ইট- কাঠের শহরে শেষ হলো টাংগুয়ার হাওড় চিত্র প্রদর্শনী
শামস জামান রাফি
“পাখি দেখে মনটাই ভাল হয়ে গেল,মনে হচ্ছে পাখি হয়ে আকাশে উড়ে যাই।” নাগরিক জীবনে এভাবে পাখি দেখে মনে ভাল করার কিংবা পাখি হয়ে আকাশে উড়ে যাবার সুযোগ নেই।পাখি হয়ে আকাশে উড়ে যাবার এই ইচ্ছাটি ব্যক্ত করেছেন একজন শিক্ষার্থী-দৃক গ্যালারিতে প্রদর্শিত অসাধারণ কিছু জীবন্ত প্রায় পাখির ছবি দেখে!
শুধু পাখিই নয়,দেশের অনন্য সুন্দর,দ্বিতীয় রামসার সাইট (প্রথম রামসার সাইট-সুন্দরবন) টাংগুয়ার হাওড় এর জীবন ও জীব বৈচিত্র নিয়ে সম্প্রতি দৃক গ্যালারীতে অনুষ্ঠিত হল তিনদিন ব্যাপী আলোকচিত্র প্রদর্শনী। প্রদর্শনীতে উঠে এসেছে হাওড় অঞ্চলের জীব বৈচিত্র্য,মানুষ,মানুষের জীবন সংগ্রামের অসাধারণ কিছু মুহুর্ত। জীবন ও জীবিকা গ্যালারীর দেয়ালে হয়ে উঠেছে জীবন্ত।
ছড়কুড়ি বিল আর নয়কুড়ি কান্দার সমন্বয়ে গঠিত এক অপূর্ব জলাভূমি টাংগুয়াড় হাওড়। এর থেকে বড় হাওড় বা জলাভূমি বাংলাদেশে থাকলেও জীববৈচিত্র্যের এত বিশাল সমাহার আর কোথাও চোখে পড়েনা। গোটা বাংলাদেশে যত পরিযায়ী হাঁস দেখা যায় তার প্রায় অর্ধেকই দেখা যায় এই টাংগুয়াড় হাওড়ে। এ যাবৎ ২১৯ প্রজাতির পাখির অবস্থান হাওড় ও তার আশেপাশের এলাকায় লিপিবদ্ধ করা হয়েছে,যার মধ্যে পরিযায়ী প্রজাতি রয়েছে ৯৮ টি। এছাড়া ১১ জাতের উভচর,২৭ জাতের সরীসৃপ,১৯ জাতের স্তন্যপায়ী ও ১৪১ প্রজাতির মাছ দেখা যায় এই হাওড় অঞ্চলে যার মধ্যে বিপন্ন প্রজাতির মাছ রয়েছে ১৭ টি। গোটা বাংলাদেশের মোট উৎপাদিত মাছের মোট 0.৬৭ ভাগ আসে এই হাওড় থেকে। এখানে দেখা যায় প্রায় ২০০ প্রজাতির গাছপালা(তথ্যসূত্রঃ বন ও পরিবেশ মন্ত্রনালয়,গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার)। জীব বৈচিত্র্যের এই বিপুল সমারোহ এবং হাওড় অঞ্চলের মানুষের দৈনন্দিন জীবনের চিত্র উঠে এসেছে এই প্রদর্শনীতে।
প্রদর্শনীর অন্যতম প্রদর্শক তারেক অণু আমাদেরকে জানান তার অভিজ্ঞতার কথা। তিনি আক্ষেপ প্রকাশ করে বলেন যে স্থানীয় মৎস্য ব্যবসায়ীদের অপরিণামদর্শী কর্মকান্ডের ফলে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে স্থানীয় জীববৈচিত্র। তবে প্রদর্শনীর ব্যাপারে তিনি বলেন,”এই কদিনে প্রদর্শনীতে অনেক লোকজন এসেছেন। আমরা টাংগুয়াড় হাওড়ের জীবন ও জীব বৈচিত্র্য মানুষের কাছে পৌছে দিতে চেয়েছি। ” জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণে মানুষকে সচেতন করা জরুরি বলেও অভিমত দেন তিনি।
প্রদর্শনীতে স্থানীয় পশু,পাখি,পাখির শিকারের দৃশ্যের পাশাপাশি স্থানীয় শিশু যার মুখে আমরা দেখি নিষ্পাপ সারল্য,স্থানীয় মানুষের জীবনযাপন পদ্ধতি-এসকল বিষয় গুলো ফুটে উঠেছে ছবির ফ্রেমে। হাওড় অঞ্চলের একটুকরো জীবন যেন উঠে এসেছে ইট কাঠের এই জঙ্গলে!প্রদর্শনীর অন্যতম আয়োজক সীমান্ত দীপু আমাদের বলেন,”এই প্রদর্শনীর জন্য আমাদের কাছে আরও ছবি ছিল,তবে আমরা সমগ্র হাওড় অঞ্চলের সার্বিক চিত্রই ফুটিয়ে তোলার চেষ্টা করেছি। “প্রদর্শনীতে আগত দর্শনার্থী নিয়েও সন্তুষ্ট তিনি।
প্রদর্শনীতে আগত ফেনী সরকারি কলেজের ছাত্র মোতাহের বলেন,”ছবি গুলো দেখে মনে হয় জীবন্ত। এভাবে পাখি দেখার সুযোগ আমার কখনও হয়নি,ছবি গুলো দেখে খুবই ভাল লাগছে।”
শুধু মোতাহের নন,প্রদর্শনীতে আগত সকল দর্শানার্থীই গ্যালারী থেকে ফিরে গেছেন বিস্ময় এবং অসাধারণ ভাল লাগা নিয়ে। তাইতো তাদের কন্ঠে ধ্বনিত হল-“এমন প্রদর্শনী আরো অনেক হওয়া উচিত।”
এমন প্রদর্শনীর আয়োজন শুধুমাত্র ঐ অঞ্চলের প্রকৃতি ও পরিবেশকেই তুলে ধরেনা,বরং আমাদের মধ্যে সৃষ্টি করে প্রকৃতির প্রতি ভালবাসা-পরিবেশের প্রতি আমাদের দায়িত্ববোধ।