এশিয়াটিক লিলি
সারা পৃথিবীতেই পুষ্পপ্রেমিকদের হাত ধরে আলংকারিক পুষ্পবৃক্ষ স্থানান্তরিত হয়। এক দেশ থেকে আরেক দেশে পাড়ি জমায়, এক উদ্যান থেকে আরেক উদ্যানে থিতু হয়। আমাদের দেশেও অনেকেই নিভৃতে দেশকে বৃক্ষসম্পদে সমৃদ্ধ করার কাজে ব্রতী হয়েছেন। আবার এমন অনেকেই আছেন, যাঁরা পাশ্চাত্যের পুষ্পশোভায় মুগ্ধ হয়ে সেখানকার উজ্জ্বল বর্ণের ফুলগুলো এখানকার উদ্যানসজ্জায় সম্পৃক্ত করার চেষ্টা করেছেন। তবে এই চেষ্টায় কেউ কেউ সফল হয়েছেন, আবার কারও কারও আশা অপূর্ণই থেকেছে।
বেশ কয়েক বছর আগেই যশোরের গদখালীতে ফুটেছে শীতপ্রধান দেশের সুগন্ধি লিলিয়াম; এমনকি টিউলিপ, হায়াসিন্থ, আইরিশ, চেরিও ফুটেছে। তারই ধারাবাহিকতায় পুষ্পপ্রেমিক সালমা বিনতে নূরের ধানমন্ডির ৭ নম্বর সড়কের বাসায় সম্প্রতি তিন রঙের এশিয়াটিক লিলি ফুটেছে। তিনি আমেরিকায় বেড়াতে গিয়ে সেখানকার বিভিন্ন বাগানে এ ফুল দেখে মুগ্ধ হন। দেশে ফেরার সময় নিয়ে আসেন কিছু বীজ (কন্দ)। এ বছরের মার্চের দিকে বারান্দার টবেই লাগিয়ে দেন বীজগুলো। মাত্র এক মাসের ব্যবধানে এপ্রিল মাসের শেষ দিকে ফুল ফুটতে শুরু করে। বিশেষ কোনো যত্ন ছাড়াই টবের সারযুক্ত মাটিতে ফুলগুলো ফুটেছে। তার আগে ফেব্রুয়ারি মাসে তাঁর বাগানে কয়েক রঙের হায়াসিন্থ ফুটেছিল। হায়াসিন্থের বীজগুলোও আমেরিকা থেকেই সংগ্রহ করা। শীতের দেশগুলোতে বাগান আলোকিত করতে হায়াসিন্থের কোনো জুড়ি নেই। বিচিত্র রঙের এই ফুলগুলো সত্যিই নজরকাড়া।
এশিয়াটিক লিলির মধ্যে Lily gironde জাতের ফুল হলুদ, Block out-এর ফুল কালো, আর Toronto জাতের ফুল গোলাপি। এশিয়াটিক লিলি মূলত লিলিয়ামেরই (Lilium spp.) কতগুলো আবাদিত জাত। আবার লিলিয়াম হচ্ছে লিলি গণভুক্ত। সারা বিশ্বে লিলি নামে অজস্র ফুল থাকলেও লিলিয়ামকে মূল লিলি হিসেবে বিবেচনা করা হয়। অন্যদিকে এশিয়াটিক লিলি লিলিয়ামেরই কতগুলো রকমফের। লিলি, লিলিয়াম এবং এশিয়াটিক লিলি মিলিয়ে এই ফুলের বর্ণধারা এতই প্রাচুর্যময় যে অনেক সময় আলাদা করে শনাক্ত করাও কঠিন। তবে বর্ণবৈচিত্র্য, দীর্ঘস্থায়িত্ব ও সুগন্ধের জন্য লিলিয়ামের খ্যাতি বিশ্বজোড়া।
সারা বিশ্বে এখন প্রায় ৯০ ধরনের লিলিয়াম চাষ হয়। সেই সূত্রে বর্ণবৈভবের দিক থেকে লিলিয়ামও কম যায় না—সাদা, লাল, হলুদ ও কালো—কত রঙের বাহার! লিলির আদিস্থান ইউরোপ হলেও বর্তমানে এশিয়াসহ পৃথিবীর বিভিন্ন অঞ্চলে ছড়িয়ে পড়েছে।
আমাদের দেশে সঠিক পদ্ধতি অনুসরণ করে তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারলে প্রায় সারা বছরই লিলিয়াম চাষ করা সম্ভব। লিলিয়াম মূলত বর্ষজীবী কন্দজ উদ্ভিদ। একটি কন্দ থেকে এক বা একাধিক গাছ হতে পারে। তাতে ফুলের সংখ্যা কয়েকটি, কিছু কিছু সুগন্ধি। পাপড়ি সংখ্যা ছয়। ক্ষেত্রবিশেষ কম-বেশিও হতে পারে। এ ফুল কাট-ফ্লাওয়ার হিসেবেও বেশ আদৃত।
সূত্রঃ দৈনিক প্রথম আলো (২০/০৬/২০১৩)