বিটি বেগুন পরিবেশের হুমকি
দেলোয়ার জাহান:
জেনেটিক্যালি মডিফাইড অরগানিজম (জিএমও) বিটি বেগুনের বীজ শিগগির চাষের জন্য কৃষক পর্যায়ে ছাড়া হচ্ছে। চলতি সপ্তাহে শাখা ও ফল ছিদ্রকারী পোকার প্রতিরোধী বিটি বেগুনের বীজ ছাড়ার অনুমোদন চেয়ে কৃষি মন্ত্রণালয়ে আবেদন করেছে বিটি বেগুন উদ্ভাবনকারী সরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট (বারি) মন্ত্রণালয়ে যাচাই-বাছাইয়ের জন্য আরও কিছু তথ্য চেয়ে পাঠানো হয়েছে। অনুমোদন পাওয়া গেলে শিগগির কৃষক
পর্যায় চাষের জন্য অনুমতি দেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন বিটি বেগুন গবেষণা দলের প্রধান বারি পরিচালক গবেষক ড. খালেদ সুলতান।
তবে ইউএসএআইডি’র অর্থায়নে ভারতের মাহিকো বীজ কোম্পানির সহায়তায় জিএমও প্রযুক্তির মাধ্যমে ২০০৫ সালে ভারত, বাংলাদেশ ও ফিলিপাইনের যৌথ উদ্যোগে বিটি বেগুন উদ্ভাবনের পর থেকেই পরিবেশবাদীরা জিনগত পরিবর্তনের ফলে পরিবেশ ও স্বাস্থ্য ঝুঁকি রয়েছে অভিযোগ করে এর বিরোধিতা করেন। ভরতের পরিবেশবাদীদের বিরোধিতায় সেদেশের সরকার বিটি বেগুন জাত চাষ বর্তমানে স্থগিত করেছে।
বারি সূত্রে জানা যায়, এ বছর পরীক্ষামূলক যশোর, বরিশাল, হাটহাজারী, ঈশ্বরদী, রংপুর, জামালপুরে বারি গবেষণা মাঠে বিটি বেগুনের পরীক্ষামূলক চাষ করা হয়েছে।
পরিবেশবাদীরা বলছেন, বায়োসেপটি গাইডলাইন তৈরি ছাড়া কোনো জিএমও ফসল উন্মুক্ত স্থানে গবেষণা বা চাষাবাদ করা যেতে পারে না। সরকারি এ ধরনের গাইডলাইন নেই।
বারি কোনো জৈব নিরাপত্তা ছাড়াই দেশে ৬টি স্থানে উন্মুক্ত গবেষণা মাঠে পরীক্ষামূলক চাষাবাদ করেছে বলে অভিযোগ করেন তারা।
প্রাণবৈচিত্র্য সংরক্ষণ গবেষক পাভেল পার্থ বলেন, গ্রিন হাউসের মতো নিরাপদ এলাকায় বিটি বেগুন গবেষণা না করে উন্মুক্ত স্থানে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করায় বিটি বেগুনের পরাগরেণু বাতাসে অন্যত্র ছড়িয়ে পড়তে পারে। এর ফলে দেশে বিভিন্ন জাতের বেগুন ও সমগোত্রের অন্য ফসল যেমন টমেটোতেও এর বিরূপ প্রভাব পড়তে পারে। দেখা দিতে পারে পরিবেশ বিপর্যয়। তিনি অভিযোগ করেন, দেশে কোনো বায়োসেপটি গাইডলাইন নেই, যা আছে সেটা জীব প্রযুক্তি নীতিমালা। সেখানে কীভাবে জিন প্রযুক্তি গবেষণা করতে হয় সেটা বলা হয়েছে। কিন্তু বায়োসেপটি গাইডলাইন নেই।
বারি সূত্রে জানা যায়, দেশে জনপ্রিয় ৯টি বেগুনের জাতে ব্যাকটেরিয়ার বিটি জিন প্রয়োগ করা হয়েছে। এর মধ্যে ৪টি জাত উত্তরা, রংপুরের কাজলা, যশোরের খটখটিয়া ও চট্টগ্রামের দোহাজারী জাতের বেগুনের বিটি বীজ ছাড়ের অনুমোদনের জন্য আবেদন করা হয়েছে।
সম্প্রতি মন্ত্রিসভায় অনুমোদিত জীববৈচিত্র্য আইনেও স্থানীয় জাত সংরক্ষণের কথা বলা হয়েছে উল্লেখ করে পাভেল পার্থ বলেন, অথচ দেশের সবচেয়ে উন্নত জাতের বেগুনের বিটি জিন প্রয়োগ করা হয়েছে, যা আইনটির সঙ্গে সাংঘর্ষিক।
তিনি বলেন, ভারতীয় নাগরিকদের বিরোধিতায় সেদেশের উচ্চ আদালত বিটি বেগুনের বিরুদ্ধে রুল জারি করার পর চাষাবাদ বন্ধ হয়ে যায়। বিটি বেগুন সম্পর্কে ভারতে যেসব আশার বাণী শোনানো হয়েছিল, কৃষক পর্যায় তার প্রতিফলন দেখা যায়নি।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাওয়া হলে ড. খালেদ সুলতান বলেন, বারি সংরক্ষিত গবেষণা মাঠে বিটি বেগুন চাষ হচ্ছে। পরাগরেণু অন্য গাছে গিয়ে কোনো ক্ষতি করবে না।
তিনি বলেন, বেগুনের সবচেয়ে ক্ষতিকারক ছিদ্রকারী পোকা দমনে কৃষকরা যত্রতত্র কীটনাশক ব্যবহার করে থাকেন। এমনকি সকালে ক্ষেতে কীটনাশক স্প্রে করে বিকেলে বাজারজাত করেন, যা জনস্বাস্থ্যের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর। বিটি বেগুনে কোনো প্রকারের কীটনাশক প্রয়োগ করার প্রয়োজন হবে না। তাই কৃষককে উত্পাদন ব্যয় কমে যাবে ও উত্পাদন বেশি হবে।
বিটি বেগুন মানব দেহে কোনো প্রতিক্রিয়া তৈরি করবে কি না এ বিষয়ে জানতে চাওয়া হলে তিনি বলেন, এর আগে বিটি বেগুন বানর ও ইঁদুরের দেহে পরীক্ষা করে ক্ষতিকর কোনো প্রভাব পাওয়া যায়নি। পরিবেশের কোনো ক্ষতি করবে না বরং বেগুনে পোকা নিধনের জন্য কীটনাশকের ব্যবহার কমাবে।
– See more at: http://www.shokalerkhabor.com/2013/06/23/120750.html#sthash.3yZ0ig0h.dpuf