বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ আইন ও সচেতনতা
মানুষের স্বার্থেই মানুষ বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ আইন প্রণয়ন করেছে। পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষার্থে যেমন দরকার বন, তেমনই প্রয়োজন বন্যপ্রাণী। কালের বিবর্তনে উজাড় হয়েছে বন, বহু প্রজাতির প্রাণী বিলীন হয়ে গেছে। বন ও বন্যপ্রাণী বিলীন হওয়ার বিরূপ প্রভাব পড়ছে পরিবেশে।
আমাদের দেশে বন, বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ আইন রয়েছে । এবার প্রশ্ন হলো এই আইন সম্পর্কে কতজন জানে? কিছুদিন আগে আমি আমাদের পাশের বাসার একজন আইনজীবীর কাছে গিয়েছিলাম বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ আইন সম্পর্কে অবগত হবার জন্য। আমি উনাকে বলেছিলাম যে, বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ বিষয়ক আইন সম্পর্কে আমাকে কিছু বলুন। তিনি তখন আমাকে যে উত্তর দিলেন তাতে আমি রীতিমত বিস্মিত! তিনি বললেন “দেখ, বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ বিষয়ক আইন সম্পর্কে আমাদের কোনদিন পড়তে হয়নি। কারন বাংলাদেশে প্রতি একলক্ষ মামলার মধ্যে একটি মামলাও বন্যপ্রানি নিয়ে পাবেনা।” একজন আইন বিশেষজ্ঞের যদি এই অবস্থা হয় তাহলে আমাদের কথা নাইবা বললাম। অথচ আমাদের প্রতিবেশী দেশগুলোতে প্রানিঅধিকার বিষয়ক আন্দোলনকারীরা খুবই সোচ্চার। ভাবতে খারাপ লাগে আমাদেরদেশের গণমাধ্যমগুলোর ভূমিকা নিয়ে। কিছুদিন আগে টিভিতে খেলা দেখার সময় দেখলাম ভারতের মোবাইল ফোন কোম্পানি এয়ারসেল বাঘ রক্ষা করার জন্য গণসচেতনতামূলক বিজ্ঞাপন দিচ্ছে। আর সবচেয়ে যে বিষয়টি আমাকে সবচেয়ে বেশি আকৃষ্ট করেছে সেটা হলো ঐ বিজ্ঞাপনের তারকা হলেন ভারতের জাতীয় দলের অধিনায়ক মহেন্দ্র সিং ধোনি। আর আমাদের মোবাইল ফোন কোম্পানিগুলো কোন প্যাকেজ দিয়ে মানুষকে ঠকিয়ে কত টাকা আয় করা যায় সেই ধান্দায় মগ্ন। বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ নিয়ে শুধুমাত্র বিজ্ঞাপন কোম্পানিগুলোর মনমানসিকতার পরিবর্তন ঘটলে তারা সাকিব,তামিম এবং মাহমুদুল্লাহদ এর মতো বিশ্বখ্যাত তারকাদের হাতে ফ্যায়ার এন্ড হ্যান্ডসাম ক্রিম আর আলুর চিপসের সাথে সাথে তাদের দিয়ে বিলুপ্তপ্রায় বাঘ রক্ষার জন্যও প্রচারনা চালাত।
আইনের যথাযথ প্রয়োগ না থাকায় যা হবার তাই হচ্ছে। মাঝে মধ্যেই বিরল প্রজাতির প্রাণী মাঠে মেরে দামাল ছেলেদের উল্লাস করতে দেখা যাচ্ছে। বাঘ ভেবে বাঘডাশা হত্যার খবর তো পত্রপত্রিকার পাতায় মাঝে মধ্যেই পরিলক্ষিত হয়। অতিথি পাখি শিকার রোধে সরকারি ও বেসরকারিভাবে প্রচার প্রচারণা চালিয়েও আশাতীত সাড়া মিলছে না।
বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ সম্পর্কে সমাজের সকল পর্যায়ের মানুষকে সচেতন করা দরকার। বন্যপ্রাণী সংরক্ষণে দায়িত্বশীলদের আন্তরিক করতে না পারলে অবস্থা যে আরও ভয়াবহ হবে তা বলার অবকাশ রাখে না। বন্যপ্রাণী সংরক্ষণের জন্য অনেক আগে থেকেই আইন রয়েছে। যার মাধ্যমে বন্যপ্রাণী, পাখি ও অন্য প্রাণীদের সংরক্ষণের ব্যবস্থা আছে। অথচ অত্যন্ত পরিতাপের বিষয়, দেশে বন্যপ্রাণী ও পাখি সংরক্ষণের জন্য আইন ও বিধিবিধান থাকলেও সেগুলো পর্যাপ্ত লোকবল সংকট, তদারকি ও জবাবদিহিতার অভাবসহ নানা কারণে কার্যকর হচ্ছনো। ফলে দিন দিন দেশে বন্যপ্রাণী ও পাখি নিধনের ঘটনা বেড়েই চলছে, যা ভবিষ্যতে আমাদের পরিবেশের জন্য এক অশনিসংকেত বটে। এসব সমস্যা সমাধানে এবং পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষার জন্য জনসচেতনতা বৃদ্ধিসহ জরুরি ভিত্তিতে এসব বন্যপ্রাণী ও পাখি সংরক্ষণের জন্য আইনের যথাযথ প্রয়োগ জরুরি, যাতে বাংলার সবুজ প্রাকৃতিক ভূমি বন্যপ্রাণী ও পাখিদের জন্য নিরাপদ অভয়াশ্রম হিসেবে গড়ে উঠতে পারে।
রাহুল অভি
প্রেসিডেন্ট
প্রাণী অধিকার (প্রাধিকার)