বিশ্ব পানি দিবস আজ
সাইফুর রহমান সুমন
পানির অপর নাম জীবন। সৃষ্টির প্রারম্ভ থেকে এর অস্তিত্ব জানান দিয়ে আসছে আমাদের এই ধরনীর বুকে প্রাণের বিকাশ শুধুমাত্র এটির কারণেই। জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে পানির গুরুত্বের কথা চিন্তা করেই হোক বা পানি বহির্ভূত জীবন কল্পনাতীত বলেই হয়ত মনীষীরা পানিকে ‘জীবন’ উপাধিতে আক্ষায়িত করেছেন।
আজ ২২শে মার্চ ২০১৪, বিশ্ব পানি দিবস। প্রতি বছরের মত এবছরও সারা বিশ্বজুড়ে পালিত হচ্ছে দিবসটি। ১৯৯২ সালে ব্রাজিলের রিও ডি জেনে-রিওতে জাতিসংঘের পরিবেশ ও উন্নয়ন বিষয়ক অধিবেশনে একটি বিশেষ দিন বিশ্ব পানি দিবস পালনের সুপারিশ করা হয়। পরের বছর জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে ১৯৯৩ সালের ২২শে মার্চকে প্রথম আন্তর্জাতিক পানি দিবস হিসেবে ঘোষণা করা হয়। এ বছরের দিবসটির প্রতিপাদ্য বিষয় ‘পানি ও শক্তি’। পানি ও শক্তির পারস্পরিক সম্পর্কের উপর গুরুত্ব আরোপ করে পালিত হবে দিবসটি। ১৯৯৫ সাল থেকে ২০০৫ সাল পর্যন্ত এই দশকটি পানি দশক হিশেবে পালিত হয়েছিল। বাংলাদেশেও জাতীয় ও আন্তর্জাতিকভাবে দিবসটি পালিত হবে। তবে, এ বছরের মূল আয়োজন অনুষ্ঠিত হবে টোকিওতে , যেখানে জাতিসংঘ কর্তৃক পরিচালিত পানি বিষয়ক বার্ষিক রিপোর্টটি উপস্থাপন করা হবে।
মহাবিশ্বে প্রথম প্রাণের সৃষ্টি হয়েছিল পানি থেকে। এতি ছিল অতি খুদ্র একটি জীব কণা। জীবন কথাটির সাথে নিবিড়ভাবে জড়িত পানি। পানি ছাড়া দৈনন্দিন জীবনের কোন কিছু কল্পনা করা যায় না। মহাবিশ্বে শুধু মাত্র ‘পৃথিবী’ নামক গ্রহ ব্যাতিত আর অন্য কোন গ্রহে পানির অস্তিত্তের সন্ধান মেলেনি। বর্তমান সময়ে অনেক অনুসন্ধানের পর মঙ্গল গ্রহে পানির অস্তিত্ব বিজ্ঞানীরা প্রমাণ করেছেন। আর তাই চলছে আরো নিরন্তর প্রচেষ্টা, কিভাবে সেখানে পানির সাথে সাথে প্রানির অস্তিত্বও ধারণ করানো যায়। পানির গুণেই পৃথিবী তার প্রাণ ও পরিবেশ এত সুন্দরভাবে ধারণ করেছে। কৃষি কাজ থেকে শুরু করে দৈনন্দিন গৃহস্থালি কাজ সর্বত্রই রয়েছে পানির অপরিহার্য ভুমিকা। পানির আরেক অনন্য বিশিষ্ট হচ্ছে এটি শক্তির আরেক উৎস। এই শক্তিকে ব্যাবহার করে বিদ্যুৎ শক্তিও উৎপাদন করা হয়ে থাকে। পানি বিদ্যুৎ প্রকল্প এরই এক অনন্য দৃষ্টান্ত।, যার মাদ্ধমে এখন বাংলাদেশেও বৃহৎ পরিসরে বিদ্যুৎ উৎপাদিত হচ্ছে।
পানি যেমন একদিকে আমাদের জন্য আশীর্বাদ, তেমনি অপরদিকে এক ব্যাবহার ও ব্যাবস্থাপনার সঠিক প্রয়োগের অভাবে হয়ে দাঁড়িয়েছে ক্ষতির কারণ। কখনো কখনো তা আমদের জন্য মারাত্মক হুমকির কারণ হয়ে দেয়াখা দেয়। পানি দূষণ তার একটি বড় কারণ। পানি বাহিত রোগের কারণেই মানুষ ও পশু -পাখির সবচেয়ে বেশী মৃত্যু হয়ে থাকে। বিভিন্ন কারণে হয়ে থাকে এই আমাদের এই ভূমণ্ডলের পানি দূষণ, তার মধ্যে অন্যতম কারণসমুহ হচ্ছে :
– নর্দমার ময়লা ও দুষিত পানি
– সামুদ্রিক ময়লা ও মৃত অবশেষ
– শিল্পজাত ময়লা ও দুষিত পানি
– তেজস্ক্রিয় বর্জ্য
– নদী নালা, খাল বিল ও সমুদ্রে তৈল দূষণ
– ভূগর্ভস্থ আধার হতে লিক হয়ে পড়া দুষিত পদার্থ
– বায়ুমণ্ডলীয় দুষিত পদার্থের অবক্ষেপণ
– বৈশ্বিক উষ্ণায়ন প্রভৃতি।
এক পরিসংখ্যানে দেখা গেছে যে, সমগ্র বিশ্বে প্রায় ৭৬৮ মিলিয়ন লোক পানি পানের জন্য নিরাপদ উৎস ব্যাবহার করে না এবং ২.৫ বিলিয়ন লোক স্বাস্থ্যসম্মত পয়ো-নিশকাশন ব্যাবস্থা ব্যাবহার করে না। পানি দূষণের কারণে প্রতি বছর অসংখ্য শিশু ও মানুষ মৃত্যু বরণ করতে হয়। ডায়রিয়া এদের মধ্যে সবচেয়ে ভয়াবহ আকার ধারন করে, মোট মৃত্যুর ৪ শতাংশ হয়ে থাকে এর কারণে। প্রতি বছর এতে প্রায় ২.২ মিলিয়ন লোক মারা যায়।
পানির উৎস দিনদিন কমে আসছে। নিম্ন ভুমির দেশগুলির মধ্যে পানির ঘাটতি দেখা দিবে এই মধ্য শতকে। জলবায়ু পরিবর্তন ও বৈশ্বিক উষ্ণায়নের কারণেও পানি সংক্রান্ত অনেক সমস্যার সৃষ্টি হবে। সমুদ্র পৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধি এর একটি প্রধান ফলাফল। নিম্ন ভুমির দেশসমূহ ডুবে যাবে, কৃষি জমির পরিমাণ কমে আসবে, লবণাক্ত পানির আগ্রাসনে সমুদ্র তীরবর্তী অঞ্চলসমুহের স্বাদু পানির উৎস দুষিত হবে।
পানির উৎস রক্ষার্থে জাতীয় ও আন্তর্জাতিকভাবে বিভিন্ন পদক্ষেপ অতীতে গ্রহণ করা হলেও তার কার্যকারিতা প্রায় নেই বললেই চলে। এ কথা অনস্বীকার্য যে, জলবায়ু পরিবর্তন ও দ্রুত নগরায়নের ফলে স্বাদু পানির চাহিদা দিন দিন বেড়েই চলেছে। ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যা ও নগরায়নের এই যুগে শক্তি ও প্রাকৃতিক সম্পদ হিসেবে পানি এই দুটিরই দিন দিন চাহিদা মাত্রার ঊর্ধ্বে চলেছে। যেহেতু, এই শক্তি ও প্রাকৃতিক সম্পদ এর জোগান সীমিত, তাই এর ব্যবহার ও ব্যাবস্থাপনা যথোপযোগী হওয়া চাই। তাই আমাদের এখনই প্রয়োজন জাতীয় ও আন্তর্জাতিকভাবে এমন পদক্ষেপ গ্রহণ করা যা তৃণমূল পর্যায়ে কার্যকরী ভুমিকা রাখবে। পানি ও শক্তি এই দুটোকে এক সুত্রে গেঁথে দিয়ে আমরা যেন একটি নিরাপদ আবাস্থল গড়ে তুলতে পারি বিশ্ব পানি দিবসে environmentmove.earth এর পক্ষ থেকে এই কামনাই ব্যক্ত করছি।
তথ্য সুত্রঃ ইউএন ওয়াটার