পেসেঞ্জার পিজিয়নঃ যে পাখি আর উড়বে না

প্রাণিজগতের ইতিহাসে সবচেয়ে ভয়ঙ্কর এবং লজ্জাজনক অধ্যায় হল ‘পেসেঞ্জার পিজিয়ন’ নামক কবুতর জাতীয় অতিব সুন্দর পাখিটার বিলুপ্তি।
মানুষ হাজারো চেষ্টা করেও এই প্রজাতিটি আর পৃথিবীতে ফিরিয়ে আনতে পারবেনা। এই পাখিটির কোন সদস্য আর কোনদিন আকাশে ডানা মেলব উড়বেনা। লক্ষ লক্ষ বছর ধরে যে পাখিটি ঝাঁকে ঝাঁকে আকাশে উড়ে উড়ে এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে ছুটে বেড়াত সেই পাখিটি শেষ হয়ে গেল। শুধু মানুষ একে পৃথিবীর বুক থেকে চিরতরে নিশ্চিহ্ন করে দিল। pigion

অবিশ্বাস লাগলেওঃ
–‘পেসেঞ্জার পিজিয়ন’ এর একটি দলে/ঝাঁকে পাখি থাকত ১ থেকে ২ বিলিয়ন বা ১০০-২০০ কোটি।
–ঝাঁকটি এত বড় যে প্রস্থে হত এক মাইলের বেশী এবং দৈর্ঘ্যে হত ৩০০ মাইল।
–ঝাঁকটি এত ঘন হত আকাশের সূর্যের আলো মাটিতে পরতে পারত না।
–মাথার উপর দিয়ে যখন উড়ে যেত তখন উড়ে যাওয়া শেষ হতে অপেক্ষা করতে হত ৪ থেকে ৫ ঘন্টা।
–উত্তর আমেরিকার মোট পাখি জনসংখ্যার ৪০% ছিল ‘পেসেঞ্জার পিজিয়ন’।
–প্রজনন ঋতুতে শত শত বর্গ মাইল এলাকা জুড়ে এরা বাসা বানাত আর এক একটি গাছে থাকত ১০০ এরও বেশী বাসা।

পেসেঞ্জার পিজিয়ন ছিল Columbidae Family বা গোত্রের পাখি যা আমাদের দেশের কবুতর, ঘুঘু জাতীয় পাখির মতো। লম্বা লেজের এই অপূর্ব সুন্দর পাখিটি পরিযায়ী বা মাইগরেটরী ছিল পাওয়া যেত উত্তর আমেরিকা মহাদেশে। গ্রীস্মে এটি আমেরিকার উত্তরদিকে এবং কানাডার দিকে চলে যেত এবং শীত মৌসুমে আমেরিকার দক্ষিনদিকে এবং মেক্সিকোর দিকে থাকত। ‘পেসেঞ্জার পিজিয়ন’ সবসময় দলবদ্ধ ভাবে থাকত।

নিষ্ঠুর মানুষদের হিংস্র থাবাঃ
১৮০০ সালের দিকেও পাখিটি পর্যাপ্ত পরিমানে ছিল। ইউরোপ থেকে যাওয়া ঘাতক আমেরিকানরা একে নিয়ে খেলত এক ভয়ঙ্কর শিকার খেলা। শত শত শিকারী প্রতিযোগিতায় বন্দুক হাতে মাথার উপর দিয়ে মেঘের মত ঘন ঝাঁকটিতে গুলি চালাত একের পর এক যতক্ষন না ঝাঁকটি শেষ হত আর বৃষ্টির মত মৃত পাখি পড়তে থকত নিচে। এরপর তারা হিসেব করত কে কত বেশী পাখি মারতে পেরেছে।
দাসদের সস্তা খাবারের জন্য এবং লাভজনক ব্যবসার জন্য ইউরোপিয়রা বাণিজ্যিক ভাবে ‘পেসেঞ্জার পিজিয়ন’ তাদের বাসা থেকে শিকার করত এবং জাহাজ ভরে ভরে ইউরোপে নিয়ে আসত এমনকি এক দিনে ৫০,০০০ (পঞ্চাশ হাজার) পরিমান পর্যন্ত পাখি ধরা পরত। এলকোহল মিশানো শস্য এবং ধোয়া ব্যবহার করে সহজ উপায়ে তাদের ধরা হত নির্বিচারে।

চিরতরে হারিয়ে যাওয়াঃ
এসব কর্মকাণ্ডে মাত্র কয়েক বছরেই পাখিটি দ্রুত হ্রাস পায় এবং প্রকৃতি থেকে দ্রুত হারিয়ে যেতে থাকে। মানুষের ব্যপক বিধ্বংসী মনোভাবে একসময় কমে যায় এর বংশ। ১৯০০ সালের দিকে একসময় চিরতরে হারিয়ে যায় প্রকৃতি থেকে।
বন্দী অবস্থায় মার্থা নামের ‘পেসেঞ্জার পিজিয়ন’ পাখিটি ছিল শেষ জীবীত পাখি। ১৯১৪ সালের পহেলা সেপ্টেম্বর বেলা ১.০০ ঘটিকায় আমেরিকার ‘চিনচিনাতি চিরিয়াখানায়’ মৃ্ত্যুর মধ্য দিয়ে পৃথিবী থেকে চিরতরে বিলুপ্ত হয়ে যায় ‘পেসেঞ্জার পিজিয়ন’ নামক পাখির প্রজাতিটি।

যে পাখিটি আকাশে ডানা মেললে সূর্যের আলো মাটিতে পড়ত না সে পাখিটি শুধু মানুষের কারনে মাত্র কয়েক দশকে এভাবে চিরদিনের জন্য হারিয়ে গেল এর দায়ভার কার?

মাইন রানা
তথ্য ও ছবিঃ ইন্টারনেট

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Discover more from EnvironmentMove.earth

Subscribe now to keep reading and get access to the full archive.

Continue reading

Verified by ExactMetrics