ্দকৃত বাজেটে কাজ হচেছ না। প্রয়োজনীয় জিনিষপত্র ও শ্রমব্যয় বৃদ্ধি পাওয়ায় বরাদ্দকৃত বাজেট অপর্যাপ্ত হয়ে পড়ছে। নতুন চারা লাগানোর স্থান সংকুলান না হওয়ায় আমরা পূর্বে রোপণকৃত বৃক্ষগুলোর যত্ন নেয়ার পাশাপাশি সৌন্দর্যবর্ধনের কাজ করে যাচ্ছি।’

অপরদিকে বাগানমালী বিন্দু ও এরশাদ জানান, গত ২ বছরে নতুন কোন চারা কেনা হয়নি। যা লাগানো হয়েছে প্রায় সবগুলোই আরবরি কালচারের নেট হাউস এ তৈরী। এক্ষেত্রে চারা কেনার অর্থ ব্যয় হয়েছে সামগ্রিক পরিচর্যায়।

শুরুর দিকে পুরো বিশ্ববিদ্যালয়ের বৃক্ষায়নের ও সৌন্দর্যবর্ধনের সামগ্রিক দায়িত্ব ছিল আরবরি কালচার সেকশনের। কিন্তু পরবর্তীতে বিভিন্ন কারণে উপাচার্য ভবন, হল, টিচার্স কোয়ার্টার ও প্রশাসনিক ভবনের বাগান, কলাভবন এই সেন্টারের দায়িত্ব থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। বর্তমানে এ দপ্তরের দায়িত্বে আছে কেবল মেডিক্যাল সেন্টার, সায়েন্স এনেক্স, কার্জন হল চত্বর এবং ক্যাম্পাসের সড়কগুলোর ডিভাইডার। যদি ও ক্যাম্পাসের জীর্ণ ও ঝড়ে পড়ে যাওয়া গাছ কাটা, অপসারণ ও নিলামে বিক্রির দায়িত্ব এ দপ্তরভুক্ত। এ জন্য রয়েছে ৬ সদস্য বিশিষ্ট নিলাম-বিক্রয় কমিটি। এই বিষয়ে সেকশনের টেকনিক্যাল অফিসার কমল জানান, অনেক সময় দপ্তরের অনুমতি ছাড়ায় চলে বৃক্ষনিধন। পর্যাপ্ত তত্ত্বাবধানের অভাব থাকায় এবং হল প্রশাসনে প্রভাবশালীদের মদদে এ অপতৎপরতা চলে। উল্লেখ্য একজন কর্মকর্তাসহ মাত্র বিশজন কর্মচারী নিয়ে চলছে এই সেন্টার। এছাড়া রয়েছে ৮-সদস্য বিশিষ্ট উপদেষ্টা কমিটি ও ২৭ সদস্য বিশিষ্ট বৃক্ষায়ন ও সৌন্দর্যবর্ধন কমিটি।

বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিটি টিচার্স কলোনীর জন্য একজন করে মালি নিয়োগ দেয়া হলেও তারা ঠিক মতো কাজ করেন না বলে জানালেন বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক ব্যাবসা বিভাগের অধ্যাপক আবু হোসেন সিদ্দিকের স্ত্রী আফরোজা বেগম। ফুলার রোড এলাকার এই বাসিন্দা বলেন, ‘প্রয়োজনের সময় মালিদের খোঁজ করলে তাদের পাওয়া যায় না। তাই আমরা নিজেরাই বাগানের পরিচর্যা করি।’

এনভায়রনমেন্টমুভ.কম(environmentmove.earth)

আরো দেখান

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Discover more from EnvironmentMove.earth

Subscribe now to keep reading and get access to the full archive.

Continue reading

Verified by ExactMetrics