পাতি সোনাচোখ
পাতি সোনাচোখ বা সোনালি চোখ হাঁস ( Bucephala clangula) (ইংরেজি Common Goldeneye ) অ্যানাটিডি পরিবারের বুচিফালা গণের এক প্রজাতির মাঝারি আকৃতির ডুবুরি হাঁস । এরা বাংলাদেশের পরিযায়ী পাখি । বর্তমানে এরা বাংলাদেশে অনিয়মিত । শীতে এদের বাংলাদেশের সিলেট অঞ্চলে দেখতে পাওয়া যেত । সর্বশেষ ১৯১৪ সালে কেবল একবার বৃহত্তর সিলেটের হাওর অঞ্চলে দেখা গিয়েছিল। আই. ইউ. সি. এন. এই প্রজাতিটিকে Least Concern বা আশংকাহীন বলে ঘোষণা করেছে। বাংলাদেশে এই প্রজাতির অবস্থা নিয়ে প্রয়োজনীয় তথ্য নেই ।
পাতি সোনাচোখ মাঝারি আকারের হাঁস । এরা আকারে ১৫.৭ থেকে ২০.১ ইঞ্চি হয়ে থাকে । পাখার বিস্তৃতি ৩০.৩ থেকে ৩২.৭ ইঞ্চি । এদের ওজন সাধারনত ৫০০ থেকে১৩০০ গ্রাম হয়ে থাকে । পুরুষ হাঁসটির মাথা সবুজাভ কালো । এর মুখের পাশে ঠোঁটের মধ্যে ডিম্বাকৃতির সাদা দাগ দেখতে পাওয়া যায় । দেহের উভয় পাশ , বুক ও পেট দেখতে উজ্জ্বল সাদা । দেহের পিছনের অংশ , লেজ ও পাখা কালো রঙের । এদের ঠোঁট ছোট ও ত্রিকোণাকার । চোখ সোনালি হলুদ । স্ত্রী পাখিটির মাথা চকলেট বাদামী রঙের । বুক , পাঁজর ও পেট সাদা রঙের । দেহের পিছনের অংশ , পাখা ও লেজ নীলাভ ধূসর বর্ণের । এদের কালো রঙের ছোট ও ত্রিকোণাকার ঠোঁট আছে । ঠোঁটের মাঝে হলুদ দাগ দেখতে পাওয়া যায় । চোখ ফ্যাকাশে হলুদ থেকে সাদা । পা ও পায়ের পাতা কমলা হলুদ । অপ্রাপ্তবয়স্ক পাখিটি দেখতে স্ত্রী পাখির মতো । এদের মাথা ,বুক ও দেহের দুই পাশ ধূসর বর্ণের ।
শীতে পাতি সোনাচোখকে সমুদ্র , নদী ও বড় লেকের কাছাকাছি দেখতে পাওয়া যায় । প্রজনন মৌসুমে এরা বনের আশেপাশের লেক ও নদীতে অবস্থান করে । এরা পানিতে ডুব দিয়ে খাবার সংগ্রহ করে । এদের খাদ্য তালিকায় আছে জলজ অমেরুদণ্ডী প্রাণী যেমন শামুক কেঁচো ইত্যাদি । এছাড়া এরা মাঝে মধ্যে ছোট মাছ ও জলজ উদ্ভিদও খেয়ে থাকে ।
এই প্রজাতির পাখিরা বড় গাছের গর্তে বাসা বানায় । স্ত্রী পাখি একসাথে ৫ থেকে ১৬টি ডিম পাড়ে । ডিমগুলো দেখতে চকচকে সবুজাভ বর্ণের । স্ত্রী পাখি একাই ডিমে তা দিয়ে থাকে । ডিম ফুটে বাচ্চা বের হতে সময় লাগে ২৮ থেকে ৩২ দিন । বাচ্চারা জন্মের ৫৫ থেকে৬৫ দিনের মধ্যে উড়তে সক্ষম হয় ।