এভারেস্ট চূড়ায় আমাদের বাবর আলী!

বাংলাদেশী তরুণ অভিযাত্রিক বাবর আলীর কথা কম বেশ আমরা অনেকেই শুনেছি, সোশ্যাল মিডিয়ার কল্যাণে বা পত্রিকার পাতায় হয়তো আপনি দেখে থাকবেন এক তরুণের বাইসাইকেলে করে ৬৪ জেলা ভ্রমণের কাহিনী কিংবা পাহাড়ে পাহাড়ে চড়ে বেড়ানোর সব উত্তেজনাপূর্ণ ছবি কিংবা ভিডিও। তবে, এবারে নতুন এক চমক দিলেন বাবর, ১৯ মে সকাল স্থানীয় সময় ০৮:৩০ (বাংলাদেশের সময় ০৮:৪৫ এ) তিনি জয় করলেন পৃথিবীর সর্বোচ্চ শিখর মাউন্ট এভারেস্ট।

এ অভিযানের মধ্যদিয়ে সপ্তম বাংলাদেশী হিসেবে পৃথিবীর সর্বোচ্চ শিখর ছোঁয়ার খ্যাতি অর্জন করলেন বাবর। তবে অভিযান কিন্তু এখনো শেষ নয়! বাবরের আসল লক্ষ্য শুধু এভারেস্ট নয়, সাথে লাগোয়া পৃথিবীর চতুর্থ শীর্ষ পর্বত লোৎসে। আজ ক্যাম্প-৪ এ নেমে মাঝরাতে আবারো শুরু করবেন দ্বিতীয় লক্ষ্যের পথে যাত্রা এবং আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে ভোরে পৌঁছে যাবেন এর চূড়ায়। উল্লেখ্য যে এই লোৎসেতে ইতোপূর্বে কোন বাংলাদেশি সামিট করেননি এবং কোন বাংলাদেশি একই অভিযানে দুইটি আট হাজারী শৃঙ্গ চড়েননি। তাই লক্ষ্য পূরণ হলে বাবর আলী করবেন এই বিপদজনক খেলায় বাংলাদেশের ইতিহাসের এক নতুন অধ্যায়ের সূচনা।

২০১০ থেকে ২০১৩ সালের মধ্যে চার বছরে পাঁচ জন বাংলাদেশী ছয়বার মাউন্ট এভারেস্ট সামিট করেন। কিন্তু এরপরই এভারেস্ট অভিযানে নেমে আসে খরা। দীর্ঘ সময় ধরে কোনো বাংলাদেশী সফল অভিযান হয়নি পৃথিবীর ৩য় মেরুতে। আজ ১১ বছরের সেই খরা কাটিয়ে এভারেস্টের চূড়ায় বাংলাদেশের লাল-সবুজ পতাকা উড়িয়েছেন বাবর আলী। আজ ভোরে বেসক্যাম্প টিমের বরাতে আমাদের এই তথ্য নিশ্চিত করেন অভিযানের প্রধান সমন্বয়ক ফরহান জামান।

বাবর আলীর যাত্রা শুরু হয় এপ্রিলের ১ তারিখ। প্রস্তুতিমূলক কাজ শেষ করে তিন দিন পরই (৪ এপ্রিল) কাঠমান্ডু হতে উড়ে যান পৃথিবীর অন্যতম বিপদজনক বিমানবন্দর লুকলাতে। সেই লুকলা থেকে পথচলা শুরু করেন শত কিংবদন্তি পর্বতারোহীদের চলা পথে ১০ এপ্রিল বাবর পৌঁছে যান এভারেস্ট বেসক্যাম্পে। এভারেস্ট অভিযানের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ অনুষঙ্গ হলো একাধিকবার উচ্চতায় উঠানামা করে উচ্চতার সাথে খাপ খাইয়ে নেয়া। কিন্তু কয়েকদিন অপেক্ষার পরও নেপালের দায়িত্বরত দল পথ তৈরি করতে পারেনি। তাই বাবর বিকল্প বেছে নেন, ১৬ এপ্রিল সামিট করেন ২০০৭৫ ফুট উচ্চতার লবুচে ইস্ট পর্বত। এরপর আবারো বেসক্যাম্পে ফিরে পর্বতের নিচ অংশের পথ খুলে গেলে ২৬ এপ্রিল বেসক্যাম্প থেকে যাত্রা শুরু করে ক্যাম্প-২ পর্যন্ত ঘুরে এসে শেষ করেন উচ্চতার সাথে মানিয়ে নেয়ার পর্ব। এরপর শুরু হয় দীর্ঘ অপেক্ষা। শুভাকাঙ্খী আবহাওয়াবিদ মোস্তফা কামাল পলাশের কাছ থেকে পাওয়া গেলো ১৯ হতে ২১ এপ্রিল থাকবে চুড়ার পরিবেশ কিছুটা শান্ত। এরপরই ১৪ এপ্রিল মাঝরাতে বেসক্যাম্প থেকে শুরু হয় বাবরের স্বপ্নের পথে যাত্রা। প্রথম দিনেই সরাসরি উঠে আসে ক্যাম্প-২ এ, যার উচ্চতা ২১,৩০০ ফুট। পরিকল্পনা অনুসারে সেখানে দুইরাত কাটিয়ে বাবর ১৮ মে উঠে আসেন ২৪,৫০০ ফুট উচ্চতার ক্যাম্প-৩ এবং ১৯ মে আসেন ক্যাম্প-৪। ২৬,০০০ ফুট উচ্চতার এই ক্যাম্পের উপরের অংশকে বলা হয় ডেথ জোন। অবশেষে ১৮ মে মাঝরাতে আবারো শুরু হয় বাবরের যাত্রা, এবং ভোরের প্রথম কিরণে ২৯০৩১ ফুট উচ্চতার মাউন্ট এভারেস্ট শীর্ষে উড়িয়ে দেন বাংলাদেশের পতাকা।

নেপালের স্নোয়ি হরাইজন নামক প্রতিষ্ঠানের তত্ত্বাবধানে পরিচালিত অভিযানে এই সামিটে বাবরের সাথে ছিলেন তাঁর দীর্ঘদিনের বন্ধু এবং পর্বতারোহণ গাইড বীর বাহাদুর তামাং। বাবরের ক্লাব ভার্টিক্যাল ড্রিমার্সের পক্ষ হতে প্রধান অভিযান সমন্বয়ক ফরহান জামান সাংবাদিকদের বলেন, “বাবর আলীর এই সাফল্য শুধু তার ব্যক্তিগত অর্জন নয়, বরং এটি পুরো বাংলাদেশের জন্য এক গর্বের বিষয়। এটি আমাদের দেশের তরুণদেরকে আরও বড় স্বপ্ন দেখার এবং সেগুলি পূরণ করার জন্য অনুপ্রাণিত করবে। এই অভিযানের পেছনে ছিল অসংখ্য মানুষের অবদান এবং স্বপ্ন। আমরা তাদের সকলকে ধন্যবাদ জানাই।”

কাগজে-কলমে বাবর আলীর এই অভিযান আজ থেকে দেড় মাস আগে শুরু হলেও তার কঠিন অধ্যাবসায় শুরু হয়েছিল ১০ বছর আগে। ২০১৪ সালে পর্বতারোহণ ক্লাব ভার্টিক্যাল ড্রিমার্স প্রতিষ্ঠার পর হতেই ক্লাব সতীর্থদের নিয়ে নেপাল এবং ভারতের বহু পর্বতে অভিযান করেছেন তিনি। প্রথম বাংলাদেশী হিসেবে তিনি সামিট করেছেন নেপালের আমা দাবলাম পর্বত। পর্বতারোহণ তার নেশা হলেও সাইক্লিং, ম্যারাথন, স্কুবা ডাইভিং এর মতো এডভেঞ্চার একটিভিটিতেও নিয়মিত জড়িত ছিলেন। এডভেঞ্চারের তাড়নায় পায়ে হেঁটে ঘুরেছেন দেশের ৬৪ জেলা, সাইকেলে পাড়ি দিয়েছেন ভারতের কাশ্মীর থেকে কন্যাকুমারীর পথ। বান্দরবান থেকে হিমালয়, সুন্দরবন থেকে দক্ষিণ ভারত, যে জনপদেই তিনি গেছেন, সাক্ষী হয়েছেন অভূতপূর্ব কিছু মুহূর্তের। প্রকৃতির প্রতি তার এই ভালোবাসা এবং বিস্ময় প্রতিনিয়তই মাত্রা ছাড়িয়ে গেছে। সেই সূত্র ধরেই অবশেষে পৃথিবীর সর্বোচ্চ চূড়া থেকে পৃথিবী দেখার স্বপ্নও সার্থক করেছেন এই তরুণ পর্বতারোহী।

নানাবিধ দুঃসাহসী কর্মকান্ডের কারনে মূলত পরিচিতি হলেও বাবর পেশায় মূলত একজন ডাক্তার, কাজ করেছেন আইসিডিডিআর,বি এবং জাতিসংঘের ইন্টারন্যাশনাল অর্গানাইজেশন ফর মাইগ্রেশনের মতো গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠানে। চট্টগ্রামের হাটহাজারীর বুড়িশ্চর এলাকার লেয়াকত আলী এবং লুৎফুন্নাহার বেগম এর দ্বিতীয় সন্তান বাবর ছিলেন চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজের ৫১ তম ব্যাচের ছাত্র। কিছুদিন জনস্বাস্থ্য কর্মকর্তা হিসেবে কাজ করলেও আগের অভিযানের সময় ছুটি না মেলাতে ত্যাগ করেন চাকরির মোহ। এছাড়াও তাঁর আর একটি পরিচয় লেখক, লিখেছেন দুইটি মৌলিক গ্রন্থ ‘পায়ে পায়ে ৬৪ জেলা’ (চন্দ্রবিন্দু প্রকাশনী) এবং ‘সাইকেলের সওয়ারি’ (চন্দ্রবিন্দু প্রকাশনী)। অনুবাদ করেছেন একটি গ্রন্থ ‘ম্যালরি ও এভারেস্ট’ (অদ্রি প্রকাশনী)। এছাড়াও তিনি নিয়মিত দেশের বিভিন্ন স্বনামধন্য পত্রিকা ও লিটল ম্যাগের জন্য অভিযানের গল্প লিখেন।

এই অভিযানের মোট খরচ হচ্ছে ৪৫ লক্ষ টাকা। যাতে মূল পৃষ্ঠপোষক হিসেবে আছেন ভিজ্যুয়াল নীটওয়্যার লিমিটেড। এছাড়া সহ-পৃষ্ঠপোষক ছিলেন এভারেস্ট ফার্মাসিউটিক্যালস লিমিটেড, ঢাকা ডাইভার্স ক্লাব, বীকন ফার্মাসিউটিক্যালস লিমিটেড, ব্লু জে, চন্দ্রবিন্দু প্রকাশনী, গিরি, ভার্টিক্যাল ড্রিমার্স। এছাড়াও অভিযানের জন্য গণ তহবিল সংগ্রহে অংশ নিয়েছেন দেশে-বিদেশে নানা সামাজিক ও ক্রীড়া সংগঠন এবং অগণিত শুভাকাঙ্ক্ষী। অভিযানের সার্বিক সমন্বয় করেছে বাবর আলীর নিজের ক্লাব ভার্টিক্যাল ড্রিমার্স। তবে, এ ধরনের বড় অভিযানে যে পরিমাণ অর্থ ব্যয় হয় সেটি শুধুমাত্র পৃষ্ঠপোষকের মাধ্যমে উঠিয়ে আনা সম্ভব হয় না। এই স্বপ্নপাগল বিজয়ী তরুণকে যে কেও চাইলে উৎসাহ যোগাতে পারেন,
ব্যাংক-
Account Name- Mohad. Babar Ali
Dutch Bangla Bank Limited
O.R. Nizam Road Branch, Chattogram
A/C No: 129.101.210960
Routing No: 090151480
বিকাশ-
0 1887-676670 (Merchant Account, use payment option)
01717-148173 (Send Money option)
নগদ- 01717-148173
যে-কোন জিজ্ঞাসায় বাবরের সাথে সরাসরি যোগাযোগ করতে পারেন।
01717-148173 (WhatsApp)

Related Articles

Discover more from EnvironmentMove.earth

Subscribe now to keep reading and get access to the full archive.

Continue reading

Verified by ExactMetrics