আজ বিশ্ব বাঘ দিবস !!
আজ ২৯ শে জুলাই, বিশ্ব বাঘ দিবস। ২০১০ সালে রাশিয়ার সেন্ট পিটার্সবার্গে বাঘসমৃদ্ধ ১৪টি দেশের রাষ্ট্রপ্রধানদের সম্মেলনে বাঘ সংরক্ষণকে বেগবান করতে যে ঘোষণাপত্র তৈরি করা হয় তারই আলোকে প্রতিবছর ২৯ জুলাই বিশ্ব বাঘ দিবস পালন করা হচ্ছে। এই দিবসটির প্রধান লক্ষ্য হচ্ছে বাঘ সংরক্ষণের জন্য প্রাকৃতিক পরিবেশ সংরক্ষণ করা এবং বাঘ সম্পর্কে জনসচেতনতা গড়ে তোলা। বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশেও পালিত হচ্ছে বিশ্ব বাঘ দিবস। এবারের বাঘ দিবসের প্রতিপাদ্য ‘সুন্দরবন বাঁচাও, বাঘ বাঁচাও’ বাংলাদেশে পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয়ের পাশাপাশি বিভিন্ন পরিবেশবাদী সংগঠনও দিবসটি পালন করে থাকে।
বিড়াল গোত্রীয় প্রাণীদের মধ্যে বাঘ সবচেয়ে বড়। বাঘ তাদের প্রচণ্ড শক্তির জন্য বিখ্যাত। বাঘ সাধারনত একা থাকতেই ভালবাসে। একটি বাঘ তার নিজের এলাকায় অন্য কোন বাঘের উপস্থিতি পছন্দ করে না। পৃথিবীতে যত বাঘ আছে, তার প্রায় অর্ধেক হচ্ছে বেঙ্গল টাইগার। আর আকারের দিক থেকে সবচেয়ে বড় হচ্ছে সাইবেরিয়ান বাঘ। সাইবেরিয়ান বাঘ আকারে প্রায় ১০.৭৫ ফুট (৩.৩ মিটার) লম্বা হয়ে থাকে। এদের ওজন প্রায় ৩০০ কেজির মতো। অপরদিকে বেঙ্গল টাইগার আকারে প্রায় ৭-৯ ফুট লম্বা হয়ে থাকে। এদের ওজন হয় প্রায় ১৫০-২২৭ কেজি। বন্য অবস্থায় ১ টি বাঘ সাধারণত ৮ থেকে ১০ বছর বয়স পর্যন্ত বেঁচে থাকতে পারে। ১৮ মাস বয়সের আগে সাধারণত বাঘ শিকার করতে পারে না। বাঘ সম্পর্কে আরেকটি মজার তথ্য হল এদের গর্জন প্রায় ৩ কি.মি দূর থেকেও শুনতে পাওয়া যায়।
শিকারি হিসেবে বাঘ একটি অসাধারন প্রাণী। এরা নিশাচর এবং খুবই শক্তিশালী শিকারি। বাঘ সাধারণত ছদ্মবেশে শিকার করে। এদের চামড়ার রং এবং গঠন ছদ্মবেশ ধারণে যথেষ্ট সহায়ক। শিকারের সময় এরা যে প্রাণীটিকে তাদের শিকার বানাতে চায়, খুব সাবধানে এবং প্রায় নিঃশব্দে তার দিকে এগিয়ে যায় এবং স্প্রিং এর মতো লাফ দিয়ে শিকারটির উপর ঝাপিয়ে পড়ে। মোট কথা, এরা শিকারকে কোন সুযোগই দেয় না। শিকারের জন্য বাঘ মাইলের পর মাইল বিচরণ করতে পারে। শিকার হিসেবে এরা প্রধানত হরিণ এবং বন্য শুয়োরকে প্রাধান্য দেয়। একটি ক্ষুধার্ত বাঘ একরাতে প্রায় ৬০ পাউন্ড (২৭ কেজি) মাংস সাবাড় করে দিতে পারে। যদিও বাঘ সাধারণত একবারে খুব বেশি আহার করে না।
বাঘ নিয়ে আমাদের মধ্যে একধরনের ভীতি কাজ করে। কিন্তু, খুব কম সংখ্যক বাঘই মানুষখেকো। একটি বাঘ মানুষখেকো হয় তখনই, যখন সেটি অসুস্থ হয়ে যায় এবং শিকার করার মতো শক্তি আর অবশিষ্ট থাকে না। এমনকি যখন কোন এলাকায় শিকারের সংখ্যা একেবারেই অপ্রতুল হয়ে যায়, তখনও বাঘ খাবারের প্রয়োজনে মানুষকে আক্রমন করে। তবে সাধারণত বাঘ মানুষকে এড়িয়ে চলতেই পছন্দ করে।
একসময়ে পৃথিবীতে ৮ টি প্রজাতির বাঘের দেখা মিলত। কিন্তু, এই বিংশ শতাব্দিতে এসে মাত্র ৫ প্রজাতির বাঘ দেখা যায়। বাকি ৩ টি প্রজাতি পুরোপুরি বিলুপ্ত হয়ে গেছে। বর্তমানে পৃথিবীর ১৪ টি দেশের অরণ্যে বাঘের দেখা মেলে। সর্বশেষ একশো বছরে চোরাশিকারি এবং প্রাকৃতিক আবাস ধ্বংসের কারণে বাঘের সংখ্যা প্রায় এক লক্ষ থেকে বর্তমানে মাত্র ৩০০০-৪০০০ এ নেমে এসেছে। এই পরিসংখ্যান বাঘের অস্তিত্বকে হুমকির মুখে ফেলে দিচ্ছে। বাকি ৫ টি প্রজাতিও আজ খুব বেশি সুখে নেই।
প্রতিবছর প্রাকৃতিক দুর্যোগ, খাদ্যাভাব, বয়সজনিত কারণ এবং চোরা শিকারিদের হাতে বেশ কিছু বাঘ মারা যাচ্ছে। বাঘের চামড়া প্রায় ৩০,০০০-৩৫,০০০হাজার ডলার দামেও চোরা বাজারে বিক্রি হয়ে থাকে। এছাড়াও, দিন দিন জনবসতি বৃদ্ধির কারণে বাঘের প্রাকৃতিক আবাস আজ হুমকির মুখে। তবে আশার কথা এই যে, বাঘ রক্ষার জন্য আজ অনেকেই বেক্তিগতভাবে এবং সাংগঠনিকভাবে এগিয়ে আসছেন। প্রাকৃতিক ভারসাম্য রক্ষার জন্য বাঘ সংরক্ষণ করা খুবই জরুরি। এদের মধ্যে ” দি টাইগার ফাউন্ডেশন” অন্যতম। এছাড়াও এশিয়ান কনজারভেশন অ্যাওআড়নেস প্রোগ্রাম (ACAP), কেয়ার ফর ওয়াইল্ড উল্লেখযোগ্য। আমাদের দেশে বাঘ সংরক্ষণে কাজ করছে এমন একটি সংগঠন হল ওয়াইল্ড ট্রাস্ট বাংলাদেশ (WTB) । এছাড়াও, আরও কিছু সংগঠন এবং বেক্তি পর্যায়ে কয়েকজন বাঘ সংরক্ষণে এবং জনসচেতনতা তৈরিতে কাজ করে যাচ্ছেন।
বাঘ আমাদের দেশের একটি অমূল্য সম্পদ। কিন্তু, আজ এই সম্পদ ধীরে ধীরে আমাদের হাতছাড়া হয়ে যাচ্ছে। সুন্দরবন থেকে বাঘ বিলুপ্ত হয়ে গেলে সুন্দরবন তার একটি মূল্যবান অলংকার হারাবে। সেই সাথে সুন্দরবনের প্রাকৃতিক ভারসাম্য ব্যাহত হবে। বাঘ রক্ষার জন্য, তথা সুন্দরবনকে রক্ষার জন্য আমাদের সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে। সেই সাথে সরকারকেও সর্বাধিক গুরুত্ত সহকারে চোরাচালানি রোধে এবং বাঘের প্রাকৃতিক পরিবেশ সংরক্ষণে যথাযথ পদক্ষেপ নিতে হবে।
মাহবুব রেজওয়ান (২৯/০৭/২০১৩)
এনভাইরনমেন্টমুভ ডটকম ডেস্ক