
লাউয়াছড়ায় ‘হিমালয়ান মোল’
বিশ্বজিৎ ভট্টাচার্য বাপন
মাটির নিচে বসবাস। বলতে গেলে জীবনটাই কাটিয়ে দেয় ভূপৃষ্ঠের অভ্যন্তরে, লোকচক্ষুর আড়ালে। খাবার-খাওয়া এমনকি বংশবিস্তারের কাজটিও সেখানেই সেরে ফেলে। চেহারায় গিনিপিগের আদল স্পষ্ট। স্তন্যপায়ী ক্ষুদ্র প্রাণীটি ‘হিমালয়ান মোল’ বৈজ্ঞানিক নাম ইউরোসক্যাপ্টর মাইক্রুরা (Euroscaptor micrura)। মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গলে লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যানে হঠাৎ করেই প্রাণীটি দৃষ্টিগোচর হয় বন্য প্রাণী গবেষক ও আলোকচিত্রী তানিয়া খানের। তিনি বিচিত্র প্রাণীটির দেখা পান ২০১১ সালের ১৬ ডিসেম্বর। তা-ও ক্ষণিকের জন্য।
কালের কণ্ঠকে তানিয়া খান বলেন, ‘লাউয়াছড়ার ভেতর একটা উঁচু টিলা বেয়ে ওপরে উঠছিলাম। হঠাৎ দেখতে পেলাম ঝরে পড়া পাতার নিচ থেকে একটা প্রাণী জোরে দৌড় দিল। হঠাৎ দেখায় ঠাওর করতে পারিনি এটা কোন প্রাণী। সঙ্গে সঙ্গে পিছু নিলাম। এরপর অনেকটা সৌভাগ্যক্রমেই প্রাণীটি দেখার সুযোগ পেলাম। আর দেখা মাত্রই চিনে ফেললাম- এটি একটি মোল।’ তিনি বলেন, মোলটি দৌড়ে গিয়ে রাস্তার পাশের মাটির দেয়ালের ভেতর গর্ত খুঁড়ে ঢুকে পড়ার চেষ্টা করছিল। কিন্তু ভারসাম্য রাখতে না পেরে হঠাৎই নিচে পড়ে যায়। ওই সামান্য সুযোগটুকুই মিলেছিল। তাৎক্ষণিক ক্যামেরা তাক করে একবারই সাটার টেপার সুযোগ পেয়েছি। আর সুযোগ হয়নি। এটি আবার দৌড়ে গিয়ে মাটির দেয়ালের ভেতর গর্ত করে ঢুকে যায়।’
তানিয়া আরো জানান, ‘মোল জীবনটা মাটির গভীরেই কাটিয়ে দেয়। অন্যান্য প্রাণীর চেয়ে এরা অনেক বেশি কার্বন-ডাই-অক্সাইড সহ্য করতে পারে এবং মাটির ওপর থেকে নেওয়া অক্সিজেন পুনঃব্যবহার করতে পারে। তাই অক্সিজেনের সরবরাহ কম থাকলেও মাটির নিচে টানা দীর্ঘ সময় এরা টিকে থাকতে পারে।’
ক্ষুদ্র স্তন্যপায়ী প্রাণী মোলের চোখ ও কান খুব ছোট। দেহ ঘন পশমে আবৃত। ঘ্রাণ ক্ষমতা যথেষ্টই প্রখর। তবে দৃষ্টিশক্তি বেশ কম। দ্রুত মাটি খননের জন্য এদের রয়েছে শক্ত নখ ও থাবা। প্রজনন মৌসুম ফেব্র“য়ারি থেকে মে মাস পর্যন্ত। গর্ভকালের সময়সীমা প্রায় ৪২ দিন। মোল একসঙ্গে তিন থেকে পাঁচটি বাচ্চা প্রসব করে থাকে। এদের খাদ্য তালিকায় রয়েছে কেঁচোসহ মাটির নিচের বিভিন্ন প্রজাতির কীট। দেহের দৈর্ঘ্য ২ দশমিক ৫ থেকে ১৫ সেন্টিমিটার পর্যন্ত এবং ওজন ১২ থেকে ৫৫০ গ্রাম পর্যন্ত হয়ে থাকে। রং বাদামি, ধূসর, কালো এবং সাদা। ইউরোপ, এশিয়া, দক্ষিণ আফ্রিকা ও উত্তর আমেরিকায় মোলের অস্তিত্ব খুঁজে পাওয়া যায়।
লেখক : প্রকৃতি ও জীববৈচিত্র্য বিষয়ক লেখক এবং
দৈনিক কালের কণ্ঠের শ্রীমঙ্গল (মৌলভীবাজার) প্রতিনিধি
সূত্র : ৩ অক্টোবর ২০১৩ তারিখের দৈনিক কালের কণ্ঠে প্রকাশিত প্রতিবেদন