যে কারণে ফিলিপাইনে বারবার ঘূর্ণিঝড়……
সুপ্রিয়া সরকার
উষ্ণসাগর, নিম্নউপকূল এবং দারিদ্র্য বুঝিয়ে দেয় কেন ঘূর্ণিঝড় হাইয়ানের মত দুর্যোগ ফিলিপাইনের জন্য বিপদজনক।
ঘূর্ণিঝড় হাইয়ানে ফিলিপাইনে মৃতের সংখ্যা ১০০০০ ছাড়িয়ে গেছে, কিন্তু এমন ভয়ংকর প্রাকৃতিক দুর্যোগ এদেশে নতুন নয়।
প্রতি বছর ঘূর্ণিঝড়, অগ্ন্যুৎপাত ও ভূমিকম্পের মত বিধ্বংসী ঘটনায় ফিলিপাইনে অনেক মানুষ মারা যায়। এর কারণ ৫টিঃ
১। উষ্ণতম সাগর
বিষুবরেখার ঠিক উপরে অবস্থিত ফিলিপাইন পশ্চিম প্রশান্ত মহাসাগরে সৃষ্ট ঘূর্ণিঝড়ের পথে প্রথম স্থলভূমি। তাই ঘূর্ণিঝড়ের প্রাথমিক শক্ত আঘাত ফিলিপাইনের উপর দিয়েই যায়। বিষুবরেখার উষ্ণ পানি ঝড় তৈরির কেন্দ্র,প্রতি বছর প্রায় ২০টি ঘূর্ণিঝড়ের উৎপত্তি হয় এখানে ।
ইসরাইলের তেল আবিব বিশ্ববিদ্যালয়ের বায়ুমণ্ডল বিষয়ক বৈজ্ঞানিক কলিন প্রাইস বলেন, “এটি পৃথিবীতে উষ্ণতম মহাসাগর। আমরা একে ফিলিপাইন ও ইন্দোনেশিয়ার কাছের উষ্ণ জলাশয় বলি,ঘূর্ণিঝড় তৈরির জন্য ২৮০ সেলসিয়াস (৮২.৪০ ফারেনহাইট) এর বেশি তাপমাত্রা দরকার। পশ্চিম প্রশান্ত মহাসাগরের পানির তাপমাত্রা ২৮০ সেলসিয়াসের বেশি,” প্রাইস বলেন।
২। উপকূলের কাছাকাছি বাড়িঘর
বিশ্ব ব্যাংকের হিসাব অনুযায়ী, ফিলিপাইনের নিম্ন উপকূল অঞ্চলে অনেক মানুষের বাস, ৬০% এরও বেশি জনসংখ্যা এ অঞ্চলের বাসিন্দা।
ঘূর্ণিঝড় হাইয়ানে সৃষ্ট জলোচ্ছ্বাস কোন কোন এলাকায় ২৩ ফুট (৭ মিটার) ছিল এবং গড়ে ১৬ ফুট (৫ মিটার) উঁচু ছিল।
এই জলোচ্ছ্বাস লেইট দ্বীপের টাক্লবান শহরের মত নিম্ন জনপূর্ণ এলাকা ভাসিয়ে নিয়ে যায়, যেখানে বিবিসির পরিসংখ্যান অনুযায়ী ১০০০০ এরও বেশি মৃত্যু হয়।
৩। বন উজার
আবহাওয়াবিদ জেফ মাস্টারসের মতে অতীতের ঘূর্ণিঝড়গুলোতে ভূমি ধ্বসের কবলে পড়ে, ঝড়ে বেঁচে যাওয়া অনেকে মারা যায়।
পাহাড়ের গায়ে গাছ না থাকায়, মাটি ধরে রাখার মত যথেষ্ট শিকড় নেই, তাই হঠাৎ জোরে বৃষ্টি হলেই ভূমি ধ্বস হয়।
হাইতিতেও বন উজার করার কারণে ঝড়বৃষ্টিতে ভূমি ধ্বস হয়। ধ্বসের মাটি খাল-নালা ভরাট করে পানি চলাচল বন্ধ করে দেয় যার ফলে পরে কলেরার প্রাদুর্ভাব দেখা দেয়।
৪। আগ্নেয় বলয়
সর্বোপরি, ভুমিকম্প ও আগ্নেয়গিরির বলয়ের উপর ফিলিপাইন অবস্থিত।
প্রশান্ত মহাসাগরের ভূত্বক স্থলভূমির নিচে দিয়ে যাওয়ায় ফিলিপাইনে নিয়মিতভাবে ভুমিকম্প ও সুনামি আঘাত হানে। গত মাসে বহল রাজ্যে ৭.২ মাত্রার একটি ভূমিকম্পে ২২২ জন মারা যায়।
৫। স্বল্প উন্নয়ন
ফিলিপাইনের তরুণ, দরিদ্র জনগোষ্ঠী উপকূলীয় অঞ্চলে স্থানান্তরিত হয়েছে। এ সকল এলাকায় দ্রুত বাসস্থান নির্মাণ এবং অপর্যাপ্ত উদ্বাসন পরিকল্পনা হাইয়ান ধ্বংসের গুরুত্বপূর্ণ কারণ হতে পারে।
প্রকৃতপক্ষে, প্রতিবেদনে জানা যাচ্ছে যে অনেক আশ্রয়স্থলে ঝড়ের বাতাস ও জলোচ্ছ্বাস সহ্য করার ক্ষমতা ছিল না এবং এসকল আশ্রয়স্থলে আশ্রয় নেওয়া অনেক মানুষ মারা গেছে।
ম্যানিলা পর্যবেক্ষণাগার জানিয়েছে যে দীর্ঘ মেয়াদে দারিদ্র্য ও জনসংখ্যার সংমিশ্রণে ফিলিপাইন উপকূলীয় বন্যায় বিশ্বের প্রথম ১০টি দেশের মধ্যে থাকবে।
সূত্রঃ ন্যাশনাল জিওগ্রাফিক