“মনার্ক বাটারফ্লাই বা রাজা প্রজাপতি”র বিস্ময়কর উড়ে চলা

মাইন রানা

কানাডার দক্ষিণাঞ্চলে কমলা ও কালো রঙ্গিন পাখা বিশিষ্ট খুব সুন্দর এক প্রজাপতি উড়ে বেড়ায় গাছে গাছে। সেপ্টেম্বর মাস এলেই উত্তরের ঠাণ্ডা বাতাস জানান দেয় শীত আসছে। তাই তাদের এবার প্রস্তুতি নিতে হবে উত্তরের এই নিজের দেশ ছেড়ে দক্ষিণের নিরাপদ কোন এক উষ্ণ স্থানে যাওয়ার। যে প্রজাপতিটি জীবনে কোনদিন ১০০ গজও উড়ে নাই সেই প্রজাপতিটি লেক সুপিরিয়র পাড়ি দেয় বাতাসে ডানা মেলে। অথচ লেক সুপিরিয়র তিনশত মাইলেরও বেশী প্রস্থ। লেক পাড়ি দেওয়া হলেও “মনার্ক প্রজাপতির” দক্ষিণের এই যাত্রা শেষ না। তাদের লক্ষ্য মেক্সিকোর “ওয়ামেল অরণ্য”। monarch-butterfly_630_600x450

প্রায় তিন মাস পর অবশেষে মেক্সিকোতে তাদের গন্তব্যে পৌঁছে। কিন্তু ততক্ষণে তারা পাড়ি দিয়ে ফেলে তিন হাজারেরও অধিক মাইল। মেক্সিকোর পর্বতমালার পাইন জাতীয় “ওয়ামেল” গাছে এসে আশ্রয় নেয়। তবে একা নয় উত্তর আমেরিকা থেকে আগত আরও লক্ষ লক্ষ, কোটি কোটি। মনার্ক প্রজাপতির কল্যাণে মেক্সিকোর “ওয়ামেল” গাছগুলি নতুন কমলা রঙ ধারণ করে, প্রজাপতির আবরণে ডেকে যায় পুরো গাছ। শীত এখানেও শুরু হয়। তবে কানাডার মত জমে যাওয়া মরণ শীত নয়। প্রচণ্ড হিম বাতাস আর তুষার চাদরে আবৃত শীতের এই পুরো সময়টা প্রজাপতিগুলি কাটিয়ে দেয় একসাথে একদম কোনোরকম নড়াচড়া না করে। monarch-cloud-mexico-120316-02

ফেব্রুয়ারির মাঝামাঝিতে বসন্ত ঋতু যখন তার আগমনী বার্তা নিয়ে আসে তখন তাদের ঘুম ভাঙ্গে আর নতুন প্রজন্ম কী করে পৃথিবীতে আসবে সে চিন্তায় অস্থির হয়ে যায়। কারণ তাদের জীবন প্রদীপ নিভে যাওয়ার সময় চলে আসছে। ডিম পাড়ার জন্য তারা এবার বিপরীত দিকে অর্থাৎ উত্তরের দিকে রওয়ানা দেয়। আমেরিকার টেক্সাসে এসে তারা সদ্য অঙ্কুরিত “মিল্কউইড” গাছে ডিম পারে আর এই “মিল্কউইড” গাছই নতুন প্রজন্মের একমাত্র খাবার। নতুন প্রজন্ম পৃথিবীর আলো দেখার অনেক আগেই মা প্রজাপতি মারা যায়। monarch

নতুন পাখার এই সদ্য নতুন প্রজন্ম আরও উত্তরের দিকে যেতে থাকে এবং মে মাসে উত্তর আমেরিকার মিনিসোটায় এসে তারাও আরেক নতুন প্রজন্মের জন্ম দেয় ও মা প্রজাপতি মারা যায়। গ্রীষ্মের উত্তাপে আস্তে আস্তে তারা কানাডার দিকে যেতে থাকে এবং পরবর্তী তিন মাসে আরও দুইটি নতুন প্রজন্ম পৃথিবীর আলো দেখে। অতঃপর কানাডায় যে প্রজন্মটি উড়ে বেড়ায় তারা মেক্সিকোর সেই লক্ষ লক্ষ প্রজাপতিদের চতুর্থ বংশধর যারা আবারও লম্বা ভ্রমণের প্রস্তুতি নেয় মেক্সিকো যাওয়ার। যুগ যুগ ধরে এভাবেই তারা হাজার হাজার মেইল উড়ে উড়ে নিজেদের বংশ টিকিয়ে রেখেছে।

কি সেই রহস্য ??
১. যার কারণে মনার্ক প্রজাপতি বুঝতে পারে কখন পরিযায়ন বা মাইগ্রেশন শুরু করতে হবে আর কি করেই বা জানে যে দক্ষিণে যেতে হবে?
২. যারা কখনো ১০০ গজ দূরেও যায় নাই কি করে তারাই তিন হাজার মাইল পাড়ি দেয় কোন সাহায্য ছাড়াই?
৩. মেক্সিকোর বিশাল পর্বত ও বিস্তৃত উপত্যকায় কি ভাবে তারা নির্দিষ্ট “ওয়ামেল” গাছগুলি খুঁজে পায়?
৪. সম্পূর্ণ নতুন বংশধর জন্মের পর পরই কিভাবে বুজতে পারে উত্তরে যেতে হবে আর সেই পথ ও তারা কি করে তারা ঠিক ঠিক চিনে নেয়?
এসব অসংখ্য রহস্য উদ্ধারে কাজ করে যাচ্ছে জীববিজ্ঞানীরা কিন্তু প্রকৃতির সব রহস্য কি উদ্ধার করা সম্ভব?

ছবিঃ ইন্টারনেট

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Discover more from EnvironmentMove.earth

Subscribe now to keep reading and get access to the full archive.

Continue reading

Verified by ExactMetrics