উপকূলবাসীর নিরাপত্তা ঢাল
ইফতেখার আহমেদ টিপু
গাছ আমাদের পরম বন্ধু, তারপরও আমরা গাছের সঙ্গে অনৈতিক ও বৈরিতাপূর্ণ আচরণ করছি, গাছপালা নির্বিচারে কেটে ফেলছি। গাছপালা কাটতে কাটতে আমরা এমন পর্যায়ে পৌঁছে গেছি যে, প্রয়োজনীয় ভারসাম্য বজায় রাখার মতো সম্ভাবনাও ক্ষীণ হয়ে পড়েছে। গাছকাটা কিংবা লুণ্ঠন করার অপপ্রবণতা বৃদ্ধি পাওয়ার কারণে উজাড় হচ্ছে দীর্ঘতম সমুদ্র সৈকত অঞ্চলের দুর্যোগ প্রতিরোধ বেষ্টনী। অরক্ষিত হচ্ছে নদী ও সমুদ উপকূলীয় বিশাল জনগোষ্ঠীর জীবন ও জীবিকা। হুমকির মুখে পড়ছে উপকূলীয় প্রাণ ও জীববৈচিত্র্য। প্রাকৃতিক দুর্যোগপূর্ণ এ দেশের, বিশেষ করে উপকূলীয় অঞ্চলের মানুষের জীবন বলতে গেলে প্রায় সময়ই বিপদসঙ্কুল।
এই উপকূলবাসীকে জলোচ্ছ্বাস ও ঘূর্ণিঝড়ের থাবা থেকে রক্ষার জন্য বিস্তীর্ণ উপকূলজুড়ে সবুজ বেষ্টনী গড়ে তোলা হলেও দেখভালের অভাবে সেই বন এখন আর বন নেই। অন্যদিকে, উপকূলীয় উন্নয়ন প্রকল্প এখনো বাস্তবায়িত হয়নি। পত্রপত্রিকায় প্রকাশিত খবর সূত্রে জানা গেছে, ঘূর্ণিঝড় ও জলোচ্ছ্বাসের ছোবল থেকে দেশের মানুষের প্রাণ ও সম্পদ রক্ষায় দুই দশক আগে উপকূলীয় এলাকায় সবুজ বেষ্টনী গড়ে তোলার উদ্যোগ নেয়া হয়। কিন্তু ওই প্রকল্প সঠিকভাবে বাস্তবায়িত না হওয়ায় চট্টগ্রাম ও কক্সবাজার জেলার অন্তত দেড় কোটি মানুষ প্রাকৃতিক দুর্যোগের ঝুঁকিতে থাকতে বাধ্য হচ্ছেন। ১৯৯১ সালে প্রচণ্ড ঘূর্ণিঝড় ও জলোচ্ছ্বাসে হাজার হাজার মানুষের প্রাণহানি ঘটে। এ সময় চট্টগ্রাম ও কক্সবাজারের ৩০০ কিলোমিটার উপকূলীয় এলাকায় সবুজ বেষ্টনী গড়ে তোলার পরিকল্পনা নেয়া হয়। দীর্ঘ ২২ বছরে মাত্র ১২০ কিলোমিটারে সবুজ বেষ্টনী গড়া সম্ভব হয়েছে। এর মধ্যেও এক বড় অংশে রয়েছে শুভঙ্করের ফাঁকি। চট্টগ্রামের উপকূলীয় বন বিভাগ কার্যালয়ের তথ্যানুযায়ী, ১৯৯১ সালে ঘূর্ণিঝড়ে উপকূলীয় এলাকা লণ্ডভণ্ড হওয়ার পর বন বিভাগে যুক্ত হয় ‘উপকূলীয় বন বিভাগ’ নামের একটি বিভাগ। লক্ষ্য ছিল দুর্যোগ ঝুঁকি কমাতে বনায়নের মাধ্যমে সবুজ বেষ্টনী গড়ে তোলা। কিন্তু গত ২২ বছরেও উপকূলীয় বন বিভাগ দুই জেলার উপকূলীয় উপজেলাগুলোকে পুরোপুরি সবুজ বেষ্টনীর আওতায় আনতে পারেনি। আবার যেসব উপজেলাকে বিচ্ছিন্নভাবে সবুজ বেষ্টনীর আওতায় আনা হয়েছে সেখানেও প্রাকৃতিক দুর্বিপাক ও মানুষের স্বেচ্ছাচারিতার কারণে সবুজ বেষ্টনী রক্ষা করা যাচ্ছে না। ফলে চট্টগ্রামের মিরসরাই থেকে কক্সবাজারের টেকনাফ পর্যন্ত ৩০০ কিলোমিটার উপকূলীয় এলাকার মধ্যে এখনো ১৮০ কিলোমিটার অরক্ষিত অবস্থায় রয়েছে। উপকূলের যেসব এলাকায় সবুজ বেষ্টনী গড়ে তোলা হয়েছে সেগুলোর অবস্থাও তথৈবচ। সিডর এবং আইলায় দেশের উপকূলীয় অঞ্চলের বিভিন্ন জনপদে যে ক্ষত সৃষ্টি হয়েছিল, তা আজো শুকোয়নি। সরকারের তরফে উপকূলীয় অঞ্চলের মানুষের কল্যাণে কোটি কোটি টাকার প্রকল্প হাতে নেয়া হলেও সেসবের সিংহভাগই এখন পর্যন্ত হয়নি বাস্তবায়িত। সবুজ বেষ্টনী উপকূলীয় অঞ্চলের মানুষের রক্ষাকবচ। অথচ সেই সবুজ বেষ্টনীর অসংখ্য গাছ কেটে নিয়ে গেছে স্বার্থান্বেষী মহল। উপকূলবাসীর নিরাপত্তা ঢাল অর্থাৎ উপকূলীয় সবুজ বেস্টনী গড়ে তোলা অপরিহার্য।