পরিবেশ বান্ধব নয়া জৈবসার উদ্ভাবনঃ আশার কথা শোনালেন ঢাবি গবেষক দল
কৃষি ক্ষেত্রে দারুণ সম্ভাবনাময় এক আবিস্কারের কথা জানিয়েছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এক দল বিজ্ঞানী। কৃষি ক্ষেত্রে রাসায়নিক সার এর উপর নির্ভরশীলতা কমাতে এক ধরনের জৈব-কীটনাশক আবিস্কার করতে সমর্থ হয়েছেন বলে দাবী করছেন তাঁরা। ব্যাকটেরিয়ার গণ বাসিলি (bacillus) প্রজাতির বেটিং এজেন্ট যুগল থেকে তাঁরা এটি উদ্ভাবন করতে সমর্থ হয়েছেন যা টেনারি শিল্পের উন্নয়নেও গঠনমূলক ভূমিকা পালন করবে।
বিজ্ঞানীদের দাবী তাদের এই উদ্ভবন শুধু রাসায়নিক সার এর উপর নির্ভরশীলতা অনেক অংশে কমিয়ে আনবে না বরং আমাদের টেনারি খাতে বিদেশ থেকে বহুলব্যয় আমদানিকৃত রাসায়নিক এর খরচ কমিয়ে আনবে,এবং পরিবেশ দূষণ কমাতে কার্যকারী ভূমিকা পালন করবে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উচ্চতর বিজ্ঞান গবেষণা কেন্দ্রের(কারস) একজন গবেষক আরাফাত আল মামুন এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এর অণুজীববিজ্ঞান বিভাগ এর সদস্যরা জানান নতুন বায়ো বা প্রাণভিত্তিক কীটনাশক একটি ব্যাকটেরিয়ার থেকে উন্নত করা হয়েছে যার নাম বেসিলাস থুরিংগিএন্সিস (Bacillus thuringiensis)
অধ্যাপক মোজাম্মেল হকের নেতৃত্বে এ গবেষণা দলে আরও রয়েছেন প্রফেসর ডঃ সাকিলা নার্গিস খান, আসাদুজ্জামান শিশির , মোঃ নাহিনুর রহমান আকন্দ এবং নুসরাত খন্দকার।
গবেষক মামুনের উদ্ভাবিত এই কীটনাশক বিভিন্ন গাছপালা, বাঁধাকপি ও ফুলকপি সহ বিভিন্ন সবজি উপর পরীক্ষা করা হয়েছে এবং ভাল ফলাফল পাওয়া গেছে বলে জানিয়েছেন জনাব মামুন। তিনি আর বলেন “এই জৈব কীটনাশকের প্রধান তাত্পর্য হলো এটি কৃষিতে রাসায়নিকের ব্যবহার কমিয়ে আনে এবং এতে খাদ্য-শৃঙ্খলে রাসায়নিক দূষণ কমাতে সাহায্য করে ।”
অধ্যাপক মোজাম্মেল হকের মতে,কিছু এনজাইমের প্রতিনিধির বেটিং যুগলের উপর ভিত্তি করে এই আবিষ্কার এবং একই পরিবারভুক্ত Bacillus ব্যাকটেরিয়ার থেকে ডি হেয়েরিং এনজাইমের সম্পর্কে নিশ্চিত করেছে।
প্রথাগত ভাবে টেনারি শিল্পে চামড়া প্রক্রিয়াজাত করণের জন্য অনেক টাকার খরচ করে রাসায়নিক দ্রব্যাদি আমদানি করার হয়। ধারনা করা হচ্ছে এই জৈব কীটনাশক ব্যবহার এর ফলে টেনারি শিল্পে ৫ বিলিয়ন টাকা কমিয়ে আনা যাবে। দেশের চামড়া প্রক্রিয়াকরণের জন্য একটি মহান ভূমিকা রাখবে। এই এনজাইম ডিহেয়েরিং প্রক্রিয়ায় ব্যবহার এর ফলে কিছু বিষাক্ত রাসায়নিক ব্যবহার কম হবে বলে মনে করেন অধ্যাপক মোজাম্মেল।
‘ Proteas এনজাইম ‘ এবং ‘ keratinase এনজাইম ‘ নামে পরিচিত এনজাইম ডিটারজেন্ট হিসাবে শিল্পখাতে ব্যবহার করা যেতে পারে। তিনি আরও বলেন কৃষি সম্প্রসারন অধিদপ্তরের মতে অর্থ বৎসর ২০১২-১৩ সালে রাসায়নিক কীটনাশক ৪৯,০০০ টন আমদানি করা হয়। যার খরচ অনুমান করা হয় ২০ বিলিয়নে।
কারসের এনজাইম প্রযুক্তি বিভাগের সহকারী গবেষণক নাহিনুর রহমান আকন্দ বলেন, হাজারীবাগ টেনারি থেকে দৈনিক ২১,০০০ কিউবিক মিটারের উপর বিষাক্ত অপরিশোধিত তরল রাসায়নিক বর্জ্য বুড়িগঙ্গাতে যায় যা বুড়িগঙ্গা নদীকে হুমকির মুখে ঠেলে দিচ্ছে। কিন্তু এই জৈব কীটনাশক ব্যাবহার এর ফলে তা অনেক কমে আসবে বলে তিনি আশা করেন।
এনভাইরনমেন্টমুভ ডটকম ডেস্ক