পর্বতের সাতকাহন
পাহাড় অপেক্ষাকৃত নিচু আর সবচেয়ে উঁচুগুলোকে বলে পর্বত। তাই মাউন্ট এভারেস্ট, কাঞ্চনজঙ্ঘা এগুলো পর্বত বা পর্বতশৃঙ্গ। আর পাহাড়ের চেয়ে নিচু জায়গাগুলোকে বলে টিলা। পৃথিবীতে অসংখ্য পাহাড়, পর্বত ও টিলা ছড়িয়ে রয়েছে। এগুলোর মধ্যে আবার কতগুলো বিখ্যাত স্বকীয় রূপে। পৃথবীর এমন কয়েকটি সুন্দর পর্বতের গল্প লিখেছেন মোস্তাক চৌধুরী
অমা দেবলাম : খুব সুন্দর এই পর্বত হিমালয় পর্বতমালাতেই অবস্থিত। মাউন্ট এভারেস্টের পূর্বেই অবস্থিত এই পর্বত। অমা দেবলাম নেপালে অবস্থিত। এই পর্বতের নামকরণের পেছনে রয়েছে একটা সুন্দর গল্প। ‘অমা’ মানে মা, আর ‘দেবলাম’ অর্থ নেকলেস বা গলার হার। অর্থাৎ অমা দেবলাম মানে ‘গলায় হার বা নেকলেস পরিহিতা মা।’ পর্বতের ছবি দেখলেও কিন্তু এমনটাই মনে হয়। ১৯৬১ সালে এই সুন্দর পর্বতের চড়ায় প্রথম মানুষের পায়ের ছাপ পড়ে।
ফিটজ রয় : ফিটজ রয় নামের এই দুর্গম পর্বতের অবস্থান আর্জেন্টিনা-চিলি সীমান্তে। উচ্চতায় অবশ্য এটি কোনো পর্বত নয়। তবু এটাকে পৃথিবীর অন্যতম দুর্গম পর্বত বলা হয়। কারণ এটাতে ওঠা যেমন কঠিন তেমনি এই পর্বতের আবহাওয়া সব সময়ই থাকে খুবই খারাপ। আর পর্বতটি শুধু দুর্গমই না, সুন্দরও বটে। ১৮৭৭ সালে পর্বতটি প্রথম আবিষ্কার করেন ফ্রান্সিসকো মরিনো। আর তিনি পর্বতটির নামকরণ করেন বিখ্যাত অভিযাত্রী রবার্ট ফিটজ রয়ের নামে। আর দুর্গম এই পর্বতটি প্রথম জয় করেন ফরাসি পর্বতারোহী লাওনেল টেরেই ও গুইডো ম্যাগনোনে। এই পর্বতটির কিন্তু আরো একটা নাম আছে, ‘সেরো চালটেন’। স্প্যানিশ এই নামের অর্থ ‘ধূমপানরত পর্বত’! প্রায়ই এই পর্বতের চারপাশে মেঘেরা এমনভাবে ভিড় করে থাকে দেখে মনে হয় পর্বতটি বুঝি ধূমপান করছে।
ম্যাটারহর্ন : ম্যাটারহর্ন হচ্ছে এই পর্বতটির জার্মান নাম। ইতালিয়ান নাম মন্টে কার্ভিনো। আর ফ্রেঞ্চ নাম মন্ট কার্ভিন। তবে জার্মানি কিংবা ফ্রান্সে নয় এর অবস্থান ইতালি আর সুইজারল্যান্ডের সীমান্তে। তবে এটিই কিন্তু সুইস বা সুইজারল্যান্ডের পর্বতশৃঙ্গ হিসেবেই বেশি বিখ্যাত। পর্বতটি কিন্তু বেশ উঁচুও। পর্বতটি দেখতে একদম পিরামিডের মতো। পর্বতটি তুষারাবৃত হলেও এর পাদদেশে কিন্তু একটা সবুজ বনভূমিও রয়েছে।
মাচাপুচারে : মাচাপুচারেও নেপালে অবস্থিত হিমালয় পর্বতমালার পর্বত। তবে এটি এভারেস্টশৃঙ্গের কাছে নয় অবস্থিত অন্নপূর্ণার কাছাকাছি। মাচাপুচারে মানে ‘মাছের লেজ’! এর চূড়াটি মাছের লেজের মতোই বিভক্ত তাই এমন নামকরণ করা হয়েছে। এই পর্বতটি শুধু সুন্দরই নয়, হিন্দু পুরাণ অনুযায়ী এই পর্বতটি বেশ পবিত্রও। ১৯৫৭ সালে একগুঁয়ে এক ব্রিটিশ পর্বতারোহী জিমি রবার্টসের নেতৃত্বে একদল পর্বতারোহী এই পর্বতচূড়ায় আরোহণের চেষ্টা করেছিলেন। কিন্তু চূড়ার খুব কাছাকাছি গিয়েও তারা শেষমেশ রণে ভঙ্গ দেন। আর এখন তো এই পর্বতারোহীদের জন্য একেবারেই নিষিদ্ধ।
চকোলেট পাহাড় : ফিলিপাইনের বোহোলে আছে অনেকগুলো পাহাড় এবং সেগুলো চকোলেট পাহাড় নামে পরিচিত। এ পাহাড়গুলোর বিস্তৃত প্রায় পঞ্চাশ বর্গকিলোমিটার। পাহাড়ের ওপরে রয়েছে সবুজ ঘাস। এগুলো যখন খয়েরি রং ধারণ করে তখন দেখতে লাগে চকোলেটের মতো। সেখানে ভ্রমণপিপাসু মানুষদের অন্যতম আকর্ষণ এ চকোলেট পাহাড়। চকোলেট পাহাড়ে নানা ফার্নজাতীয় উদ্ভিদ রয়েছে। এটি নিয়ে রয়েছে নানা উপকথা। এর একটি হলো দুটি দৈত্য বহুদিনের দ্বন্দ্বের চূড়ান্তরূপে একে অপরের সঙ্গে মারামারিতে জড়িয়ে পড়ে। তখন তারা একে অপরের দিকে পাথর, বালি, ইট ছুড়ে মারতে থাকে। দিনের শেষে একসময় তারা ক্লান্ত হয়ে পড়ে এবং বিবাদ ভুলে বন্ধুতে পরিণত হয়। কিন্তু সেখান থেকে যাওয়ার সময় তারা ওই ওই জায়গাটি পরিষ্কার করতে ভুলে যায় আর সেটি পরিণত হয় পাহাড়ে। এখানে আছে রেস্টুরেন্ট, সুইমিংপুলসহ হোস্টেল। আরো আছে একটি ডেক। যেখান থেকে এক হাজার মানুষ একসঙ্গে পর্যবেক্ষণ করতে পারে। চকোলেট হিলস ভালোভাবে দেখার মতো আরেকটি জায়গা আছে সাগবায়ান শহরে। পাহাড়ের ওপর অবস্থিত এ রিসোর্ট থেকে চকোলেট হিলসের দূরত্ব মাত্র আঠারো কিলোমিটার। সাগবায়ান পিক পাহাড়ের উপরের একটি অবসর যাপনের স্থান। এখান থেকে দেখা যায় বোহোল ও সিবুর মাঝের নীল সমুদ্রের মনোরম দৃশ্য।
সূত্রঃ লেখাটি ০৫/০২/২০১৩ তারিখে দৈনিক মানবকন্ঠে প্রকাশিত হয়।