মাছশূন্য হয়ে যাচ্ছে বঙ্গোপসাগর
আজিজুর রহমান
বঙ্গোপসাগরে বাংলাদেশ অংশে রয়েছে দক্ষিণ-পূর্বে টেকনাফ থেকে দক্ষিণ-পশ্চিমে সাতক্ষীরা পর্যন্ত ৭১০ কিলোমিটার তটরেখা এবং উপকূল থেকে সাগরে ২০০ নটিক্যাল মাইল পর্যন্ত একান্ত অর্থনৈতিক জোন বা ইইজেড। এর আওতায় রয়েছে ১ লাখ ৬৬ হাজার বর্গকিলোমিটার এলাকা যা দেশের সর্বমোট আয়তনের চেয়েও বেশি। বঙ্গোপসাগরের একান্ত অর্থনৈতিক জোনের যে অংশটি সামুদ্রিক মাছ সম্পদে সমৃদ্ধ তা কন্টিনেন্টাল সেলফ নামে খ্যাত। এই মাছ ক্ষেত্রটির বিস্তৃতি প্রায় ৩২ হাজার বর্গকিলোমিটার। এ ক্ষেত্রটিতে রয়েছে সাগরের অন্যতম প্রধান ৩টি মাছের ভাণ্ডার। এগুলো হলো-দক্ষিণ-পূর্বে কক্সবাজারের অদূরে সাউথ প্যাসেজ, মধ্যাংশে পটুয়াখালীর কুয়াকাটার দক্ষিণে মিউল গ্রাউন্ড এবং দক্ষিণ-পশ্চিমে সুন্দরবনের দক্ষিণে দুর্বলারচরে অদূরে সোয়াচ অব নো গ্রাউন্ড। এ বিশাল সামুদ্রিক এলাকা নানা প্রজাতির মাছসহ জলজ প্রাণীতে ভরপুর। মোট ৪৭৫ প্রজাতির মাছ ও ৩৬ প্রজাতির চিংড়িসহ ৫১১ প্রজাতির মাছ নিয়ে সর্বমোট ৭৪৭ প্রজাতির জলজ প্রাণিসম্পদ রয়েছে বঙ্গোপসাগরে। এখান থেকে ৫৫ প্রজাতির মাছ অহরহ করা হয় বাণিজ্যিক ভিত্তিতে। বছরে ৩ লাখ ৫০ হাজার টন থেকে ৪ লাখ টন মাছ ও চিংড়ি আহরণ করা হয়। যা দেশের মোট চাহিদার ২১ ভাগ। একসময় প্রচুর মাছ জালে ধরা পড়লেও এখন দিন দিন এর পরিমাণ তুলনামূলক অনেক কমে গেছে। সামুদ্রিক মাছ জরিপ ব্যবস্থাপনা ইউনিটের রিপোর্ট থেকে জানা যায়, প্রতি বছরই মাছ আহরণের পরিমাণ সার্বিকভাবে কমে যাচ্ছে। অন্যদিকে দিন দিন বেড়ে যাচ্ছে মাছ ধরার নৌযানের সংখ্যা। রিপোর্টে আরো জানা যায়, দেশের সমুদ্রসীমায় ৫০ হাজারেরও বেশি অযান্ত্রিক ও যান্ত্রিক নৌকা এবং ট্রলার সারা বছর ধরে মাছ ধরার কাজ চালিয়ে যাচ্ছে। এসব নৌযানের এক পঞ্চমাংশই লাইসেন্সবিহীন। নৌযানগুলো আইন-কানুনের তোয়াক্কা না করে নির্বিচারে মাছ ধরে যাচ্ছে। এরা মাছ ধরার নির্ধারিত সিজন ও সীমানা মানছে না। মানছে না চিংড়ি জালের ব্যাগের ফাঁসের নির্ধারিত আয়তনও। অনিয়ন্ত্রিত আহরণের ফলে নার্সারি গ্রাউন্ড থেকে শিশু-কিশোর মাছ এবং ফিশিং গ্রাউন্ড থেকে হবু মা চিংড়ি যথেচ্ছ নিধন করা হচ্ছে। মৎস্য বিজ্ঞানীদের মতে, একটি মাছ আহরণের আগে মাছটিকে অন্তত একবার প্রজননের সুযোগ দেয়া উচিত। বিভিন্ন জরিপ ও গবেষণা রিপোর্ট থেকে জানা যায়, ট্র্যাশ ফিশ বা সাধারণ মাছ হিসেবে বছরে ৩৫ হাজার থেকে ৪০ হাজার টন বিভিন্ন প্রজাতির মরা মাছ জেলেরা সমুদ্রে ফেলে দিচ্ছে। যার মূল্য কয়েকশ’ কোটি টাকা। বঙ্গোপসাগর বহির্বিশ্বের সঙ্গে আমাদের বাণিজ্যসহ সব যোগাযোগের সিংহদ্বারই শুধু নয়, জীববৈচিত্র্যসমৃদ্ধ বিশাল এই জলধি বৈচিত্র্যময় বিপুল জলজ প্রাণী, উদ্ভিদ ও খনিজ সম্পদেরও খনি। অসংখ্য মৎস্যজীবীর জীবন-জীবিকার এ এক মহা উৎস। জাতীয় পুষ্টি আর রফতানি আয় বিবেচনায়ও বঙ্গোপসাগরের মাছ আমাদের অমূল্য সম্পদ। জাতির অস্তিত্বের অবিচ্ছেদ্য অংশ এ জলভাগ এবং এর সম্পদকে রক্ষা করা আমাদের সবার দায়িত্ব।
সূত্রঃ দৈনিক মানবকণ্ঠ