কার্বন অক্সাইডের চেয়ে ৭০০০ গুণ বেশী ক্ষতিকর গ্রিন হাউস গ্যাস আবিস্কার!!!
সুপ্রিয়া সরকার
সাম্প্রতি টরেন্টোর এক দল গবেষক এক নতুন গ্রীন হাউস গ্যাস আবিষ্কার করেছেন যার প্রভাব বৈশ্বিক উষ্ণতার ক্ষেত্রে কার্বন ডাই অক্সাইড এর চেয়ে প্রায় ৭০০০ গুণ বেশী!! সদ্য আবিষ্কৃত পারফ্লুরোট্রিবিউটিলেমাইন (পিএফটিবিএ) গ্যাসটি বিদ্যুৎ শিল্পে বিংশ শতাব্দী থেকে ব্যবহার হয়ে আসছে।
টরেন্টোর বিশ্ববিদ্যালয়ে রসায়ন বিভাগের গবেষকরা জানান এটি সাধারণত রাসায়নিকভাবে ক্ষতি সাধন না করলেও সাম্প্রতি এটি জলবায়ু পরিবর্তনে রেকর্ড পরিমাণ প্রভাব ফেলছে। জার্নালটির একজন সহলেখক ও গবেষক আঙ্গেলা হং জানান, এই গ্যাসটি বৈশ্বিক উষ্ণতা বৃদ্ধিতে কার্বন ডাই অক্সাইড এর চেয়ে প্রায় ৭১০০ গুন বেশি ক্ষতি সাধন করে এবং এর তেজস্ক্রিয়তার প্রভাব এত বেশি যে এটি বায়ুমণ্ডলের যে কোন অণু সনাক্ত করতে সক্ষম।
পিএফটিবিএ গ্যাসটির বায়ুমণ্ডল ঘনমাত্রা খুবই কম। টরেন্টো এলাকায় যা প্রতি ট্রিলিয়নে ০.১৮ ভাগ। যা প্রতি মিলিয়নে ৪০০ ভাগ কার্বন ডাই অক্সাইড এর সমান। সুতরাং জলবায়ু পরিবর্তনের মূল যে চালিকা চক্র রয়েছে যেমন জ্বালানী, কয়লা পুড়ানো ইত্যাদি ক্ষেত্রে এটি সক্রিয় ভূমিকা রাখে না। নাসার মহাকাশ গবেষণা কেন্দ্রের একজন জলবায়ুবিদ ডঃ ড্রেও সিনড্রেল এর মতে, এটি আমাদের জন্য একটি সতর্কবাণী যাতে এটি ভবিষ্যতে বড় ক্ষতির কারণ হয়ে না দাঁড়ায়। যেহেতু বর্তমানে এটি খুব অল্প পরিমাণে বিরাজ করছে, তাই এটি নিয়ে সংকিত হওয়ার কিছু নেই। কিন্তু আমাদের সতর্ক হতে হবে যাতে এটি সামনে বৈশ্বিক উষ্ণতার একটি বড় কারণ হয়ে না দাঁড়ায়। তিনি আরও বলেন, গ্রীন হাউস গ্যাস এর মত গুনাগুণ বিশিষ্ট কিছু গ্যাস যেমন পিএফটিবিএ নিয়ে গবেষণা করা হচ্ছে, যা বৈশ্বিক উষ্ণতা বাড়াতে সক্ষম কিন্তু বায়ুতে সেরকম সক্রিয় নয় । এরূপ গবেষণা দ্বারা এ ধরণের গ্যাস আমাদের জলবায়ু পরিবর্তনে কিরূপ প্রভাব ফেলবে তা সম্পর্কে সতর্ক করে তোলে ।
গবেষণাপত্রের সহলেখক হং বলেন , বায়ুতে পিএফটিবিএ গ্যাসের ঘনমাত্রা জলবায়ু পরিবর্তনে খুব বেশি ভূমিকা রাখেনা । এখনও জ্বালানী তেল থেকে নির্গত CO2 জলবায়ু পরিবর্তনের জন্য প্রধানত দায়ী ।
কিন্তু পিএফটিবিএ হচ্ছে দীর্ঘস্থায়ী । টরেন্টো গবেষকরা হিসাব করে বের করেন , বায়ুতে পিএফটিবিএ গ্যাসের স্থায়ীত্ব ৫০০ বছর পর্যন্ত হয় । সাগর এবং বনের গাছপালা দ্বারা যতটুকু কার্বন ডাই অক্সাইড শোষিত হবার পর বাকি টুকু নিঃশেষ করে দেবার মত কোন মাধ্যম থাকে না । পিএফটিবিএ গ্যাস অতিস্বল্প পরিমানেই পৃথিবীর উষ্ণতার সাথে ক্রিয়া করে । পৃথকভাবে প্রতিটি অণুই জলবায়ুতে প্রভাব ফেলতে সক্ষম যেহেতু এদের আয়ুষ্কাল অনেক বেশী এবং এই কারণে দীর্ঘস্থায়ী প্রভাব রাখতে পারে । হং এর মতে , পিএফটিবিএ গ্যাসের আবিষ্কার শিল্প কারখানায় অন্যান্য যেসব রাসায়নিক পদার্থের ব্যবহার হয়ে থাকে তাদেরকে প্রশ্নের মুখে ফেলে । বিংশ শতাব্দীর মাঝামাঝি থেকে বিদ্যুৎ শিল্পে পিএফটিবিএ গ্যাস ব্যাপক হারে ব্যবহার হচ্ছে। গবেষকরা এর ব্যবহার সম্পর্কে অবগত ছিলেন না। কিন্তু বর্তমানে এটির রাসায়নিক ব্যবহার এবং প্রভাব সম্পর্কে জানা যাচ্ছে। কিন্তু এই গ্যাস ব্যবহার সম্পর্কে আমাদের আরও সচেতন এবং নীতিমালা গঠন করা উচিত বলে গবেষক হং মনে করেন।
সূত্রঃ দা গার্ডিয়ান