সাগরের রহস্য; এল নিনো – লা নিনা

সিফাত তাহজিবা

এল নিনো(El Nino) আর লা নিনো (La Nina) হলো স্প্যানিশ শব্দ। এর অথ হলো ‘ছোট্ট ছেলে’ ( the little boy) অন্যটির অথ হলো ‘ছোট্ট মেয়ে'(the little girl)। দুজনই দক্ষিণ আমেরিকার উপকূলের বাসিন্দা। প্রায় ১০০ বছর আগে,পেরুর জেলেদের চোখে প্রথম ধরা পড়ে ওরা সেই থেকেই এ নামকরণ। হয়তো মনে হতে পারে এটি কোন রূপকথার কাহিনী, আসলে তা নয় । বিষয়টির সাথে সমুদ্র ওতপ্রোত ভাবে জড়িত। সমুদ্র কার না ভাল লাগে! সমুদ্রকে জানতে হলে সমুদ্রের গতিপ্রকতি এর সংলগ্ন বায়ুমন্ডল অথাৎ সাগরের সাথে সামগ্রিক আবহাওয়ার পরিবতন গুলো জানা জরুরী। এল-নিনো এবং লা-নিনো হলো সামুদ্রিক-বায়ুমণ্ডলীয় সঞ্চালনের (ocean-atmospheric circulation)ফলাফল। এদেরকে মূলত চিহ্নিত করা হয় সমুদ্র পৃষ্ঠের তাপমাত্রা এবং বায়ুমণ্ডলীয় চাপের ক্রমাগত পরিবর্তন থেকে। আজ পযন্ত বিজ্ঞানীরা এল-নিনো এবং লা-নিনো সংঠনের কোন কারণ প্রমান সহ আবিষ্কার করতে পারেন নি। k

চলুন এবারে জেনে নেয়া যাক এল নিনো এবং লা নিনা  সম্পর্কে কিছু খুটিনাটি তথ্যঃ –

  •  এল নিনো বা উষ্ণ মহাসাগরীয় অবস্থা বিরাজ করে প্রশান্ত মহাসাগরের পশ্চিম প্রান্তে ,এটি  সেসময় ঐ অঞ্চলের বায়ুমণ্ডলের চাপ বাড়িয়ে দেয়। অন্যদিকে লা নিনা সংঠনের সময় প্রশান্ত মহাসাগরের পশ্চিমে শীতল আবহাওয়া বিরাজ করে কারন সেখানে নিম্ন চাপ সৃষ্টি হয়।
  •  এল নিনো (El Nino) প্রতি ৩ থেকে ৭ বছরে দেখা যায়,তা বিরাজমান থাকে প্রায় ১ বছর কখনো কখনো ১৮ মাস পর্যন্ত যখন, সমুদ্র পৃষ্ঠ’র তাপমাত্রা বিস্তর পার্থক্য হ্য়(প্রায় 0.৫ ডিগ্রী সেলসিয়াস) তখন এটি প্রশান্ত মহাসাগরীয় এলাকা এবং মাঝে মধ্যে পুরো পৃথিবীর আবহাওয়াকে প্রভাবান্বিত করে।
  •  আবহাওয়াবিদগণ আর বিজ্ঞানীরা এল-নিনো সংঠনের কিছু লক্ষণ বের করেছেন – * ভারত মহাসাগর, ইন্দোনেশিয়া, অস্ট্রেলিয়ার ভূপৃষ্ঠের চাপ বেড়ে যাওয়া। * তাহিতি, প্রশান্ত মহাসাগরের পূর্বে বায়ুমন্ডলের চাপ বেড়ে যাওয়া। * পেরুর নিকটে বায়ুমন্ডলের তাপমাত্রা বাড়ে এই উষ্ণ বাতাস উপরের দিকে উঠে পেরুর উত্তর দিকে বষ্টিপাতের সূচনা হয়। * পূর্বের উষ্ণ সাগরের পানি পশ্চিমে চলে আসে এবং সেখানের সমুদ্র পৃষ্ঠের উচ্চতা প্রায় ৩০ সেমি’র ও বেশি বেড়ে যায়। * পূর্ব প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে খরা দেখা দেয়। * জলজ প্রাণির জীবন ধারনের জন্য অবস্থা থাকেনা সমুদ্রের পানির তাপমাত্রা বেড়ে যাওয়াতে, পেরুর সমুদ্রতীরবতি এলাকায় মৎস প্রজাতি পাওয়া যায় না। el_nino_2012_08_15
  •  অন্য দিকে লা-নিনা হলো এল নিনোর সম্পূণ বিপরীত। লা-নিনাতে, পেরু এবং চিলির পুব উপকূলে মৎস প্রজাতি বিপুল পরিমাণে পাওয়া যায়।কারন, সেখানে সমুদ্রের তাপমাত্রা জলজ প্রানীর জীবন ধারনের অনুকূলে থাকে।
  •  এল-নিনো ও লা-নিনার কারণে পৃথিবীর সামগ্রিক আবহাওয়ায় কিছু ব্যতিক্রম ঘটে, যেমনঃ *আমেরিকার উত্তর দিকে এবং কানাডাতে শীতকালে গরম অনূভূত হয়। *আমেরিকার পশ্চিমে,পেরু,ইকুয়েডর গ্রীষ্মে ভারী বষ্টীপাত হয় *এল-নিনোর সময়ে আটলান্টিক সমুদ্রে হারিকেন ঝড়ের মাত্রা অনেক কম হয়। *সমুদ্রের লবনাক্ততা কেও প্রভাবিত করে।

সবশেষ এল-নিনো ঘটে ২০০৯ জুন থেকে শুরু করে ২০১০ ‘র মে মাস অবধি (equatorial pacific ocean)। পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলের তাপ বেড়ে যাওয়ার পেছনে এল-নিনো কাজ করে। নাসার (NASA)বিজ্ঞানীরা (earth scientist)আন্তজাতিক ভাবে চেষ্টা করে যাচ্ছে এল-নিনো এবং লা-নিনার রহস্য উদ্ঘাটনের।

এনভাইরনমেন্টমুভ ডটকম

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Discover more from EnvironmentMove.earth

Subscribe now to keep reading and get access to the full archive.

Continue reading

Verified by ExactMetrics