সিলেটে রথের মেলায় বন্যপ্রাণী বিক্রিঃ পরিবেশকর্মীদের উপর মেলা আয়োজকদের আক্রমণ
সিলেট নগরীতে রথের মেলায় বন্যপ্রানি বেচাকেনা বন্ধে গতকাল এক যৌথ অভিযান চালায় সিলেটের তিনটি পরিবেশবাদী ও সমমনা সংগঠনগুলো। এই সময় রথমেলা আয়োজক কমিটি’র সাথে সংগঠনগুলোর নেতৃবৃন্দের মধ্যে উত্তপ্ত বাক্য বিনিময় হয়। এক পর্যায়ে তা সংঘর্ষে রুপ নেয়।
জানা যায়, গত ১০ জুলাই থেকে রথমেলা সিলেটের রিকাবীবাজারে অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে। মেলায় যাতে বন্যপ্রানি বেচাকেনা করা না হয় সেই উদ্দেশ্যে সিলেটের তিনটি পরিবেশবাদী পরিবেশবাদী ও সমমনা সংগঠন যথাক্রমে- শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘গ্রিন এক্সপ্লোর সোসাইটি’, সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘প্রাধিকার’ এবং বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন সিলেট শাখা যৌথভাবে এক স্মারকলিপি প্রদান করেন জেলা প্রশাসক, বিভাগীয় বন কর্মকর্তা ও সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার বরাবর। মেলা শুরু হওয়ার পর গতকাল পর্যন্ত বন্যপ্রাণী বেচা কেনা বন্ধ না হওয়ায় সংগঠনগুলির পক্ষ থেকে আজ একটি ‘পর্যবেক্ষক দল’ পাঠানো হয়। পর্যবেক্ষক দল এ সময় পুরো মেলা প্রাঙ্গন ঘুরে ঘুরে অবৈধ বন্যপ্রাণী বেচাকেনা হয় এমন স্টল চিহ্নিত করে । এ সময় দোকানগুলোতে বিভিন্ন প্রজাতির দেশী বন্যপাখি দেখা যায়; যার মধ্যে উল্লেখ্যযোগ্য হল- কালিম, কোরা, শালিক, মাছরাঙ্গা , বসন্তবৌরি, টিয়া, ময়না ইত্যাদি। পর্যবেক্ষক দলের পক্ষ থেকে স্টল মালিকদের এই ধরনের দেশি বন্যপাখি না বেচার জন্যে অনুরোধ করা হলেও এই ব্যাপারে মেলা কর্তৃপক্ষ কোনো পদক্ষেপ না নেওয়ায় বাধ্য হয়ে পর্যবেক্ষক দল মেলা প্রাঙ্গনে অবস্থিত পুলিশ ক্যাম্পে উপস্থিত এস আই কামালের কাছে এ ব্যাপারে সহযোগীতা চাইলে তিনি ব্যবস্থা নিতে অপারগতা জানান। এ ব্যাপারে পর্যবেক্ষক দলের পক্ষ থেকে মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার নিতাই চন্দ্র মাঝি’র সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি ৩ সদস্যের একটি পুলিশ ফোর্স ঘটনাস্থলে পাঠান।
ঘটনাস্থলে পুলিশ আসা মাত্র সংগঠনগুলোর নেতা কর্মীরা পাখিগুলো ছেড়ে দেওয়ার জন্যে পুলিশের উপর চাপ প্রয়োগ করলে পুলিশ সেখান থেকে মাত্র তিনটি খাঁচা জব্দ করে। এই সময় স্টল মালিকদের পক্ষ থেক বাধা আসলেও সংগঠনগুলোর নেতাকর্মীদের চাপে পুলিশ তা ছেড়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়। কিন্তু এই সময় মেলা কর্তৃপক্ষ ৫০-৬০ জন মানুষকে সাথে নিয়ে পরিবেশকর্মীদের উপর চড়াও হয়। এই সময় দুই পক্ষের মধ্যে উত্তপ্ত বাক্য নিনিময় হয়। এক পর্যায়ে ১০-১৫ জনের একটি দল লাঠি-সোটা নিয়ে সংগঠগুলোর কর্মীদের উপর চড়াও হলে পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে যায়। এই সময় আয়োজকদের ‘বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের এখানে আবার দেখলে খবর করে দেয়া হবে’ এই ধরনের ভীতিপ্রদর্শনমূলক বক্তব্য দিতে দেখা যায়। এ সময় পুলিশের হস্তক্ষেপে পরিস্থিতি শান্ত হয়।
এ সময় মেলা আয়োজকদের পক্ষ থেকে ভবিষ্যতে দেশি বন্যপাখি মেলায় বেচাকেনা হবে না বলে আশ্বাস দেওয়া হয়। এর পরিপ্রেক্ষিতে সংগঠনগুলোর পক্ষ থেকে বলা হয়, আগামীতেও এই ধরনের অভিযান অব্যাহত থাকবে। যদি পরবর্তীতে আবারো দেশি পাখি বিক্রি করতে দেখা যায়- তাহলে পরিস্থিতি আরও খারাপ হবে বলে আয়োজকদের হুশিয়ার করে দেওয়া হয়।