
হাইকোর্টের রুল উপেক্ষা করে জিন্দা পার্ক ধ্বংসে রাজউকের অভিযান কার স্বার্থে ?
নানা প্রতিকূলতায় ঢাকা মহানগরীর বিনোদনের স্থান ক্রমেই সংর্কীণ হয়ে আসছে। এই সীমাবদ্ধতার মাঝেও নারায়নগঞ্জের রূপগঞ্জ উপজেলায় গত ৩৩ বছরে স্থানীয় এলাকাবাসী নিজেদের ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র বিনিয়োগ, মেধা আর শ্রমের মাধ্যমে তিলেতিলে গড়ে তুলেছে অনিন্দ্য সুন্দর পরিবেশেবান্ধব অনুসরণীয় দৃষ্টান্ত জিন্দা পার্ক। গত ২০০৮ সালে এই পার্কটি উচ্ছেদের মাধ্যমে রাজউক বিভিন্ন ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানকে বরাদ্দ দেওয়ার চেষ্টা করেছিল। কিন্তু স্থানীয় এলাকাবাসী ও পরিবেশবাদী সংগঠনের আন্দোলনের প্রেক্ষিতে জিন্দা পার্কটি পার্ক হিসেবে বহাল থাকে। সম্প্রতি রাজউক জিন্দা পার্কের দখল নেয়ার জন্য মরিয়া হয়ে উঠেছে।
রাজউক ২৭ ফেব্রুয়ারী ২০১৪ তারিখের এক স্মারকে আগামি ০২ মার্চ ২০১৪, রবিবার পার্কটির মূল উদ্যোক্তাদের উচ্ছেদের অভিযান পরিচালনার ঘোষণা দিয়েছে। হাজারো প্রজাতির গাছ-গাছালি পরিপূর্ণ লেক, টিলার অরণ্যে গড়া, প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্যে পরিপূর্ণ জিন্দা পার্ক ধ্বংসে রাউকের নীলনকশা যেকোন মূল্যে প্রতিহত করতে হবে। আজ ০১ মার্চ ২০১৪, শনিবার, সকাল ১১ টায় জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে পরিবেশ বাঁচাও আন্দোলন (পবা), বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা), বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতি (বেলা) সহ ২০ টি পরিবেশবাদী সংগঠনের যৌথ উদ্যোগে রাজউকের রক্তাক্ত থাবা থেকে জিন্দা পার্ক রক্ষা কর- দাবীতে আয়োজিত মানববন্ধন থেকে উপরোক্ত দাবী জানানো হয়।
মানববন্ধন থেকে বলা হয়-স্থানীয় জনগণের উদ্যোগে সারাদেশের জন্য অনুকরণীয় ও দৃষ্টান্ত স্থাপনকারী পরিবেশ সংরক্ষণ ও উন্নয়নের মডেল জিন্দা পার্কটি ২০০৮ সালে উচ্ছেদের মাধ্যমে রাজউক বিভিন্ন ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানকে বরাদ্দ দেওয়ার চেষ্টা করেছিল। কিন্তু স্থানীয় এলাকাবাসী ও বিভিন্ন পরিবেশবাদী সংগঠনের গণ আন্দোলনের প্রেক্ষিতে সংশ্লিষ্ট এলাকা পার্ক হিসেবেই বহাল রাখতে রাজউক বাধ্য হয়। রাজউক পুনরায় পার্কটি দখলের অপতৎপরতার উদ্যোগ নেয়ার প্রেক্ষিতে অগ্রপথিক পল্লী সমিতি মহামান্য সুপ্রীম কোর্টে রিট দায়ের (রিট নং ১৭৩০/২০১৪) করে।
মহামান্য হাইকোর্ট ২৬ ফেব্রুয়ারী ২০১৪ তারিখে রুল জারি করেন। মহামান্য হাইকোর্টে রুল জারির পরও রাজউক ০২ মার্চ ২০১৪, রবিবার পার্কটির মূল উদ্যোক্তাদের উচ্ছেদের অভিযান পরিচালনার ঘোষণা দিয়েছে। মূল উদ্যোক্তাদের অপসারণ করা হলে পার্কটির সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনা ব্যাহত হবে এবং প্রাকৃতিক পরিবেশ ও প্রতিবেশ ব্যবস্থা সমৃদ্ধ জিন্দা পার্ক ধ্বংস হয়ে যাবে। বিনোদন ও জ্ঞান আহরণের বিপরীতে পার্কটি বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানে পরিণত হবে। পূর্বাচল প্রকল্পে ভিটেমাটি হারা অনেক মানুষের জীবন-জীবিকা ব্যাহত হবে। পার্কটি রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব মূল উদ্যোক্তাদের কাছে রাখার দাবীতে মহামান্য সুপ্রীম কোর্টে একটি রীট মামলা বিচারাধীন রয়েছে। রীট মামলাটি নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত পার্কটির মূল উদ্যোক্তাদের কোনোভাবেই উচ্ছেদ করা যাবে না।
পরিবেশ বাঁচাও আন্দোলন পবা’র যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ মনোয়ার হোসেনের সভাপতিত্বে মানববন্ধনে বক্তব্য রাখেন পবার চেয়ারম্যান আবু নাসের খান, বেলা’র নির্বাহী পরিচালক সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান, বাপা’র যুগ্ম-সম্পাদক শরীফ জামিল, পবার যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক প্রকৌশলী মো: আবদুস সোবহান, পবার যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও নাসফের সভাপতি হাফিজুর রহমান ময়না, পবার সম্পাদক লেখিকা মিতালী হোসেন, জাতীয় গীতিকবি পরিষদের সাধারণ সম্পাদক আসলাম সানি, নাগরিক সংহতির সাধারণ সম্পাদক শরিফুজ্জামান, হীলের সাধারণ সম্পাদক মশীহ উদ্দিন শাকের, মডার্ণ ক্লাবের সভাপতি আবুল হাসনাত, বিসিএইচআরডির নির্বাহী পরিচালক মো: মাহবুল হক। এছাড়াও মানববন্ধনে সংহতি জানায় ইউনাইটেড পীস ফাউন্ডেশন, গ্রাম সংসদ, সম্মিলিত জলাধার রক্ষা আন্দোলন, ডাব্লিউবিবি, গ্রীণমাইন্ড সোসাইটি, খেলাঘর, নাসফ, জনউদ্যোগ, এনডিএফ, বিদ্যাঘর, স্বভূমি, ঢাকা সমিতির নেতৃবৃন্দ। এছাড়াও বিভিন্ন স্কুল,কলেজের ছাত্রছাত্রীসহ শতশত মানুষ মানববন্ধনে অংশ নেন।
আগামিকাল রাজউজের উচ্ছেদ অভিযানের প্রতিবাদে পরিবেশবাদী বিভিন্ন সংগঠনের নেতৃবৃন্দ ও বিশিষ্ঠ ব্যক্তিবর্গ সকাল থেকে জিন্দা পার্কে অবস্থান নিবেন।
এনভাইরনমেন্টমুভ ডটকম ডেস্ক