মৌসুমী ফলসহ সকল খাদ্য-দ্রব্যে বিষাক্ত রাসায়নিক পর্দাথ ব্যবহার রোধে সরকারী পদক্ষেপ দাবী
মধুমাস উপলক্ষে বাজারে তরমুজ, আম, জাম, লিচু, আনারস, কাঁঠালসহ বাহারি সব সুস্বাদু ও তৃপ্তিদায়ক ফলের সমাহার থাকলেও এগুলো কেমিক্যালমুক্ত কিনা এ ব্যাপারে ক্রেতা নিশ্চিত হতে পারছেন না। ফল পাকানো এবং সংরক্ষণ করতে ব্যবসায়ীরা ফলে অহরহ ব্যবহার করছে বিষাক্ত ক্যামিকেল। বিদেশ থেকে অবাধে আসছে ভেজাল এবং বিষযুক্ত ফল, শিশুখাদ্যসহ নিত্য ভোগ্যপণ্য। এই বিষাক্ত বা ভেজাল খাদ্য মানবদেহে মারাত্মক প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করছে। খাদ্যের মাধ্যমে বিষ/ভেজাল গ্রহণের ফলে শ্বাসকষ্ট, অ্যাজমা, গ্যাস্টিক লিভার নষ্ট হয়ে যাওয়াসহ ক্যান্সারের মতো মারণঘাতী রোগব্যাধি বাড়ছে আশংকাজনকভাবে। যার চিকিৎসার ব্যয়ভার বহন করতে যেয়ে রোগীর পরিবার-পরিজন সর্বশান্ত হচ্ছে। তাছাড়া রাষ্ট্রকে স্বাস্থ্য খাতের বরাদ্দ থেকে বিপুল পরিমাণ অর্থ খরচ করতে হচ্ছে। রাসায়নিকের মিশ্রণে বিষাক্ত খাদ্যের কারণে সৃষ্ট এ বিপর্যয় রোধে সরকারীভাবে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে কার্যকরী পদক্ষেপ গ্রহণ করা জরুরী। আজ ১৬ মে ২০১৪, সকাল ১০:৩০ টায় জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে গ্রীন মাইন্ড সোসাইটির উদ্যোগে আয়োজিত এক অবস্থান কর্মসূচী থেকে উক্ত অভিমত জানানো হয়।
সিটিজেন রাইটস মুভমেন্ট এর সভাপতি তুষার রেহমান এর সভাপতিত্বে এবং গ্রীন ভয়েজ এর সন্ময়কারী হুমায়ুন কবির এর পরিচালনায় উক্ত অবস্থান কর্মসূচীতে বক্তব্য রাখেন গ্রীন মাইন্ড সোসাইটির সভাপতি আমির হাসান, সাধারণ সম্পাদক মো: ফারুক হোসেন, নিরাপদ ডেভলপমেন্ট ফাউন্ডেশন এর চেয়ারম্যান ইবনুল সাইদ রানা, নাগরিক অধিকার সংরক্ষন ফোরমের সহ-সাধারন সম্পাদক মোঃ সেলিম, পরিবেশ বাঁচাও আন্দোলনের হালিম ইমদাদ খান, সুশাসনের জন্য নাগরিক এর আবুল হোসেন, জিএমএস এর আজগর হোসেন প্রমুখ।
বক্তারা বলেন, ভেজাল খাদ্য জনস্বাস্থ্যের জন্য চরম হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে। ভেজাল খাদ্যে বাজার সয়লাব। অবাধে চলছে ভেজাল ও নকলকারীদের দাপট, দৌরাত্য। জীবনধারণের জন্য অপরিহার্য হওয়া সত্ত্বেও ভেজালমুক্ত খাদ্য যেন দুর্লভ হয়ে উঠেছে। ভেজাল খাদ্যপণ্য বাজারজাত করে একশ্রেণীর ব্যবসায়ী হাতিয়ে নিচ্ছে কোটি কোটি টাকা। মানুষ হচ্ছে নীরব হত্যাকান্ডের শিকার। এই ভেজাল সন্ত্রাসে আতঙ্কিত ক্রেতা-ভোক্তা। ভেজাল খাবার খেয়ে নিজেদের অজান্তেই অনেকের দেহে বাসা বাঁধছে নানা রকম মরণব্যাধি। বেড়ে যাচ্ছে নতুন নতুন রোগ ও আক্রান্তের সংখ্যা। পণ্যমূল্যের এই উর্ধগতিতে কষ্টার্জিত টাকার বড় অংশ চলে যাচ্ছে অনাকাঙ্খিত চিকিৎসা খাতে। রোগ বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ভেজাল খাদ্য স্বাস্থ্যের জন্য খুবই ক্ষতিকর। ভেজাল খাবার খাওয়ার পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া ধীরে ধীরে দেখা দেয়। সাধারণ মানুষ এ ব্যাপারে তাই খুব বেশি সচেতন থাকেন না। এ সব রোগের চিকিৎসা ব্যয়বহুল হওয়ায় আক্রান্তদের অনেকেই উন্নত চিকিৎসা নিতে পারেন না। ফলে আক্রান্তদের অধিকাংশই পঙ্গুত্ব বরন করছে আথবা মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ছে।
বক্তারা আরো বলেন, রোগ এবং অকাল মৃত্যু থেকে জাতিকে রক্ষা করতে হলে নিরাপদ খাদ্য নিশ্চিত করার জন্য এখন থেকেই কঠোর আইন প্রণয়ন ও সামাজিক আন্দোলন থেকে শুরু করে সব কিছু করা দরকার। শিক্ষা, যোগাযোগ , জ্বালানী খাতের মত গুরুত্ব দিয়ে মহাপরিকল্পনা হাতে নিতে হবে। কারণ যাদের জন্য এত কিছু সেই জনগণই যদি সুস্থ না থাকে তাহলে সব পরিকল্পনা অর্থহীন হয়ে যাবে।এর জন্য যা প্রয়োজন সেটা হল সচেতনতা এবং সকলের আন্তরিক উদ্যোগ । তাই দল-মত নির্বিশেষে সবাইকে যার যার অবস্থান থেকে খাদ্যে ভেজালকারীদের বিরুদ্বে কাজ করতে হবে। একটি সুখী ও সমৃদ্ধশালী বাংলাদেশ গড়ার জন্য প্রথমেই প্রয়োজন একটি সুস্থ ও প্রানোচ্ছল আগামী প্রজন্ম। তাই আগামী প্রজন্মকে বাঁচানোর স্বার্থে আমাদেরকে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব খাদ্যে ভেজাল প্রতিরোধ করতে হবে।