বাংলাদেশের সাপ

আজিজুর রহমান

942549_420372998060165_1802322728_nসাপ হচ্ছে শীতল রক্তের প্রাণী। এ প্রাণী সাধারণত ২০ থেকে ৩৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রায় জীবনযাপনে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করে। এ তাপমাত্রা আমাদের দেশের তাপমাত্রার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ। অন্যান্য অঞ্চলের সাপের চেয়ে বাংলাদেশের সাপ বেশি তৎপর। কেননা বাংলাদেশে আবহাওয়া উত্তপ্ত থাকে বছরের বেশি সময়। গরমের সময় (মার্চ-জুলাই) ২১ থেকে ৩৬ ডিগ্রি সেলসিয়াসে তাপমাত্রা পৌঁছে। পরবর্তী জুলাই-অক্টোবরে তাপমাত্রা সামান্য কমে আসে। সাপকে শীতঘুমে যেতে হয় শুধু ৪ মাসের জন্য নভেম্বর থেকে ফেব্রুয়ারী পর্যন্ত। তখনো তাপমাত্রা ওঠানামা করে ২৯ থেকে ১১ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে। এছাড়া দেশে গড় বৃষ্টিপাতের পরিমাণ পশ্চিমাঞ্চলে ১১০০ মিলিমিটার এবং উত্তরপূর্বে ৫৬১০ মিলিমিটার। এ পরিমাণ তাপমাত্রা ও বৃষ্টিপাত সরীসৃপ শ্রেণীর টিকে থাকার জন্য খুবই উপযোগী।
বাংলাদেশে প্রাচীন (প্রিমিটিভ) ও আধুনিক (অ্যাডভান্স) উভয় বিভাগের অন্তর্ভুক্ত মোট ৮০ প্রজাতির সাপ রয়েছে। এর মধ্যে ৫৮ প্রজাতির সাপই নির্বিষ। বাকি ২২ প্রজাতির সাপ বিষধর। আবার এই বিষধর প্রজাতিগুলোর ৪টি প্রজাতি খুবই মারাত্মক। এগুলো হচ্ছে- গোখরা, কেউটে, শঙ্খিনী ও চন্দ্রবোড়া। বাংলাদেশের অধিকাংশ সাপ ইলপিডি পোত্রভুক্ত। হাইড্রোফিয়াইডি গোত্রভুক্ত প্রায় ১২ প্রজাতির সামুদ্রিক সাপ হয়েছে। চন্দ্রবোড়া ভাইপেরিডি এবং দারাশ ও দুধরাজ কুলব্রিডি পরিবারের। বায়োডি পরিবারের অজগরের দুটি প্রজাতি পাইথন মৌলরুস ও পাইথন রেটিকুলাস, বিষধর সবুজবোড়ার ৫টি প্রজাতি, প্রবাল বা প্যান্থারের ২-৩টি প্রজাতি, গোখরা, নানা প্রজাতির কেউটে। শাকিনী বা শঙ্খিনী রাজগোখরা বা শঙ্খচুড়, চন্দ্রবোড়া, দুমুখো সাপ, ধোড়া, দাড়াশ, দুধরাজ, জলবোড়া, পাইনা ইত্যাদি অসংখ্য নামের সাপ রয়েছে বাংলাদেশে। আয়তনের দিক থেকে বাংলাদেশ ছোট হলেও এদেশই হচ্ছে পৃথিবীর কিছু রেকর্ডধারী সাপের আবাসস্থল। অনেকে অ্যানাকোন্ডা সাপকে পৃথিবীর সবচেয়ে লম্বা সাপ বলে ধারণা করেন। কিন্তু প্রকৃত তথ্য হচ্ছে বাংলাদেশসহ দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় বসবাসকারী সাপ গৌলবাহার সাপই হচ্ছে পৃথিবীর সবচেয়ে লম্বা সাপ। আফ্রিকার ব্ল্যাক সাম্বা সাপকে পৃথিবীর সবচেয়ে বিষধর বলা হলেও আসলে বাংলাদেশের শঙ্খচুড় সাপই হচ্ছে মারাত্মক বিষধর। এশিয়ার সবচেয়ে তীব্র বিষধর সাপের নাম কালকালাচ তারও বাংলাদেশেই আবাস। বাংলাদেশে যে ২২ প্রজাতির বিষধর সাপ রয়েছে সেগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো শঙ্খচুড়, কালকালাচ, পদ্ম গোখরা, কেউটে, চন্দ্রবোড়া, শঙ্খিনী, কোরাল, টিয়েবোড়া, সবুজ বোড়াসহ ৪ প্রজাতির মারাত্মক বিষধর সামুদ্রিক সাপ। বরিশাল বিভাগে সাপের প্রকোপ বেশি এবং সিলেট বিভাগে সবচেয়ে কম। সাপের কামড়কে গবেষকরা বাংলাদেশের প্রাচীন ও অবহেলিত জনস্বাস্থ্য সমস্যা হিসেবে চিহ্নিত করেন।

সূত্রঃ দৈনিক মানব কণ্ঠ  ২৩/০৭/২০১৩

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Discover more from EnvironmentMove.earth

Subscribe now to keep reading and get access to the full archive.

Continue reading

Verified by ExactMetrics