
বালুকা বাঘা হাঙরের বিরল ও ভয়ংকর প্রজনন কৌশল
মাইন রানা
পৃথিবীর সকল বন্যপ্রাণীদের মূল লক্ষ্য মূলত দুটি। প্রকৃতিতে বেঁচে থাকা ও প্রজননের মাধ্যমে ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে যুগ যুগ ধরে টিকিয়ে রাখা। আর দুটি কাজই সবচেয়ে কঠিন ও চ্যালেঞ্জিং।
নিজের সন্তানকে পৃথিবীতে টিকিয়ে রাখতে একেক প্রাণী একেক কৌশলের আশ্রয়ের নেয়। কেউ লক্ষ লক্ষ ডিম পারে, যেখান থেকে মাত্র অল্প কয়েকটি বেঁচে থাকে। কেউ শত শত সন্তান জন্ম দেয়। যদিও একটি বা দুটি ছাড়া সব মারা যায়। কোন কোন বাবা-মা তার সন্তানকে নিরাপদে পৃথিবীতে জন্ম দিতে নিজেই মুখের ভিতর (ডারউইন ব্যাঙ) বহন করে বড় করে। কেউ কেউ নিজের জরায়ুতে বাচ্চা বড় করে প্রসব করে (স্তন্যপায়ী প্রানী)। কেউ কেউ পেটের থলেতে ভরে রাখে (ক্যাঙ্গারু) ইত্যাদি।
তবে বালুকা বাঘা হাঙর বা Sand tiger shark এর প্রজনন কৌশল সব থেকে বিরল ও ভয়ংকর বলা চলে। এই হাঙ্গর মা তার জরায়ুতে ৫০ টির মতো ডিম পারে যা থেকে বাচ্চা বের হয় এবং বাচ্চারা ডিমের কুসুম ও জরায়ুর রস খেয়ে বেঁচে থাকে। মায়ের পেটের ভিতরে এই হাঙরের বাচ্চারা ৪ ইঞ্চি পরিমাণ বড় হয়। এদের ভয়ংকর দাঁত তৈরি হয় এবং তখন পেটে থেকেই একটি বাচ্চা আরেকটি খেতে থাকে অর্থাৎ আপন ভাই বোনদের তারা খেতে থাকে।
শেষ পর্যন্ত একটি বাচ্চা বাকি সবাইকে খেয়ে ফেলে। মায়ের পেটের এই বাচ্চাটিকে বাঁচিয়ে রাখতে আরো খাবারের প্রয়োজন হয়। তাই মাকে আরো প্রচুর ডিম উৎপন্ন করতে হয় পেটের বাচ্চাটিকে খাওয়াতে। ৮-১২ মাস পর এই বাচ্চাটি অনেক বড় হয়। প্রায় ১ মিটার লম্বা হলে মা সন্তান প্রসব করে যা একটি বড় ও পূর্নাঙ্গ হাঙর। কারণ একটি পূর্ন বয়স্ক হাঙর মাত্র ৩ মিটার লম্বা হয়। ৩ মিটার লম্বা হাঙর কি করে ১ মিটার সন্তান প্রসব করে এটা আরেকটা বিরাট বিস্ময়।
নিজের স্বজাতি খাওয়ার ঘটনা অনেক হাঙর সহ বহু প্রাণিতে দেখা যায়। অনেক প্রাণিই নিজের ভাই-বোন, সন্তান, নিজের বাবা-মা খেয়ে থাকে। এটি সাধারণ একটি ঘটনা। এই বৈশিষ্ট্যকে ক্যানাবিলিজম (Cannibalism) বলে। কিন্তু মায়ের পেটা থাকা অবস্থায় নিজের আপন ভাই বোনদের খেয়ে ফেলার বিরল ঘটনা Sand tiger shark ছাড়া আর কোন প্রাণীতে দেখা যায়না।
প্রকৃতির এরকম আরো বহু বিস্ময় ও অজানা রহস্য লুকিয়ে আছে মানুষ তার খুব কমই জানে বা আবিস্কার করতে পেরেছে।