শীতে কাঁপুনি ধরে কেন? এতে শরীরে কী হয়?
ইউরোপ জুড়ে শীতের প্রকোপ৷ কিন্তু এখানেই তো শুধু নয়৷ ভারত-বাংলাদেশে তথা দক্ষিণ এশিয়াতেও তো হাড়কাঁপানো শীতে দাঁত ঠক ঠক করে৷ কিন্তু কেন? শীতে শরীরে কী হয়?
শীতে কাঁপুনি ধরা নিয়ে আরো অনেক প্রশ্ন থাকতে পারে৷ মোটা লোকেদের কি শীত কম লাগে? পুরুষরা কি মহিলাদের চেয়ে কম শীতকাতুরে? সব মানুষের ‘ফ্রিজিং পয়েন্ট’ কি এক, অর্থাৎ সব মানুষের কি তাপমাত্রা কোনো একটা বিশেষ পর্যায়ে নামলে কাঁপুনি ধরে?
বিজ্ঞানীরা বলেন, প্রত্যেক মানুষের গায়ের চামড়ায় নাকি গরম কি ঠাণ্ডা সংক্রান্ত সেন্সর বা ফিলার বসানো আছে৷ এই সেন্সরগুলো সারা শরীরে কীভাবে ছড়ানো, তার ওপরেই নাকি নির্ভর করে, কোন ব্যক্তির ঠিক কখন এবং কোথায় শীত লাগবে৷
কারো হয়ত কানে ফিলারের সংখ্যা বেশি, তাহলে তাঁর কানেই বেশি ঠাণ্ডা লাগবে৷ অন্য কারো আবার মাথায় কিংবা হাতে – সেই অনুযায়ী তাঁর সেখানেই বেশি শীত করবে৷ সবার যে আবার একই সংখ্যক ফিলার বা অনুভূতি মাধ্যম থাকতে হবে, তার কোনো মানে নেই৷
আবার এমনও হতে পারে, কারোর হয়ত গরমের জন্য বেশি ফিলার আছে, কিন্তু শীতের জন্য কম৷ তাহলে তাঁর বেশি গরম লাগবে, কিন্তু শীতে সে বিশেষ কাবু হবে না৷ এটাকে প্রকৃতির খেয়াল বলা যেতে পারে, যেমন সব মানুষের হাত-পায়ের সাইজ এক হয় না৷
তবে আমরা শীতের দেশের মানুষ হই আর গরমের দেশের মানুষ হই, আমাদের দেহের গড় তাপমাত্রা কিন্তু এক: ৩৬ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেড৷ ঐ তাপমাত্রা ৪২-এ উঠলে প্রাণের শঙ্কা দেখা দেয়, আবার ৩০-এর নীচে নামলেও তাই৷
দেহের তাপমাত্রা ত্রিশের নীচে নামলে হৃদযন্ত্র কিবা মগজ ঠিকভাবে কাজ করে না, যার ফলে শেষমেষ মৃত্যুও ঘটতে পরে৷ কাজেই দেহের তাপমাত্রা বিপজ্জনকভাবে নামার সম্ভাবনা দেখলেই আমাদের নিজেদের শরীরই আমাদের সাবধান করে দেয়: ঐ কাঁপুনি ধরিয়ে! এমনকি কনকনে বাতাস বইলেই গায়ের চামড়া কুঁকড়ে যায়৷
ইংরিজিতে যাকে বলে ‘গুজ পিম্পল্স’ বা ‘গুজ ফ্লেশ’, অর্থাৎ পালক ছাড়ানোর পর হাঁসের চামড়া যেরকম হয়৷ শীতে গায়ের চামড়া কুঁকড়ে যাওয়াটা কিন্তু মানুষের আদিম যুগের ব্যাপার, যখন আমাদের গায়ে লোম ছিল৷ মাথার চুলের মতোই গায়ের চামড়ার ঐ অতি ক্ষুদ্র পেশিগুলো আজও শীত দেখলে অতীত যুগের কথা স্মরণ করে৷