একটি দিন শুধুই ভ্রমণপিপাসু পাখিদের জন্য…

ফারজানা হালিম নির্জন  

 একদা একটি শব্দ পৃথিবীতে জন্ম নিলো। ছোটাছুটি,ঘোরাঘুরিতেই কেটে যেতো সারাবেলা। মমতা ঢেলে নাম তার দেওয়া হলো, “ভ্রমণ” । ভ্রমণের ভাষ্যমতে,সজীবতার টানে আলস্যের খোলস থেকে কচ্ছপের মতো মুখ বের করে মাঝে মাঝে পুরো পৃথিবীকে জানান দিতে হয় –হে পৃথিবী,আমি তোমার সন্তান। তোমাকে প্রাণ-ভরে দেখবো বলেই আমার জীবন,তোমাকে ভালোবাসি বলেই আমার মৃত্যু।biberta_0316 - blue sky with bird

পৃথিবীকে দু’চোখ ভরে দেখার অধিকার মানুষের দখলে অনেক বেশি বলে মনে হলেও; মাঝে মাঝে ইচ্ছে করেই বলা হয়ে যায়, ইশ জীবনটা যদি পাখির মতো হতো ! উড়ে উড়ে, ঘুরে ঘুরে দেখে নেয়া যেতো এই মায়া ছড়ানো বিশাল পৃথিবীটাকে। এ নিয়ে কত গান,কত কবিতা রচিত হলো মানুষের লেখনীতে। সত্যিইতো,পাখির উড়ন্ত জীবনের সেই অপার্থিব সুখের লোভ তো আমাদের দেহের রন্ধ্রে রন্ধ্রে মিশে আছে। পাখিরা তো সারাক্ষণই ভ্রমণ করে। আপাতদৃষ্টিতে তাই মনে হলেও,তাদের নিজস্ব একটি পরিচিত এলাকা থাকে। ফেরারী পাখিরা আবার পথ খুঁজে খুঁজে ঠিক ফিরে আসে নিজের কুটিরে। আবার কিছু কিছু পাখি সত্যি সত্যিই বাক্স-প্যাটরা গুছিয়ে ভ্রমণে বেড়িয়ে যায় বছরের একটা নির্দিষ্ট সময়ে। বিশেষত সেইসব ভ্রমণ পিপাসু পাখিদের নিয়ে কিছু কথা বলতে চাই আজ। যাদের জন্য কিনা আলাদা করে একটি দিবসই পালন করা হয়,তাদের দিকে একটু বিশেষ দৃষ্টিতে তো তাকাতেই হবে !wmbd_poster_0

২০০৬ সালে সর্বপ্রথম এই ভ্রমণপিপাসু পাখিদের জন্য একটি আন্তর্জাতিক দিন পালন করার ঘোষণা দেয়া হয়। পাখিদের কল্যাণে জাতিসংঘ থেকে সেই অনুমোদন গ্রাহ্য করার সাথে সাথেই ২০০৬ সাল থেকে প্রতি বছর একটি বিশেষ দিন ভ্রমণশীল পাখিদের জন্য বিশেষভাবে পালন করা হচ্ছে। মে মাসের ২য় সাপ্তাহিক ছুটির দিনটি নির্ধারিত করা আছে শুধুমাত্র এইসব আয়েশী পাখিদের জন্য। “World Migratory Bird Day (WMBD)” এবার অর্থাৎ ২০১৪ সালে যেদিকে আলোকপাত করছে,তা হলো “Destination Flyways : Migratory Birds and Tourism.” ভ্রমণপিপাসু পাখিদের সংরক্ষণ,স্থানীয় জনগোষ্ঠী তথা সমাজের উন্নয়ন এবং বিশ্বব্যাপী বন্যপ্রাণী দর্শন, এই তিনটিকে একই সুতোয় গেঁথে একটি আকর্ষণীয় মালা তৈরী করাই এবারের দিবসের মূল লক্ষ্য। এবারের জন্য সবচেয়ে সুখকর খবর হচ্ছে,এ বছরের অভিযানের জন্য  WMBD এর সাথে যুক্ত হয়েছে “World Tourism Organization (UNWTO).” ভ্রমণপিপাসু পাখিদের জন্য সুন্দর বাসযোগ্য পরিবেশের দিকে নজর দেয়া,তাদের ভ্রমণের পথটিকে মসৃণ ও নিরাপদ করা, বিশ্বব্যাপী সবুজের বার্তা ছড়িয়ে দেয়া ইত্যাদি আরও বহু সংখ্যক কাজের দায়িত্ব তাদের ঘাড়ে। শুধু কি তাদের ঘাড়ে বলে চাপিয়ে দিলেই হয়ে যাবে? অবশ্যয়ই না। এই পাখিদের ভ্রমণ যাতে সুন্দর ও নির্মলভাবে সম্পন্ন হয়,সে জন্য সবাইকে সজাগ থাকার বার্তা ছড়িয়ে দিতে যাচ্ছে তাঁরা তাঁদের এই খোলা চিঠিতে। সকলে মিলে যদি এই অর্পিত দায়িত্বকে অবশ্য-পালনীয় কর্তব্য মনে করে ঠিকভাবে পালন করতে পারি,তবেই তরতর করে বেড়ে যাবে আনুষাঙ্গিক আরও অনেক অনেক ক্ষেত্রের উন্নয়ন।Migrating-birds-001

প্রতি বছর এক বিলিয়নের বেশি দর্শনার্থী নিজের দেশের সীমানা পাড় হয়ে অন্য দেশে যান। সেই সাথে সীমানা অতিক্রম করছে বহু পাখিও। এদের মাঝে আছে এক নিখুঁত যোগাযোগ। যোগাযোগটা সেই ভ্রমণেই ! নানা ধরণের কর্মসূচি যেমন ; পাখি দেখা,পাখির ছবি তোলা ইত্যাদি কর্মসূচিগুলোর মাধ্যমে একটি আর্থ-সামাজিক চিন্তাধারা প্রখরভাবে যুক্ত করলে দর্শনার্থীরা যেমন লাভবান হবেন,তেমনি আমাদের ভ্রমণপিপাসু পাখিরাও বেশ উপকৃত হবে। এই দুইয়ের মাঝে সংযোগ স্থাপন করার ব্যাপারটিতেই মূলত এবার বেশি জোর দেয়া হচ্ছে। bird-migration

পাখিরা উড়ে যাচ্ছে মনের আনন্দে। উপর থেকে দেখছে সবুজের চাদর বিছানো এক অতি চমৎকার পৃথিবী,যেখানে আছে ভরসা করবার মত একটি জাতি। তাঁরা খুব যত্ন করে পাখিদের নিয়ে প্রতিনিয়ত ভাবছে। তাদের উড়ে যেতে আর বাঁধা কোথায়! সীমানা অতিক্রম করলেও নেই পাসপোর্ট-ভিসার যন্ত্রণা, নেই গুলি খেয়ে কোনো শিকারের শিকারে পরিণত হবার ভয়। পৃথিবী তো একটাই,সেখানে আবার সীমানা কিসের ! পাখিদের এই নির্ঝঞ্ঝাট জীবনটাকে আরো ফুরফুরে করে দেবার দায়িত্বটুকু যে আমাদেরই! আর আমাদের মতই ভ্রমণপিপাসু স্বভাবের পাখি হলেতো কথাই নেই, এক পৃথিবীতেই তো বাস করি আমরা…

 

আরো দেখান

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Discover more from EnvironmentMove.earth

Subscribe now to keep reading and get access to the full archive.

Continue reading

Verified by ExactMetrics