বাংলাদেশের বায়ুর মান সবচেয়ে খারাপ

বাংলাদেশের বাতাস বিশ্বের মধ্যে সবচেয়ে বেশি দূষিত। পরিবেশদূষণ এবং মানুষের ওপর এর প্রভাববিষয়ক গ্লোবাল এনভায়রনমেন্ট পারফরম্যান্স ইনডেক্স ২০১৪-এর প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়েছে। ২৫ জানুয়ারি সুইজারল্যান্ডের ডাভোসে অনুষ্ঠিত বিশ্ব অর্থনৈতিক ফোরামের সম্মেলনে গ্লোবাল এনভায়রনমেন্ট পারফরম্যান্স ইনডেক্স উপস্থাপন করা হয়।
এই সূচক অনুসারে সার্বিক দূষণের ক্ষেত্রে পৃথিবীর ১৭৮টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশ নবম। অর্থাৎ, ১৬৯তম স্থানে আছে বাংলাদেশ। এই সূচকে ২০১০ সালে বাংলাদেশের অবস্থান ছিল ১৩৯।
বৈশ্বিক পরিবেশ সূচকের প্রতিবেদনে বলা হয়, রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক পরিস্থিতি খারাপ হওয়ার কারণে এই সূচকের নিচের সারির দেশগুলো পরিবেশদূষণের বিষয়টি পাশ কাটিয়ে যায়।
যুক্তরাষ্ট্রের ইয়েল ও কলম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয় দ্বিবার্ষিক এই প্রতিবেদনটি তৈরি করে। এর সূচক নির্ণয়ে নয়টি পরিবেশগত বিষয় বিবেচনায় নেওয়া হয়। এগুলো হলো বায়ুর মান, স্বাস্থ্যগত প্রভাব, পানি ও স্যানিটেশন, পানিসম্পদ, কৃষি, বনভূমি, মৎস্য সম্পদ, জীববৈচিত্র্য ও বসতি এবং জলবায়ু ও জ্বালানি সম্পদ। নয়টি বিষয়ের মধ্যে প্রতিটি দেশের জাতীয় পর্যায়ের ২০ ধরনের পরিবেশগত তথ্য এই সূচক তৈরিতে ব্যবহার করা হয়েছে। প্রতিটিতে মোট ১০০ নম্বরের মধ্যে দেশগুলোর অবস্থান নম্বর দেওয়া হয়।
মানের দিক থেকে বাংলাদেশের বায়ু ১০০ নম্বরে পেয়েছে মাত্র ১৩.৮৩, যা বিশ্বে সর্বনিম্ন। এর পরে ১৬.২৩ নম্বর নিয়ে দ্বিতীয় স্থানে আছে নেপাল।
সামগ্রিক বিবেচনায় অর্থাৎ পরিবেশের নয়টি সূচকের নিরিখে বাংলাদেশের অবস্থান ১৬৯।bangladesh pollution

এই বিবেচনায় সার্কভুক্ত কোনো দেশই বাংলাদেশের পেছনে নেই। দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে পরিবেশের সার্বিক অবস্থান সবচেয়ে ভালো শ্রীলঙ্কার। ৫৩.৮৮ নম্বর নিয়ে দেশটির অবস্থান ৬৯-এ।
নিকটবর্তী দেশগুলোর মধ্যে সার্বিক পরিস্থিতির তালিকায় বাংলাদেশের পেছনে আছে একমাত্র আফগানিস্তান। দেশটির অবস্থান ১৭৪।

এই সূচকে ১৫.৪৭ নম্বর নিয়ে যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশ সোমালিয়া আছে সবার নিচে। আর সার্বিক পরিবেশ সবচেয়ে ভালো সুইজারল্যান্ডের, দেশটির প্রাপ্ত নম্বর ৮৭.৬৭।
নয়টি সূচকের মধ্যে বাংলাদেশ সবচেয়ে এগিয়ে আছে কৃষিতে। এ ক্ষেত্রে বাংলাদেশের প্রাপ্ত নম্বর ৯২, দেশগত অবস্থান ১৭।

একই অবস্থানে আছে নেপাল ও শ্রীলঙ্কা। ভারতের অবস্থান ১১৭, নম্বর ৫৮.৪।
স্বাস্থ্যগত প্রভাব সূচকে বাংলাদেশের অবস্থান ১২২তম, নম্বর ৫৪.৮৭।

এ ক্ষেত্রেও বাংলাদেশ ভারতের চেয়ে এগিয়ে আছে। পার্শ্ববর্তী এ দেশটির অবস্থান ১২৭।
পানি ও স্যানিটেশনে ২২.৫৬ নম্বর নিয়ে বাংলাদেশের অবস্থান ১৩১। ২৬.২৮ নম্বর নিয়ে ভারত এ ক্ষেত্রে বাংলাদেশের চেয়ে ভালো অবস্থানে আছে। দেশটির অবস্থান ১২৭ দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে ৪৮.৮৫ নম্বর নিয়ে এ ক্ষেত্রে সবচেয়ে ভালো অবস্থানে আছে শ্রীলঙ্কা।
বনভূমির ক্ষেত্রে বাংলাদেশ ২২.৮৩ নম্বর নিয়ে আছে ৮৮তম স্থানে। এ ক্ষেত্রেও দক্ষিণ এশিয়ার সব কটি দেশই বাংলাদেশের থেকে এগিয়ে আছে।
পানিসম্পদে বাংলাদেশের নম্বর শূন্য, আর অবস্থান ১৪৫ বাংলাদেশের শূন্য পাওয়া আরেকটি ক্ষেত্র হলো মৎস্য খাত। এ ক্ষেত্রে অবস্থান ৯৮। ৬২.৪৩ নম্বর নিয়ে এ ক্ষেত্রে প্রথম অবস্থানে আছে শ্রীলঙ্কা।
বাংলাদেশ জীববৈচিত্র্য ও বসতির ক্ষেত্রে নম্বর পেয়েছে ৩৯.৬৮, অবস্থান ১২৩।
জলবায়ু ও জ্বালানির ক্ষেত্রে বাংলাদেশ বিদ্যুৎ ব্যবহারের সুযোগের নিরিখে ৫৫ নম্বর পেয়েছে।
পরিবেশবিদ ও বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকেরা মনে করেন, বায়ুর মান থেকে শুরু করে বাংলাদেশের পরিবেশের সার্বিক অবস্থা দিনে দিনে খারাপ হচ্ছে।
বাতাসে কার্বন মনো-অক্সাইড ও সালফারডাই অক্সাইডের প্রাবল্য দিনে দিনে মানুষের রোগবালাই বাড়িয়ে তুলছে—এমনটাই মনে করেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য এবং নাক, কান ও গলা বিশেষজ্ঞ প্রাণ গোপাল দত্ত। তিনি বলেন, বায়ুদূষণের কারণে স্নায়বিক দুর্বলতা, ফুসফুসের প্রদাহ, অবসাদগ্রস্ততা বাড়ছে। এমনকি অতিরিক্ত দূষণ ক্যানসার সৃষ্টিতে ভূমিকা রাখে।
বায়ুর সবচেয়ে খারাপ মান এবং সার্বিক পরিবেশের সূচকে বাংলাদেশের এই নাজুক অবস্থান মোটেও বিস্মিত করার মতো নয় বলে মন্তব্য করেছেন বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতির (বেলা) নির্বাহী পরিচালক সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান। তিনি গতকাল বুধবার প্রথম আলোকে বলেন, দেশে পরিবেশ প্রশাসন বলতে কিছু নেই। পরিবেশের বিষয়টি শিল্প, অর্থ ও বাণিজ্য প্রশাসনের কাছে নতজানু হয়ে আছে। এ প্রসঙ্গে তিনি হাজারীবাগ ট্যানারি ও ইটভাটার কথা উল্লেখ করেন।
পরিবেশ অধিদপ্তরের বায়ুর মান ব্যবস্থাপনা বিভাগের পরিচালক মাহমুদ হাসান খান পরিবেশের বৈশ্বিক এই সূচকটি না দেখলেও মনে করেন, বাংলাদেশের বায়ুর মান খারাপ নয়। কোন সময়ে এবং দেশের কোন জায়গার বায়ুর মান দেখা হয়েছে, সে বিষয়টি নিয়েও প্রশ্ন তোলেন তিনি। তিনি বলেন, রাজধানীর ফার্মগেটের বায়ুর মান আর কল্যাণপুর বা রাজধানীর বাইরের মান এক নয়। সে ক্ষেত্রে কেবল অপেক্ষাকৃত বেশি দূষিত ফার্মগেটের মান নিয়ে বিচার করলে ইাতবাচক ফলাফল আসবে না।
বায়ুর দূষণ নিরীক্ষণে দেশের বিভিন্ন স্থানে যে ১১টি স্টেশন আছে, সেগুলোর ফলাফল বিচার করে বায়ুর মান নিয়ে কথা বলা উচিত বলে মত দেন মাহমুদ হাসান।
মাহমুদ হাসান আরও বলেন, বাংলাদেশের বায়ুর আন্তসীমান্ত একটি চরিত্র রয়েছে। এখানে ভারত, নেপাল এমনকি চীনের বায়ুও এসে স্থিত হয়। তাই বায়ুর মান পরীক্ষায় এসব বিষয়ও নিরীক্ষা করা দরকার বলে মনে করেন তিনি।

খবর সূত্রঃ প্রথম আলো, ৩০/০১/২০১৪

আরো দেখান

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Discover more from EnvironmentMove.earth

Subscribe now to keep reading and get access to the full archive.

Continue reading

Verified by ExactMetrics