
সুস্থ জাতি গঠনে প্রতিটি এলাকায় পর্যাপ্ত খেলার মাঠ নিশ্চিত করার দাবী
দেশে একদিকে সরকার জাতীয় ক্রীড়ার মান উন্নয়নের কথা বলছে অন্যদিকে নানাভাবে খেলার মাঠসহ খেলাধুলার নানা সুযোগ ক্রমান্বয়ে সংকুচিত হয়ে আসছে। বিদ্যমান খেলার মাঠগুলোকে আনুষ্ঠানিক ও আইনগতভাবে খেলার মাঠ হিসেবে স্বীকৃতি না দেয়া, নতুন মাঠ তৈরি না করা এবং খেলোয়াড় তৈরি ব্যাতিরেকে অবকাঠামো তৈরিতে অধিক মনোযোগী হওয়ায় বর্তমান প্রজন্ম ক্রীড়াবিমুখ হয়ে বেড়ে উঠছে। যা আগামী প্রজন্মের শারীরিক ও মানসিক সুস্থতার বড় প্রতিবন্ধকতা এবং একটি সুস্থ শক্তিশালী জাতি গঠনের পথে হুমকি স্বরুপ। সুস্থ-স্বাভাবিক ভবিষ্যৎ জীবনের কথা চিন্তা করে এবং দেশের ক্রীড়া ক্ষেত্রকে অধিকতর কার্যকর করতে প্রতিটি পাড়ায় মহল্লায় পর্যাপ্ত খেলার মাঠ নিশ্চিত করণ ও ক্রীড়াকে ক্যারিয়ার গঠনের উপায় হিসেবে নিতে সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা বাড়ানো জরুরী।
আজ ০২ জুন ২০১৪, সোমবার, সকাল ১১ টায় জাতীয় ক্রীড়া পরিষদের পুরাতন ভবনের সভা কক্ষে পরিবেশ বাঁচাও আন্দোলন পবা’র উদ্যোগে এক আলোচনা সভায় বক্তারা উক্ত অভিমত ব্যক্ত করেন।
আলোচনা সভায় বক্তারা বলেন, এক সময় ঢাকা শহরে অনেক খোলা জায়গা ছিল যা খেলার মাঠ হিসেবে ব্যবহৃত হতো। কিন্তু ধীরে ধীরে সে সকল খোলা জায়গা অপরিকল্পিতভাবে দালান কোঠা নির্মাণ ও বিভিন্নভাবে দখলের ফলে আজ প্রায় বিলীনের পথে। যতটুকু অবশিষ্ট আছে তা আনুষ্ঠানিক ও আইনগত ভাবে খেলার মাঠ হিসেবে স্বীকৃতি না দেয়ার কারণে বিভিন্নভাবে দখল করার পায়তারা চলছে এবং এভাবে চলতে থাকলে এক সময় তা নিশ্চিহ্ন হয়ে যাবে।
শুধু শহরাঞ্চল নয় এখন গ্রামেও খেলার মাঠের সংকট সৃষ্টি হচ্ছে। ফলে শৈশব কৈশোরের দূরন্তপনা আজ আটকা পড়েছে টিভি কার্টুন আর কম্পিউটার গেম্স-এর বেড়াজালে। পর্যাপ্ত খেলার জায়গা না থাকায় শিশু-কিশোররা ঘরে বসে ইলেক্ট্রনিক্্র যন্ত্র নির্ভর হয়ে পড়ছে। হচ্ছে মস্তিস্ক নির্ভর খেলায় অভ্যস্ত, শরীর নির্ভর খেলা ভূলে যাচ্ছে। শারীরিকভাবে অলস হয়ে যাচ্ছে। শিশুদের শারীরিক ও মানসিক বৃদ্ধি সঠিকভাবে হচ্ছে না, এতে প্রায় শিশুরা খিটখিটে মেজাজের, অপরিপক্ক আচরণ এবং বিপথে চলে যাওয়ার আশঙ্কা দিন দিন বেড়ে চলেছে।
সরকারীভাবে মাঝে মাঝে মাঠ সংরক্ষণের আশার বাণী দেওয়া হলেও বাস্তবিক অর্থে মাঠ তৈরির ক্ষেত্রে এবং এখনও যে সকল মাঠ আছে তা সংরক্ষণের উল্লেখযোগ্য কোন অগ্রগতি হয়নি। আগামী প্রজন্মের সুস্থ-স্বাভাবিক ভবিষ্যৎ জীবনের কথা চিন্তা করে এবং দেশের ক্রীড়া ক্ষেত্রকে অধিকতর কার্যকর করতে প্রতিটি পাড়ায় মহল্লায় পর্যাপ্ত খেলার মাঠের বিকল্প নেই।
পবার চেয়ারম্যান আবু নাসের খানের সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় বক্তব্য রাখেন, পবার যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক হাফিজুর রহমান ময়না, সম্পাদক শামীম খান টিটো, জাতীয় দলের ফুটবলার অমিত খান শুভ্র, পীস কারাতে ফাউন্ডেশনের সভাপতি আতিক মোরশেদ, বাংলাদেশ উশু এসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক ডি এম রুস্তম খান, এশিয়ান উশু ফেডারেশনের যুগ্ম সম্পাদক এডভোকেট শহিদুল হক, বাংলাদেশ তায়কোন্দো ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক মাহমুদুল ইসলাম রানা প্রমুখ।
আলোচনা সভায় নিন্মোক্ত সুপারিশসমূহ করা হয়-
ক. খেলার মাঠ সৃষ্টি ও রক্ষণাবেক্ষনের জন্য আইন ও নীতিমালা উন্নয়ন ও সংস্কার করা
খ. বিদ্যমান খেলার মাঠসমূহ যেন হারিয়ে না যায় সে জন্য এ সব মাঠকে আনুষ্ঠানিক ও আইনগতভাবে খেলার মাঠ হিসেবে স্বীকৃতি দেয়া
গ. প্রত্যেক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে আবশ্যিকভাবে খেলার মাঠ নিশ্চিত করা
ঘ. খেলার মাঠে খেলাধুলা ব্যতীত অন্য কোন অনুষ্ঠান (যেমন- যাত্রা, মেলা ইত্যাদি) এর অনুমতি না দেওয়া;
ঙ. প্রত্যেকটি খেলার মাঠ যাতে সব মৌসুমে খেলার উপযোগী থাকে সে জন্য উপযুক্ত ব্যবস্থা গ্রহণ;
চ. স্টেডিয়াম কেন্দ্রিকতা নয় প্রতিটি গ্রাম, পাড়া ও মহল্লায় প্রয়োজন অনুয়ায়ী এক বা একাধিক খেলার মাঠের ব্যবস্থা করা;
ছ. জনসংখ্যার অনুপাতে নুন্যতম প্রয়োজনীয় খেলার মাঠ নিশ্চিত করা।
জ. কেবল অবকাঠামো তৈরি নয় ক্রীড়াবিদ তৈরিতে অধিক মনোযোগ দেয়া।