বোস্টন থেকে বাংলাদেশ
আশিক হাসান
ভূমিকাঃ
১. কিছুদিন আগে হঠাৎ করে আন্তজার্তিক সংবাদে উঠে আসলো বোস্টন।বোস্টনের ম্যারাথন প্রতিযোগিতার শেষে যখন প্রতিযোগিরা সকলে দৌড় শেষ করতে যাচ্ছিলো তখন আচমকা সন্ত্রাসীর বোমায় কেঁপে উঠলো বোস্টন তৎক্ষনাৎ ঘটনাস্থলে মারা পড়ল তিনজন এবং আহত হল শতাধিক। ঘটনা ঘটার সাথে সাথে সারা বোস্টন কৃতর্পক্ষ ঝাঁপিয়ে পড়ল উদ্ধার কার্যক্রমে।সুসংহত পরিকল্পনা এবং অত্যাধুনিক চিকিৎসা ব্যবস্থা সম্পূর্ন কার্যক্রমকে সঠিক এবং দ্রুততার সাথে সম্পন্ন করতে সক্ষম করল। সেইসাথে পুলিশ মরিয়া হয়ে উঠলো অপরাধীকে ধরার জন্য এবং অতি দ্রুত অসংখ্য সিসিটিভির ফুটেজ থেকে তারা তাদের কাঙ্খিত অপরাধীর একজনকে বন্দুকযুদ্ধে নিহত ও অপরজনকে আহত অবস্থায় গ্রেফতার করতে সমর্থ হয়। সেই অপরাধী কে বর্তমানে বিচারের সম্মুখীন করা হচ্ছে। একই মাসে সেই বোস্টন থেকে অশুভ কালো মেঘে এসে ভর করলো বাংলাদেশের সাভারের রানা প্লাজায়। অপরিকল্পিত নকশা আর ফাটল ধরার পরও জোর করে হাজার শ্রমিককে মৃত্যুর মুখে ঠান্ডা মাথায় ঠেলে দেয়া হল সেই রানা প্লাজার অভিশপ্ত গার্মেন্টসে। এরপরের ইতিহাস সবার জানা। ক্যামেরায় শুধু দেখা গেল লাশের সারি সেইসাথে উদ্ধার হল প্রায় আড়াই হাজার মানুষ। এই উদ্ধার কার্যক্রমে তৎক্ষনাৎ এগিয়ে এসেছিলো স্থানীয় জনগন এরপর ঘন্টাখানেকের মধ্যে একে একে উপস্থিত হল ফায়ার ব্রিগেড, সেনা,নৌ এবং বিমান বাহিনী সেই সাথে আসলো রেব,পুলিশ,আনসার ও ভিডিপি। উপস্থিত হল সেইসাথে রেডক্রিসেন্ট সহ অনেক স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা এবং এনজিও। তবে সবচেয়ে স্বতর্স্ফুতভাবে দেখা গেল বিভিন্ন বয়সীর নারী ও পুরুষদের সাভার এবং তার পার্শ্ববর্তী বিভিন্ন এলাকা হতে দলে দলে যোগদান করতে এই উদ্ধার কার্যক্রমে। বিশেষ করে যে বিষয়টি এখানে লক্ষ্যনীয় সেটি হল জীবনের মায়া তুচ্ছ করে অপ্রশিক্ষিত সাধারন জনগনের একটি উল্লেখযোগ্য অংশ অতি দ্রুততার সাথে অতি ঝুঁকিপূর্ন এই রানা প্লাজা হতে ঘটনা ঘটার সাথে সাথে অনেক হতাহত লোকজনকে উদ্ধার করে নিয়ে আসে। এরপর অন্যান্য বাহিনী বিশেষ করে ফায়ার ব্রিগেড এবং সেনাবাহিনী উদ্ধার কার্যক্রমে যোগদান করার পর এই উদ্ধার কার্যক্রমটি ধীরে ধীরে সাধারন লোকজনের কাছ থেকে স্বাভাবিক নিয়মে সরকারের নিয়ন্ত্রনে চলেআসে।
২. এই উদ্ধার কার্যক্রমে যে বিষয়টি সাধারন লোকজনের আলোচনায় উঠে এসেছে সেই বিষয়টি ছিলো প্রথমদিকে সম্বন্বয়হীনতার বিষয়টি। এই সম্বন্বয়হীনতার বিষয়ে ভিন্ন ভিন্ন মত উঠে আসে বিভিন্ন মিডিয়া এবং উদ্ধার কার্যক্রমে অংশ নেয়া উপস্থিত লোকজনের ভাষ্য হতে। বিভিন্ন সরকারী স্ংস্থার ভাষ্যে যে বিষয়টি উঠে এসেছে শুরুর দিকে ঘটনাস্থলে উপস্থিত হাজার হাজার উৎসুক জনতার ভীড়ে উদ্ধার কার্যক্রমের গতি শ্লথ ছিলো। এছাড়া বিষয়টি যে একেবারে উড়িয়ে দেয়া যায়না তা মিডিয়ার সেদিনকার ভিডিও ফুটেজ দেখলেও এর কিছুটা সত্যতা পাওয়া যায়। অন্যদিকে আরেকটি বিষয় যা অস্বীকার করা যায়না সেটি হল , এই ভীড় করা জনতার একাংশ সেদিন উদ্ধার কার্যক্রমে অংশ নেয়া কারনে হতাহতদের একটি বিরাট অংশকে দ্রুত হাসপাতালে নেয়া সম্ভবপর হয়।
আসলে যে বিষয়টি Emergency Response (যে কোন দূর্যোগকে একটি চক্রের সাথে তুলনা করলে একে ৪ টি পর্বে ভাগ করা যায় এবং দূর্যোগ সংঘটিত হওয়ার পরপরই যে পর্বটির কাজ শুরু হয়, সেটি হল এই Emergency Response। এই পর্বে মূলত উদ্ধার কার্যক্রম পরিচালিত হয়) এ অতি গুরুত্বপূর্ন সেটি হল ঘটনাস্থলে আগত সাধারন জনসাধারনের ভীড়কে নিয়ন্ত্রনে এনে সেখানে যথাযথ কর্তৃ্পক্ষ বা দায়িত্বপ্রাপ্ত সংস্থাকে সেই দূর্গত জায়গার দায়িত্বভার গ্রহন করে তাদের নিজস্ব দায়িত্ব দ্রুততার সাথে পালন করতে দিতে হবে।এই বিষয়টি মূলত পুলিশ বা নিরাপত্তা সংস্থা কর্তৃক নিশ্চিত করা হয়ে থাকে।
উদ্ধার কার্যক্রমে সম্বন্বয়হীনতা
৩. এখন প্রশ্ন জন্ম দিচ্ছে সাধারন মানুষের মনে আসলে কি সেনাবাহিনী, ফায়ারব্রিগেড এবং সরকারী সংস্থার কাজে আদৌ কোন সম্বন্বয়হীনতা ছিলো কিনা? এই বিষয়ে যদিও পূর্বে ভিন্ন মতামত তুলে ধরা হয়েছে তবে আরেকটি বিষয় এখানে আমার মনে হয় আলোচনা করা যেতে পারে। প্রথমত সাদা দৃষ্টিতে যে বিষয়গুলো জনসাধারনের চোখে ধরা পড়েছে এবং তার আলোকে এই সম্বন্বয়হীনতার কথাটি বার বার উঠে এসেছে মিডিয়া এবং জনসাধারনের ভাষ্যে তার কারনগুলো নিমোক্তভাবে বিশ্লেষন করা যেতে পারে:
ক. মূলত উদ্ধার কার্যক্রমে শুরু থেকে প্রশিক্ষিত সংস্থার যে সকল যন্ত্রপাতির পর্যাপ্ত সরবরাহ থাকা উচিত ছিলো তার প্রকট অভাব অনুভূত হয়।
খ.সেনাবাহিনীর সদস্যরা একটি চেইন অব কমান্ডকে অনুসরন করে কাজ করে এবং এধরনের কাজে অনেক সেনাসদস্যর পূর্বে অভিজ্ঞতা না থাকায় তাদের এক্ষেত্রে কিছুটা পদ্ধতিগত বিলম্ব ঘটে থাকতে পারে। এক্ষেত্রে প্রশ্ন উঠতে পারে একজন সাধারন ব্যক্তি যদি কোন আদেশের অপেক্ষায় না থেকে এধরনের ঝুঁকিপূর্ন দালানে তৎক্ষনাৎ প্রবেশ করতে পারে সেক্ষেত্রে একজন প্রশিক্ষিত সেনাসদস্যর আদেশের জন্য অপেক্ষা করা কতটুকু শ্রেয়। আসলে এই বিষয়ে আবেগ দিয়ে বিচার করলে একধরনের উত্তর পাওয়া যেতে পারে অন্যদিকে বাস্তবিক দিক থেকে বিচার করলে যে বিষয়টি উঠে আসে সেটি হল, একজন সেনাসদস্য কে আলাদাভাবে শুধু প্রশিক্ষন দেয়া হয়ে থাকে যে কোন ধরনের ঝুঁকিপূর্ন পরিবেশে আদেশ দিলে বিনা দ্বিধায় সেখানে আত্মনিয়োগ করা । এবং এধরনের দায়িত্বে তার কোন অস্বীকার করার কোন রাস্তা খোলা নেই বরং কর্তৃপক্ষের নিকট থেকে এ বিষয়ে কোন আদেশ আসলে সে পালন করতে বাধ্য। তাই এক্ষেত্রে এই বিষয়টি বলার কোন অবকাশ নেই যে সেনা সদস্যরা প্রানের ভয়ে রানা প্লাজার ঝুঁকিপূর্ন স্থানে প্রবেশ করতে দ্বিধা প্রকাশ করেছে।
গ. উদ্ধার কার্যক্রমে অংশ নেয়া অনেক সাধারন জনগন বিশৃংখলভাবে দালানের অনেক স্থানে অপরিকল্পিতভাবে স্ল্যাব ভেংগে ভেতরে ঢোকার চেষ্টা করছিলো এবং এই বিষয়টির কারনে উদ্ধার তৎপরতা প্রথম থেকেই অনেকটা বিশৃংখল ছিলো।এবং এই বিষয়গুলোকে একটি পরিকল্পিত প্ল্যানের আওতায় আনতে যেয়ে প্রথমদিকে সম্ভবত দায়িত্বপ্রাপ্ত সংস্থাসমূহের বিলম্ব ঘটে।
ঘ. সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ন যে বিষয়টি আমাদের প্রত্যকের জানা থাকা দরকার যে আমাদের দেশে দূর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রান বিতরন বিভাগের আওতায় দূর্যোগ ব্যবস্থাপনা ব্যুরো রয়েছে। ২০১১ সালে প্রকাশিত Standing Order On Disaster (SOD) তে Emergency Response এর আওতায় বিশেষ করে ভূমিকম্প অথবা Urban Crisis এর অংশ হিসেবে Building Collapse এর বিষয়গুলো ঘটলে Search and Rescue Operation পরিচালনা করার বিষয়টি কিভাবে করা হবে সে বিষয়ে একটি ধারনা সংযোজন করা হয় এর ২২ ও ৪৫ নং পৃষ্ঠায় ।এই ধারনাটি USA তে এই ধরনের পরিস্থিতিতে ব্যবহৃত Incident Command System এর অনুরুপ নামে অভিহিত করা হয়।এখানে উল্লেখ্য যে এই SOD এর ২৪ নং পৃষ্ঠায় উল্লেখ করা হয়েছে “2.3.14 Disaster Management Bureau, MoFDM will develop a detailed Multi-Agency Disaster Incident Management Guideline।” অথচ অতন্ত্য পরিতাপের এবং দূঃখজনক বিষয় সেই ২০১১ সালের পর থেকে অদ্যাবধি এই Multi-Agency Disaster Incident Management Guideline এর বিষয়ে দূর্যোগ ব্যবস্থাপনা ব্যুরো কোন উল্লেখযোগ্য অবদান রাখতে চরমভাবে ব্যর্থ হয়েছে।
এই Multi-Agency Disaster Incident Management বিষয়টি বর্তমানে দেশের এই প্রেক্ষাপটে অত্যন্ত গূরুত্বপূর্ন বিষয় হয়ে দাড়িয়েছে। এই দূর্যোগ ব্যবস্থাপনা ব্যুরো থেকে এই বিষয়ে বিস্তারিত Guideline প্রকাশিত হলে এর উপর ভিত্তি করে সরকারের দায়িত্বপ্রাপ্ত সংস্থাসমূহ তাদের নিজস্ব Multi-Agency Disaster Incident Management System টি তৈরি করতে পারত। এবং এই বিশেষ পরিকল্পিত দূর্যোগ ব্যবস্থাপনা পদ্ধতির মাধ্যমে সরকারের এই দায়িত্বপ্রাপ্ত সংস্থাসমুহ একযোগে সম্বন্বয় সাধনের মাধ্যমে এই ধরনের বিশেষ Urban Crisis যেমন Building Collapse এর বিষয়ে উল্লেখযোগ্য অবদান রাখতে পারতো আরো কার্যকরী ভাবে।এই বিষয়টি অবহেলার কারনে আজ সাভারের এই উদ্ধার কার্যক্রমে সম্বন্বয়হীনতা প্রকাশ পেয়েছে বললে বেশ একটা ভূল বলা হবেনা।
ঙ. দূর্যোগ ব্যবস্থাপনা ব্যুরো কর্তৃক গত ৩০ এপ্রিল ২০০৯ প্রথম কিস্তিতে এবং ১৫ ডিসেম্বর ২০১০ সালে ২য় দফায় আরো কিছু Search and Rescue অপারেশেন ব্যবহৃত যন্ত্রপাতি কিনে আনা হয়। এরপর অদ্যাবধি দূর্যোগ ব্যবস্থাপনার অংশ হিসেবে এই ধরনের যন্ত্রপাতি আর ক্রয় করা হয়নি।এবং এই যন্ত্রপাতি কিছু সেনাবাহিনীর বিভিন্ন জেলায় ক্যান্টনমেন্টে অবস্থিত ডিভিশনসমুহ কে দেয়া হয়। এবং কিছু দেয়া হয় সিটি কর্পোরেশনের আওতায়। কিন্ত সম্প্রতি সাভারের দূর্ঘটনার পরপরইএই ধরনের যন্ত্রপাতির অভাব প্রকট হয়ে দেখা দেয়।দূর্ঘটনার ২য় দিন থেকে এই যন্ত্রপাতি বিভিন্ন সংস্থা অথবা সেনাবাহিনীর বিভিন্ন ডিভিশন থেকে সাভারে অবস্থিত ৯ম পদাতিক ডিভিশনের তত্বাবধায়নে পরিচালিত উদ্ধার কার্যক্রমে সংগৃহীত হয়। এক্ষেত্রে এধরনের উদ্ধার কার্যক্রমে দরকারী এবং জীবনরক্ষাকারী যন্ত্রপাতিসমূহের অবস্থান এবং পরিসংখ্যান এর হালনাগাদ তথ্যসমূহ দূর্যোগ ব্যবস্থাপনা ব্যুরোর নিকট থাকা অত্যন্ত জরুরী ছিল। এক্ষেত্রে এইধরনের যন্ত্রপাতি সমুহের অবস্থান এবং সংরক্ষনের বিষয়ে তথ্যর অভাব এবং অল্পসময়ের মধ্যে এই যন্ত্রপাতি সমূহ সঠিক স্থানে সরবরাহ ব্যর্থ হওয়ায় সম্বন্বয়হীনতা দেখা দেয়।
চ. দূর্যোগ ব্যবস্থাপনা ব্যুরো কর্তৃক কিছু ওয়ার্কশপ, সেমিনার আর কিছু বুকলেট প্রকাশিত করা ছাড়া বিস্তারিত ভাবে কার্যকরী কোন পরিকল্পনা প্রনয়নের বিষয়ে এই সংস্থাটি তেমন কোন উল্লেখযোগ্য ভূমিকা এখন পর্যন্ত রাখতে পারেনি। মূলত এই ব্যুরো মাধ্যমে সঠিক সময়ে Multi-Agency Disaster Incident Management System টি প্রনয়ন করা হলে এর উপর ভিত্তি করে যথাযথভাবে মহড়ার মাধ্যমে উদ্ধার কার্যক্রমের উপর দায়িত্বপ্রাপ্ত সংস্থাসমুহের সদস্যদের কার্যকরী প্রশিক্ষন দেয়া সম্ভব হত। এর ফলে দূর্যোগ মূহুর্তে স্বল্পকালীন সময়ে সম্বন্বয় সাধনের মাধ্যমে উদ্ধার কার্যক্রমকে সুষ্ঠভাবে সম্পন্ন করা সম্ভব হত।
ছ.যে কোন দূর্যোগ ঘটার পর ঘটনাস্থলে দেখা যায় সরকারের বিভিন্ন সংস্থার মধ্যে দায়িত্বের বিষয়টি কোনভাবে অন্যর ঘাড়ে ফেলা যায় কিনা সে বিষয়ে একটা ঠান্ডা লড়াইয়ে ব্যস্ত থাকার অর্থাৎ সরল বাক্যে যাকে কিনা দায়িত্ব এড়ানোর চেষ্টা হিসেবে অভিহিত করা যায়। এক্ষেত্রে সরকারের দায়িত্বপ্রাপ্ত সংস্থা কর্তৃক সুনির্দিষ্ট ভাবে দ্রুততার সাথে দূর্যোগস্থলে উদ্ধার কার্যক্রমের কেন্দ্রীয় দায়িত্ব কোন সংস্থা বা ব্যক্তির নিকট হস্তাহন্তরের বিষয়টি অত্যন্ত দ্রুততার সাথে সমাধান করা গেলে সম্বন্বয়হীনতার বিষয়টি এড়ানো সম্ভব হত।
জ. দূর্ভাগ্যর বিষয় যে এখনও পর্যন্ত আমরা আমাদের এই ঝুঁকিপূর্ন ঢাকা শহরের জন্য RESCUE FIELD OPERATIONS GUIDE (ROG)প্রস্তত করতে পারিনি। এই ধরনের গাইড বা নির্দেশিকা সাভারের রানা প্লাজার মত দূর্ঘটনাস্থলের উদ্ধার কার্যক্রমে বা এর চেয়ে বড় মাত্রার কোন উদ্ধার কার্যক্রমে বিশেষ করে ভূমিকম্পের মত কোন দূর্যোগে উদ্ধারকর্মীদের জন্য বিশেষ সহায়ক ভূমিকা পালন করে এবং উদ্ধার কার্যক্রমকে তরান্বিত করে।এখানে উদাহারন স্বরুপ একটি RESCUE FIELD OPERATIONS GUIDE (ROG) এর নমুনা যা কিনা Federal Emergency Management Agency (FEMA) কর্তৃক প্রনীত এবং সমগ্র আমেরিকার বিভিন্ন রাজ্যে এই নির্দেশিকাটি একটি গাইডলাইন হিসেবে ব্যবহৃত হয়ে আসছে।
মূল্যায়নবনামপূর্বপ্রস্ততি (Assessment Vs Preparedness)
৪. সাভারের এই রানা প্লাজা শুধুমাত্র একটি বিল্ডিং ধ্বংসাবশেষ সরাতে এবং উদ্ধার কার্যক্রমে যে সমস্যা দেখা দিয়েছে এর ফলে একটি বিষয়ে আমাদের আসলেই ভেবে দেখার সময় হয়েছে আমরা আমাদের মূল্যায়নের উপর ভিত্তি করে কতটুকু পূর্ব প্রস্ততি নিতে পেরেছি। একটা বিল্ডিং ধ্বসে আজ আমাদের সমস্ত সামর্থ্য নিয়োগ করতে হচ্ছে অথচ ঢাকা এমনকি পুরো বাংলাদেশ আজ একটি বড় ভূমিকম্পের হুমকীর মুখে দাড়িয়ে রয়েছে। সেক্ষেত্রে এই ধরনের বড় ভূমিকম্পের ক্ষেত্রে আমরা কোথায় গিয়ে দাড়াবো সেটা কি আমরা আদৌ ভাবছি। এ যাবৎ Comprehensive Disaster Management Programme(CDMP) এর সার্বিক তত্বাবধায়নে তৈরী করা হয়েছে ঢাকা, সিলেট এবং চট্টগ্রামের মত বড়বড় শহরের ভুমিকম্পের ঝুঁকির উপর ভিত্তি করে Earthquake Contingency Plan । যার উপর ভিত্তি করে সরকারের অধীনে বিভিন্ন সংস্থাসমূহ নিজস্ব মন্ত্রনালয়ের জন্য পৃথক Contingency Plan তৈরী করবে এবং সকল সংস্থার নিজস্ব Contingency Planগুলোর আবার বিভিন্ন মহড়ার মাধ্যমে প্রয়োজন রয়েছে সম্বন্বয় সাধনের । এই ধরনের একটি প্রস্ততির ক্ষেত্রে রয়েছে আমাদের বিরাট শুন্যতা। আমার জানা মতে সরকারের সকল সংস্থার মধ্যে একমাত্র সশ্বস্ত্র বাহিনী শুধুমাত্র তাদের বাহিনী সমূহের জন্য একটি বিস্তারিত Contingency Plan তৈরী করেছে ঢাকাকে কেন্দ্র করে। এবং সেই Contingency Plan কেও সম্পূর্ন বলা যাবেনা কারন সশ্বস্ত্র বাহিনীর এই Contingency Planটি কে বাস্তবিক ভাবে অন্যান্য মন্ত্রনালয়সমূহের Contingency Plan এর সাথে কোন ধরনের সম্বন্বয় করা এখনও পর্যন্ত সম্ভবপর হয়নি এবং স্বাস্থ্য মন্ত্রনালয়ের Contingency Plan এখনও পরিকল্পনা পর্যায়ে রয়েছে অথচ ঢাকা শহর দাড়িয়ে আছে একটি বড় ভূমিকম্পের ঝুঁকির মধ্যে এবং একটি মাঝারী ধরনের ভূমিকম্প হলে চিকিৎসা এবং ঔষধ সেবার জন্য স্বাস্থ্য মন্ত্রনালয়ের রয়েছে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ন ভূমিকা । যে মহড়াগুলো এখন পর্যন্ত করা হয়েছে সেখানে Ad Hoc ভিত্তিতে কাজ করা হয়েছে, অর্থাৎ এখানেও একটি পরিকল্পিত সম্বন্বয়হীনতার অভাব রয়েছে।আমাদের পূর্ব প্রস্ততির মধ্যে রয়েছে ডজন খানেক সেমিনারের আয়োজন এবং দিস্তা খানেক কাগজ খরচ করে পেপার ওয়ার্ক করা। পেপার ওয়ার্ক এবং গবেষনার অবশ্যই প্রয়োজন রয়েছে। কিন্ত যে সকল মূল্যায়ন ইতিমধ্যে সম্পন্ন হয়েছে অথচ আমরা সেই বিষয়ে এখনো কোন কার্যকর এবং বাস্তবিক পদক্ষেপ গ্রহন করিনি সেক্ষেত্রে নতুন করে আরো নতুন গবেষনার কোন প্রয়োজন রয়েছে কিনা সেই বিষয়টি ভেবে দেখা দরকার।
৫. আমাদের পূর্ব প্রস্ততির মধ্যে যে বিষয়টি আমাদের পরিকল্পনার মধ্যে রাখা অত্যন্ত প্রয়োজন ছিল, সেটি হল এধরনের উদ্ধার কার্যক্রমে আমাদের নিজস্ব প্রশিক্ষিত জনবলের এবং আধুনিক প্রযুক্তির যন্ত্রপাতির অভাব ছিলো । আমাদের ঢাকা শহরের যেখানে সরকারী হিসাব মতে বিল্ডিং কোড অনুযায়ী মাত্র ১০ ভাগ ইমারত নির্মান করা হয়েছে এবং বাকী ৯০ ভাগ ইমারত যেকোন বড় বা মাঝাড়ী ধরনের ভূমিকম্পের ক্ষেত্রে ঝুঁকিপূর্ন । সেক্ষেত্রে আমাদের উচিত দ্রুততার সাথে আন্তজার্তিক পরিমন্ডলে বিভিন্ন দেশের উদ্ধার এবং জরুরী সাহায্য প্রতিষ্ঠানের সাথে শান্তিকালীন সময়ে যোগাযোগ প্রতিষ্ঠা করা ও তাদের সাথে এই যোগাযোগ কে চলমান রাখা । সেই সকল প্রতিষ্ঠানের প্রশিক্ষকদের প্রয়োজনে দেশে এনে অধিক সংখ্যক ব্যক্তিকে বিভিন্ন প্রশিক্ষনে প্রশিক্ষিত করা। এর ফলে একদিকে যেমন দেশে শান্তিকালীন সময়ে অধিক সংখ্যক প্রশিক্ষিত উদ্ধার কর্মী তৈরী করা যাবে অন্যদিকে এই ধরনের যৌথ কার্যক্রমের কারনে এই ধরনের প্রতিষ্ঠান সমূহের সাথে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক স্থাপনের ফলে প্রয়োজনের মূহূর্তে তাদের সাহায্য আমাদের কাজে লাগালো যাবে। এই সকল প্রতিষ্ঠানের তালিকা দূর্যোগ ও ত্রান মন্ত্রনালয়ের মাধ্যমে পররাষ্ট্র মন্ত্রনালয়ের কাছে হস্তান্তর করা যেতে পারে । এই পদক্ষেপ সমূহ পূর্বে নেয়া হলে আজ রানা প্লাজায় সংঘটিত এই ধরনের দূর্যোগ মূহূর্তে দূর্যোগ ব্যবস্থাপনা ব্যুরো, পররাষ্ট্র মন্ত্রনালয়ের মাধ্যমে অতি দ্রুততার সাথে সেইসব দক্ষ জনবল ও প্রযুক্তি সম্পন্ন প্রতিষ্ঠানের কাছে সাহায্যর আবেদন করতে পারতো।
দূর্যোগ ব্যবস্থাপনা একটি চলমান প্রক্রিয়া
৬. আমাদের দেশে এই দূর্যোগ ব্যবস্থাপনা বিষয়টি এখনো একটি নতুন বিষয় বলে অনেকে ভেবে থাকেন। কারন এই বিষয়টি দীর্ঘদিন পর আমাদের দেশে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে সংযোজিত হচ্ছে বা ইতিমধ্যে হয়েছে এবং বর্তমানে কিছু কিছু ইলেকট্রনিক মিডিয়া ধারাবাহিক ভাবে জলবায়ু পরিবর্তন বা পরিবেশ বিপর্যয়ের বিষয়ে ধারাবাহিক ভাবে কিছু অনুষ্ঠান প্রদর্শনের করছে এবং প্রিন্ট মিডিয়া প্রকাশ করছে বিভিন্ন লেখা এই দূর্যোগ ব্যবস্থাপনার উপর। ফলে জাতীয় পর্যায়ে জনসাধারন এখন এই বিষয়টি সম্পর্কে জানতে পারছে। এছাড়া সাম্প্রতিককালে ঘটে যাওয়া বেশ কটি দূর্যোগের কারনে এই বিষয়টি একাধিকবার উঠে এসেছে আলোচলার কেন্দ্রবিন্দু হিসেবে অথচ এই বিষয়ে বহুপূর্ব থেকেই অনেক গবেষনা এবং পরিকল্পনা গ্রহন করা হয়েছে উচ্চ পর্যায় থেকে মাঠ পর্যায় পর্যন্ত কিন্ত এই প্রক্রিয়া ধারাবাহিকতা কোন সরকারের আমলেই সঠিকভাবে ধরে রাখা যায়নি। বিশেষ করে দেশে যখনই কোন বড় আকারের দূর্যোগ সংঘটিত হয় তার পরপরই এই বিষয়ক সরকারের বিভিন্ন দায়িত্বপ্রাপ্ত মন্ত্রনালয়ের কুম্ভকর্নের ঘুম ভেংগে তারা জেগে উঠে এবং কিছুদিন পর আবার যখন পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে আসে তারা আবার তাদের শীত নিদ্রায় গমন করেন। দূর্যোগ ব্যবস্থাপনা বিষয়টির সাথে দেশের সম্পদ এবং জনসাধারনের জীবন নির্ভর করছে। বাংলাদেশের মত ঘন ঘন দূর্যোগ আক্রান্ত দেশের জন্য কোনভাবেই এই বিষয়কে তুচ্ছ করে দেখার অবকাশ নেই।
৭. ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ে দূর্যোগ ব্যবস্থাপনার এক অধ্যাপক একদিন আমাদের ক্লাশে বলছিলেন যে আমাদের দেশের মানুষের একটি চারিত্রিক বিশিষ্ট্য রয়েছে যা একদিকে ভাল আবার মন্দও বটে। ব্যাখ্যা করে উনি বললেন যখন আমাদের দেশে বড় কোন দূর্যোগ হয় তখন ব্যাপক সম্পদ আর প্রানহানির পরও এই দেশের মানুষেরা আবারও নতুন উদ্যমে ঘর বাঁধে, জীবনের স্পন্দন ফিরে আসে বিধ্বস্ত লোকালয়ে কারন আমাদের দেশের মানুষেরা শোককে ভুলে যেতে পারে বলেই নতুন ভাবে বেঁচে থাকার প্রেরনা পায়।এই বৈশিষ্ট্য অনন্য এবং অসাধারন কিন্ত সমস্যা হচ্ছে যে শোককে ভুলে যাওয়ার সাথে সাথে তারা ভুলে যায় গত ঝড়ে তাদের সম্পদহানির কারনগুলো ফলে একই কারনে তারা বারেবারে একই ধরনের দূর্যোগে ক্ষতিগ্রস্থ হয়। আমাদের জাতিগত একটি সমস্যা আমরা ভুলে যাই দ্রুত আর সে কারনেই দেখা যায় সাভারের স্পেকট্রাম, মহাখালীর ফিনিক্স এবং সর্বশেষ সাভারের রানা প্লাজার মত মর্মান্তিক বিল্ডিং ধ্বসের সিরিজ ঘটনা। কিন্ত অবাক হওয়ার বিষয় এই যে প্রতিটি ঘটনার পর সরকারের তরফ থেকে উচ্চ পর্যায়ের তদন্ত কমিটি গঠন, দোষী ব্যক্তিদের খুঁজে বের করে আইনের মাধ্যমে তাদের শাস্তি নিশ্চিত করা এবং সর্বোপরি যে কারনে দূর্ঘটনাসমূহ ঘটছে তার প্রতিকার এবং প্রতিরোধের ব্যবস্থা নিশ্চিতকরনে সকল কার্যক্রম মাঝপথে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে আসলে কুম্ভকর্নের ঘুমে সব কিছু ভেসে যায়, হারিয়ে যায়। এমনকি আমাদের বর্তমান প্রিন্ট এবং ইলেকট্রনিক মিডিয়াগুলো বিশ্ব মুক্তবাজারের যুগে মুনাফার লোভে এইসব জনকল্যানমূলক বিষয়গুলোর ফলোআপ রিপোর্টের ধারাবাহিকতা বজায় রাখার চেয়ে অন্য কোন দূর্যোগের বা ব্রেকিং নিউজের লাইভ দেখাতে ব্যস্ত হয়ে পড়ে। এবং এই ভাবেই সকলের অগোচরে এই বিষয়গুলো অসমাপ্ত থেকে যায় , একসময় নতুন কোন দূর্ঘটনা না ঘটলে মানুষ এইসব ঘটনাকে খুব একটা মনে রাখতে চায়না । আর এভাবেই দূর্যোগ ব্যবস্থাপনার এই চলমান প্রক্রিয়া কুম্ভকর্নের ঘুমে থমকে যায় এবং আমরা বারেবারে ক্ষতিগ্রস্থ হতে থাকি।
৮. একটি বিষয় পত্রিকায় বেশ আলোচিত হয়েছিলো যে রানা প্লাজার দূর্ঘটনা ঘটার পর নাকি আমাদের দেশে এই চলমান উদ্ধার প্রক্রিয়ায় বিদেশী কিছু রাষ্ট্র অংশগ্রহন করতে চেয়েছিলো কিন্ত সরকারের উচ্চমহলের সাহায্য নেয়ার বিষয়ে উৎসাহ না থাকায় তারা অংশ নিতে পারেনি। এ বিষয়ে সরকারের তরফ থেকে বলা হয়েছিলো তারা কোন য্ত্রপাতি নয় বরং শুধুমাত্র বিশেষজ্ঞ পাঠাতে চেয়েছিলো। সংবাদটি যদি সত্য হয় তাহলে সরকারের এই সির্ধান্ত খুব একটা ভুল ছিলোনা। কারন আমরা চাইনা আমাদের দেশে সব বিদেশী বিশেষজ্ঞরা এসে আমাদের ল্যাবরেটরীর গিনিপিগের মত ব্যবহার করে গবেষনাপত্র তৈরী করুক। তবে এখানে সরকার একটি গুরুত্বপূর্ন পদক্ষেপ নিতে পারতো, পররাষ্ট্র মন্ত্রনালয়ের মাধ্যমে বিভিন্ন দেশের কাছে আধুনিক যন্ত্রপাতি এবং প্রযুক্তির সাহায্য আবেদন করলে হয়ত এক্ষেত্রে কোন দেশ এগিয়ে আসতো। রানা প্লাজায় আটকা পড়া অনেক মানুষের কাছে অক্সিজেন,পানি এবং খাবার দিয়ে স্থানী সংস্থার মাধ্যমে আরো কয়েকটি দিন বাচিঁয়ে রেখে পরবর্তীতে বিদেশী সংস্থাসমূহের আধুনিক যন্ত্রপাতি আগমনের সাথে সাথে সেগুলো যথার্থ প্রয়োগের মাধ্যমে আরো কিছু প্রান হয়ত বা বাঁচানো যেত। যদিও এটি একটি অনুমান নির্ভর সম্ভবনা কিন্ত ভবিষৎ এ বিষয়ে সরকারকে আরো সচেতন হতে হবে।
ভূল থেকে শিক্ষা
৯. আমাদের এই ভূলগুলোকে ভূলে গেলে চলবেনা। কুম্ভকর্নের ঘুম ভেংগে দিতে হবে সকল দায়িত্বপ্রাপ্ত সংস্থাসমূহের। এই বিষয়ে অগ্রনী ভূমিকা পালন করতে হবে ইলেকট্রনিক এবং প্রিন্ট মিডিয়ার। সংসদের এই দূ্র্যোগ সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির জবাবদিহিতা একদিকে যেমন নিশ্চিত করতে হবে অন্যদিকে সরকারের বাজেটের একটি নির্দিষ্ট অংশ এই খাতে সঠিক পরিকল্পনার মাধ্যমে প্রয়োগ করতে হবে। এই দূ্র্যোগ ব্যবস্থাপনায় যে সকল দেশ এগিয়ে গেছে তাদের অনুসৃত পথকে আমাদের পারিপার্শ্বিকতার সাথে খাপ খাইয়ে আমাদের কে এগিয়ে যেতে হবে একইভাবে। স্বাধীনতার দীর্ঘ দিন পরও পাশ্ববর্তী দেশ ভারতের ছিলোনা কোন সুপরিকল্পিত দূর্যোগ ব্যবস্থাপনার উপর কোন পরিকল্পনা। অথচ সে সময়ে অর্থাৎ ১৯৭২ সালে বাংলাদেশ সরকার স্বাধীনতার পরপরই দেশের উপকূলীয় অন্চলের জনবসতিকে সাইক্লোনের হাত থেকে রক্ষা করার জন্য তৈরী করেছিলো Cyclone Preparedness Programme (CPP) । অথচ এর পরবর্তীতে ভারত অনেকদূর এগিয়ে গেছে এই দূর্যোগ ব্যবস্থাপনায়। ভারত সেই ২০০৫ সালেই তৈরী করেছে Incident Response System যা কিনা তারা USA এর অনুসৃত কার্যকরী দূর্যোগ ব্যবস্থাপনায় ব্যবহৃত একটি পদ্ধতি Incident Command System এর অনুকরনে তৈরী। ভারত ২০০৫ সালে দূর্যোগ ব্যবস্থাপনা আক্ট তৈরী করেছে এবং তাদের এই দূর্যোগ ব্যবস্থাপনা সংক্রান্ত কার্যবলীকে আইনের আওতায় আনতে সক্ষম হয়েছে। তারা সেনাবাহিনীর উপর থেকে নির্ভরতা কমিয়ে প্রদেশসমূহের জন্য ১০০০ জন দূর্যোগ ব্যবস্থাপনার উপর প্রশিক্ষিত সদস্যদের সম্বন্বয়ে তৈরী ১০ টি পূর্নাংগ ব্যাটালিয়ন State Disaster Response Force (SDRF) হিসেবে গঠন করেছে। প্রতিটি বিষয়ে ভারত আজ আমাদের থেকে অনেকদূর এগিয়ে গেছে এবং এটা সম্ভব হয়েছে কোন মেধার জোরে নয় বরং এই কাজে নিয়োজিত ব্যক্তিবর্গের দায়িত্বশীলতা এবং সরকারের মাধ্যমে এই দূর্যোগ ব্যবস্থাপনা বিষয়টিকে সবসময় ধারাবাহিক ভাবে চলমান রাখার জন্য। ছোট্ট একটি উদাহারন দিলে বিষয়টি আরো পরিষ্কার হবে সকলের কাছে। বাাংলাদেশের দূর্যোগ ব্যবস্থাপনার দায়িত্বে নিয়োজিত একটি সংস্থার ওয়েবসাইট আর ভারতের দূর্যোগ ব্যবস্থাপনার দায়িত্বে নিয়োজিত সংস্থার ওয়েব সাইট দেখলে সহজেই অনুমান করা যায় আমাদের এই দূর্যোগ ব্যবস্থাপনার উপর আমরা কতটুকু কাজ করেছি বা এগিয়ে গিয়েছি। আমাদেরকে এই ভূলগুলো থেকে বেরিয়ে আসতে হবে এবং এই দূর্যোগ ব্যবস্থাপনা পদ্ধতিকে ঢেলে সাজাতে হবে এবং চলমান একটি প্রক্রিয়ার মাধ্যমে এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে।
১০. সাভারের রানা প্লাজায় যে সকল ভুল বা ত্রুটি ধরা পড়েছে সেই ত্রুটি সমুহ After Action Review (AAR)এর মাধ্যমে লিপিবদ্ধ করতে হবে। এক্ষেত্রে সরকারী সংস্থার পাশাপাশি বিশ্ববিদ্যালয়ের দূর্যোগ ব্যবস্থাপনা বিভাগে এই ঘটনাগুলোকে কেস স্ট্যাডি হিসেবে বিশ্লেষন করতে হবে এবং এর উত্তরনের পথগুলো বের করে আনতে হবে।সকলের সম্মিলিত প্রয়াসে আমাদের ভূলগুলোকে চিন্হিত করে তার সংশোধনের বিষয়ে সরকারের মন্ত্রনালয় সমূহকে নিজ নিজ পরিধি অনুযায়ী সাহায্য এবং সহযোগিতা করতে হবে। এক্ষেত্রে মিডিয়া জনসচেতনতা বৃদ্ধির জন্য শুধু সমালোচনা নয় বরং পাশাপাশি সংশোধন ও গঠনমূলক আলোচনার মাধ্যমে সাহায্য করতে পারে । সামাজিক ওয়েবসাইট এখন একটি শক্তিশালী মাধ্যম হিসেবে ইতিমধ্যে এর প্রমান রাখতে সক্ষম হয়েছে। এই সামাজিক ওয়েবসাইটে এই বিষয়ে গঠনমূলক এবং তথনির্ভর আলোচনা একদিকে যেমন সচেতনতা বৃদ্ধিতে কার্যকরী ভূমিকা পালন করতে পারে অন্যদিকে সরকারের কার্যক্রমের বিভিন্ন ভুলত্রুটি সমুহের সমালোচনার মাধ্যমে সরকারকের নীতিনির্ধারক মহলকে সচেতন করতে পারে তাদের ত্রুটি সংশোধনের জন্য।
উপসংহার
১১. গত কয়েকদিন সারা জাতি অবলোকন করেছে রানা প্লাজার মর্মান্তিক দূর্ঘটনার একেকটি চিত্র। সারা জাতি দেখেছে আমরা যন্ত্রপাতির অভাব আর সম্বন্বয়হীনতার জন্য একটি বিল্ডিং ধ্বসে কতটা অসহায়।আমরা আমাদের দায়িত্ব সঠিকভাবে পালন করলে এই ধরনের দূর্ঘটনা এড়াতে পারতাম কিন্ত বাস্তবে সেটা হয়নি। আমাদের সকলের অসচেতনতার জন্য এই ধরনের ঘটনা ঘটছে। এককভাবে শুধু সরকারকে দায়ী করলে হবেনা বরং সরকারের পাশাপাশি আমাদের প্রতিটি নাগরিককে এই বিষয়ে সচেতন হতে হবে।মিডিয়াকে আরো সচেতন হতে হবে এবং সঠিক ফলোআপ রিপোর্টের মাধ্যমে সরকারের দায়িত্বপ্রাপ্ত সংস্থাসমুহের জবাবদিহিতা জনগনের সামনে নিশ্চিত করতে হবে। আমরা আর চাইনা আর কোন শাহীনা আমাদের মাঝ থেকে এভাবে হারিয়ে যাক, আমরা চাইনা আমাদের পতাকা এভাবে বারেবারে অর্ধনমিত থাকুক একেকটি নতুন শোকদিবসে। তবু সবকিছুর পর শুধু এইটুকু বলবো সব হারিয়ে যাওয়ার পর একটি জিনিষ আমরা ফিরে পেয়েছি আমাদের মাঝে মানুষের প্রতি মানুষের অকৃত্তিম ভালোবাসা আর মমত্ববোধ।